মমতার মুখাপেক্ষীই হয়ে রইলেন মনমোহন
দু’পক্ষের মধ্যে যতই টানাপোড়েন থাক, আপাতত তৃণমূল নেত্রীকে ছাড়া গত্যন্তর নেই মনমোহন সিংহ সরকারের।
যে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে শরিক-সমীকরণ নিয়ে সম্প্রতি নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব, তা তাঁদের আশার ধারেকাছেও যায়নি। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাপে রাখতে মুলায়ম সিংহকে কাছে টানার কৌশল আপাতত শিকেয় তুলেই রাখতে হবে কংগ্রেসকে। উল্টে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি থেকে শুরু করে খাদ্য সুরক্ষা বিল পর্যন্ত লাগাতার কেন্দ্রের বিরোধিতা করে আসা মমতার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা ছাড়া এই মুহূর্তে কোনও উপায়ও রইল না মনমোহন সিংহের।
কংগ্রেস নেতৃত্ব অনেক দিন ধরেই হিসেব কষছিলেন, লখনউয়ের তখ্তে বসার জন্য সমাজবাদী পার্টিকে যদি তাঁদের উপর ভরসা করতে হয়, তখন কেন্দ্রেও মুলায়মদের সঙ্গে নিতে সমস্যা হবে না। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্যের প্রশাসনিক নেতৃত্বের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতা থাকবে। আর মুলায়ম-তনয় অখিলেশ যাদবকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এনে সেই নির্ভরতাতেই সিলমোহর লাগাবে কংগ্রেস। তাতে মমতার ‘অপরিহার্যতা’ও অনেকটাই কমবে।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ভোটের ফল সেই হিসেব উল্টে দিয়েছে। মুলায়ম একাই সরকার গড়ছেন। চার প্রধান শক্তির লড়াইয়ে চতুর্থ হয়েছে কংগ্রেস। মুলায়মের কেন্দ্রীয় জোটে আসার সম্ভাবনা আপাতত সম্পূর্ণ ফিকে হয়ে যাওয়ায় বর্তমান শরিকদের প্রতি কংগ্রেসের নির্ভরতা কিছুমাত্র কমছে না। অবশ্য এটাও ঠিক, কংগ্রেস নেতৃত্ব কখনওই তৃণমূলকে পুরোপুরি ‘আলবিদা’ জানাতে চাননি। বরং দলের নেতা ও মন্ত্রীদের মমতার সঙ্গে সংঘাতে না যাওয়ারই নির্দেশ দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কৌশল ছিল, নতুন শরিক সমাজবাদী পার্টিকে দেখিয়ে পুরনো শরিক তৃণমূলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা।
আপাতত সে গুড়ে বালি। সমাজবাদী পার্টি এর মধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, কংগ্রেস চাইলেও তারা এখন ইউপিএ-তে যোগ দেবে না। মুলায়ম-অখিলেশ মনে করছেন, মনমোহন-সরকার দুর্নীতি থেকে শুরু করে নানা সমস্যায় জর্জরিত। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে জনমানসে নেতিবাচক মনোভাব তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সরকারের আর আড়াই বছর বাকি। সপা এমনিতেই প্রথম থেকে ইউপিএ-সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দিচ্ছিল। কিন্তু সরকারে যোগ না দেওয়ায় ইউপিএ-সরকারের ‘সুসময়ের সুফল’ তাঁরা কুড়োতে পারেননি। এখন ‘দুঃসময়ের দায়’ নেওয়ারও কোনও প্রয়োজন দেখছেন না মুলায়ম-অখিলেশ।
মজার কথা হল, তৃণমূল নেত্রীও ঠিক একই ভাবে মনমোহন-সরকারের জনপ্রিয়তার নিম্নমুখী রেখচিত্রের কথা ভেবে তার সব রকম ‘অপ্রিয়’ সিদ্ধান্ত থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। ঠিক সেই কারণেই তিনি আমজনতার স্বার্থের কথা বলে পেট্রোলের দাম বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। একই ভাবে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগেরও বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। তিস্তা চুক্তি আটকে দেওয়ার পাশাপাশি পেনশন বিল ও খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়েও মমতার আপত্তি রয়েছে। সেখানেই শেষ নয়। লোকপাল বিল থেকে শুরু করে জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র বিতর্কে আবার রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। পাশে পেয়েছেন অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও। বাজেট অধিবেশনেও এ নিয়ে ঝড়ের মুখে পড়তে হবে কংগ্রেসকে। তৃণমূল যে সেখানে কংগ্রেসকে ছেড়ে কথা বলবে না, গত কাল স্পিকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে তৃণমূল-প্রতিনিধিদের চড়া সুরেও তার প্রমাণ মিলেছে।
মুশকিল হল, তৃণমূলকে বাদ দিয়ে মনমোহন-সরকারের এগোনোর উপায় নেই। লোকসভায় তৃণমূলের ১৯ জন সাংসদ। রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা বাড়ছে। সংসদে তৃণমূলের সমর্থন কংগ্রেসের কাছে তাই এখনও জরুরি। এ ছাড়া, আগামী জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। যে হেতু রাষ্ট্রপতির নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে সাংসদ এবং সব রাজ্যের বিধায়করা থাকেন, সে জন্য পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের বাড়তি গুরুত্ব তো থাকবেই। তাই উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের পর মমতার দর কষাকষির ক্ষমতা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। উল্টে উত্তরপ্রদেশে একার জোরে ক্ষমতায় আসার পর মুলায়মও ‘রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ’ নিয়ে মমতা ও অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে যোগ দেবেন কি না, সেই আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে কংগ্রেসে।
উত্তরপ্রদেশের ফলাফলে কৌশলগত সুবিধা পাওয়া ছাড়াও মণিপুরের ফলে ‘সন্তুষ্ট তৃণমূল। অরুণাচলে তৃণমূল ইতিমধ্যেই স্বীকৃত রাজনৈতিক দল। অসমেও দলের এক জন বিধায়ক আছেন। এ দিন মণিপুরে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের মর্যাদা লাভ করার পর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।” তাঁর পাল্টা খোঁচা, “পাঁচ রাজ্যের ভোটে সিপিআই এবং সিপিএম যা ফল করেছে, তাতে তাদের জাতীয় দলের স্বীকৃতির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।”
পঞ্জাব ছাড়া বাকি চারটি রাজ্যেই প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। তবে মণিপুর বাদে আর কোথাও আসন জিততে পারেনি। নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য, বিভিন্ন রাজ্যে প্রার্থী দেওয়া জাতীয় দলের মর্যাদা পাওয়ার কৌশলেরই অঙ্গ। এর ফলে সর্বভারতীয় স্তরে প্রচারে আসা যায়। দলের সংগঠন কিছুটা হলেও তৈরি করা যায়। দলের এক শীর্ষ নেতা যেমন বলেন, “উত্তরপ্রদেশে স্পষ্ট মেরুকরণ হয়েছে। সেখানে সম্পূর্ণ নতুন দল স্থান করে নিতে পারেনি। কিন্তু মথুরায় মট কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর লড়াই এবং শতাধিক কেন্দ্রে দলের প্রার্থী দাঁড় করানো রাজনৈতিক দিক থেকে দলকে প্রাসঙ্গিক করেছে।’’ দলের বক্তব্য, মণিপুর বাদে আর কোথাও ভাল ফলের আশা করা হয়নি। সেই কারণে মণিপুর ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজে অন্য কোথাও প্রচারে যাননি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.