রায়বরেলী, অমেঠীতে হার, দায় স্বীকার রাহুলের
ত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সার্বিক দায়িত্ব যে দিন নিজের হাতে নিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী, দেওয়াল লিখন স্পষ্ট ছিল তখন থেকেই। হিন্দিবলয়ের বৃহত্তম এই রাজ্যে কংগ্রেস ভাল করলে সব কৃতিত্ব তাঁর। কিন্তু বিপর্যয় হলে তার দায়ও রাহুলের উপরেই বর্তাবে। মূলত সেই আশঙ্কা থেকেই দলের বর্ষীয়ান নেতারা সতর্ক করেছিলেন গাঁধী পরিবারের এই নবীন প্রজন্মকে। রাহুল শোনেননি।
আর আজ সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে উত্তরপ্রদেশে শুধু চতুর্থই হল না কংগ্রেস, আসন পেল মাত্র ২৭টি। গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় মাত্র পাঁচটি বেশি। এমনকী গাঁধী পরিবারের দুর্গ অমেঠী-রায়বরেলীর মোট ১০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেল মাত্র ২টি। বিপর্যয়ের এই ছবিটা পরিষ্কার হওয়া মাত্র স্বাভাবিক ভাবেই আঙুল উঠল রাহুলের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠল, একলা চলেই কি ফের ভুল করলেন রাহুল? বিহারের অভিজ্ঞতা থেকে কি তাঁর শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল না? এই প্রশ্ন কংগ্রেসের একাংশেরই।
উত্তরপ্রদেশের ফল আশানুরূপ হবে না আন্দাজ মেলার পর থেকেই রাহুলকে আড়াল করতে এগিয়ে এসেছিলেন দলীয় নেতারা। দিগ্বিজয় সিংহ থেকে রীতা বহুগুণা জোশী, সকলেই বলতে শুরু করেছিলেন, রাহুল যে উন্মাদনা তৈরি করেছেন তা ভোটে পরিণত করার দায়িত্ব নিচুতলার নেতা-কর্মীদের। আজ সকাল থেকে যখন একের পর এক খারাপ খবর আসছে, তখন এই সুরেই কথা বলছিলেন কংগ্রেস নেতারা।
রাহুল নিজে কিন্তু দায় এড়ালেন না। বিকেল চারটে নাগাদ দশ জনপথে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন তিনি। পরনে সাদা কুর্তা পাজামা, এক মুখ দাড়ি। বিপর্যয়ের ধাক্কা শরীরের ভাষায় স্পষ্ট। তবু যথাসম্ভব সাহসী মুখ দেখিয়ে তাঁর বক্তব্য, “সামনে থেকে যখন লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছি, তখন দায় আমারই। আসলে কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি ছিল না। দলের ভিত্তিটাই ছিল দুর্বল।” অবশ্য একই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়ে দেন, “উত্তরপ্রদেশের মানুষের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করেছি, তা ভুলছি না। সেখানকার কৃষক ও গরিবদের পাশে আমি থাকব। কংগ্রেসকে উত্তরপ্রদেশে আরও মজবুত করতে আমার কাজ চলবে।” এ ভাবে দায় স্বীকার করে নেওয়ার ‘সৎ সাহস’ রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিক থেকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন অনেকেই। তা ছাড়া, ব্যর্থতা স্বীকার করে বিরোধী আক্রমণ ভোঁতা করে দেওয়াও একটা কৌশল।
কিন্তু রাহুল কি সত্যিই ব্যর্থ?
বিজেপি নেত্রী তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজের কথায়, “ব্যর্থ তো বটেই। যে ভাবে রাহুল গাঁধী ও গোটা গাঁধী পরিবার উত্তরপ্রদেশে সর্বশক্তি ঢেলে দিয়েছিল, তার পর এই ফলাফলেই প্রমাণিত যে, পরিবারের ক্যারিশ্মা আর চলছে না।” আবার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের একাংশের মতে, রাহুলের পরিশ্রমে সততা ছিল। কিন্তু তাঁর নীতি ছিল ভ্রান্ত। বিহারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে উচিত ছিল মুলায়ম সিংহের সঙ্গে জোট করা। বিশেষ করে জোট গড়ার জন্য মুলায়ম নিজেই যখন আগ্রহী ছিলেন এবং সাংগঠনিক ভাবে রাজ্যে কংগ্রেস একেবারেই দুর্বল। তাঁদের দাবি, জোট বাঁধলে এই বিপর্যয় তো হতই না, উল্টে মায়াবতী সরকারের পতনের কৃতিত্ব নিতে পারত কংগ্রেস। সেই সঙ্গে কেন্দ্রেও জোরদার হত ইউপিএ।
তবে এর পাল্টা হিসেবে রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, মুলায়মের সঙ্গে জোট করলে দীর্ঘ মেয়াদে কংগ্রেসের ভাল হত না। এই বিপর্যয়ের পিছনে সাংগঠনিক শক্তির অভাব যেমন একটা কারণ, তেমনই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নেতিবাচক বাতাবরণও ক্ষতি ডেকে এনেছে। এই অবস্থায় উত্তরপ্রদেশে মৃতপ্রায় কংগ্রেসকে রাহুল যে আলোচনায় তুলে আনতে পেরেছেন, সেটাই এ যাত্রায় সাফল্য।
কংগ্রেসের আর একটি মহলের মতে, মায়াবতীর বিরুদ্ধে জন-অসন্তোষ জাগিয়ে তুলতে রাহুলের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু মুশকিল হয়েছে অন্যত্র। গোড়া থেকেই মানুষ ধরে নিচ্ছিল, মুলায়ম-কংগ্রেস জোট সরকার হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দলে আশঙ্কা ছিল, এমনটা যদি মানুষ ধরে নেন তা হলে কংগ্রেসের বৃদ্ধি থমকে যাবে। কারণ, মানুষ তখন এটাই মনে করবে মুলায়ম-কংগ্রেসের জোট সরকারই যখন হবে, তখন আর কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে লাভ কী! মুলায়ম-অখিলেশও বারবার সেই সম্ভাবনার কথা বলেছেন। হতে পারে আজকের ফলাফলের নেপথ্যে সেই বিষয়টিও কাজ করেছে।
কিন্তু এই সব রাজনৈতিক তত্ত্বের বাইরে প্রশ্ন হল, যে দুর্বল সাংগঠনিক ভিত্তিকে রাহুল দায়ী করেছেন, গত তিন বছর উত্তরপ্রদেশের পথে-প্রান্তরে ঘুরেও তা রাহুল মজবুত করতে পারলেন না কেন? বিশেষ করে অমেঠী, রায়বরেলীতে কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতা তো গাঁধী পরিবাররেরই ব্যর্থতা। সেই দায় রাহুল, সনিয়া, প্রিয়ঙ্কা সবার। অমেঠী প্রসঙ্গে আজ দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েন রাহুল। রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে বলেন,“অমেঠীতে কংগ্রেস যে একেবারে ধুয়ে গিয়েছে তা নয়। তা ছাড়া, রাজ্যে কংগ্রেসের অবস্থা কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। আমাদের ভোটের হার গত বারের ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে। তবে আমার কাজ আমি জানি, সেটা চালিয়ে যাব।”
যদিও দিনের শেষে কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার সাবধানবাণী, “রাহুল যদি ফের নিজেই সব দায়িত্ব নিয়ে প্রচার শুরু করে দেন, তা হলে ভুল হবে। রাজ্যে দলের শক্তি বাড়াতে গেলে তাঁর উচিত হবে এক জন বা দু’জন আঞ্চলিক নেতা তৈরি করা। যাঁরা দিল্লির দরজায় কড়া না নেড়ে রাজ্যের মাটি কামড়ে পড়ে থাকবেন। পাল্লা দেবেন মায়া-মুলায়মের সঙ্গে। সেটা না করতে পারলে জোট রাজনীতির পথে হাঁটুন রাহুল।”
সব মিলিয়ে এই ব্যর্থতাকে সামনে রেখে আত্মমন্থনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে কংগ্রেস শিবির। দশ জনপথের বাইরে সংবাদমাধ্যমকে আজ সে কথা বলেছেন রাহুল নিজেও। আর গলির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে এক মনে দাদার কথা শুনেছেন লাল টি শার্ট আর খাঁকি ট্রাউজার পরিহিত প্রিয়ঙ্কা। তার পর একে অপরের কাঁধে হাত দিয়ে ঢুকে গিয়েছেন দশ জনপথে।
বার্তা যেন এটাই যে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন করে লড়াই শুরু করবে গাঁধী পরিবারের নতুন প্রজন্ম।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.