তেলের দাম বাড়ানো নিয়েও সংশয়ে কেন্দ্র |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন মিটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লিটার প্রতি অন্তত পাঁচ টাকা করে পেট্রোলের দাম বাড়ানোর দাবি তুলল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেস বিপর্যস্ত হওয়ার পরে (একমাত্র মণিপুরে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে তারা) মনমোহন সরকার কি সেই সাহস দেখাতে পারবে, এই নিয়ে এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে পেট্রোলের দাম বাড়াতে গেলে বিরোধীরা তো বটেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শরিকরাও ছেড়ে কথা বলবেন না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তাই প্রণব মুখোপাধ্যায়, জয়পাল রেড্ডি-সহ ইউপিএ-র শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসতে চলেছেন।
শুধু পেট্রোল ও অন্যান্য পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানো নয়, রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানতে আর্থিক বাজেটেও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করতে চাইছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির পরে মনমোহন-সরকারের দিকে ‘নীতি পঙ্গুত্ব’-র অভিযোগ উঠেছিল। শিল্পমহল চাইছিল, বাজেটকে শুধুই আয়ব্যয়ের খতিয়ান না করে, একে বিনিয়োগকারীদের প্রতি বার্তা হিসেবে ব্যবহার করা হোক। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভাল ফল করতে পারলে মনমোহন-সরকারের হাত শক্ত হত। শুধু বাজেট নয়, সংসদের আসন্ন অধিবেশনে পেনশন বিল, জমি অধিগ্রহণ বিল পাশ করানো বা খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ইউপিএ-র রাজনৈতিক ভাবে সুবিধা হত।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশ ও অন্যান্য রাজ্যের ফলাফলে সে দিক থেকে কোনও ফায়দাই তুলতে পারেনি কংগ্রেস। ইউপিএ-র রাজনৈতিক সমীকরণ ও শরিকদের উপর নির্ভরতাও অপরিবর্তিত থাকছে। এই পরিস্থিতিতে এর পরে ‘পণ্য পরিষেবা কর’ চালু করতেও সমস্যা হবে কেন্দ্রের। কারণ, এনডিএ-শাসিত রাজ্যগুলি এমনিতেই বেসুরো গাইতে শুরু করেছে। প্রণববাবু যেখানে পণ্য পরিষেবা কর চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছেন, সেখানে ওই রাজ্যগুলি ফের বিক্রয় কর বাড়াতে চাইছে। তাদের বক্তব্য, বিক্রয় কর কমানোর ফলে রাজ্যগুলির যে আয় কমছে, তার জন্য দাবিমতো ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছে না অর্থ মন্ত্রক।
প্রণববাবুর সামনে এখন তাই ত্রিমুখী সমস্যা। এক, তিনি চাইলেও পেট্রোল বাদে অন্যান্য পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকির বহর কমাতে পারছেন না। দুই, কর ব্যবস্থায় সংস্কার করে রাজস্ব বাড়ানোর পথ সুনিশ্চিত করতে গিয়েও তাঁকে হোঁচট খেতে হচ্ছে। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কথা মাথায় রেখে সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ কমানোও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, সনিয়া গাঁধী নিজে খাদ্য সুরক্ষা বিল, একশো দিনের কাজের মতো গরিবদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে কথা মাথায় রেখে তাঁকে মোট বাজেট বহর আগের বছরের মতোই বাড়াতে হচ্ছে।
কংগ্রেস-সহ রাজনৈতিক শিবিরের একটা বড় অংশের অবশ্য যুক্তি, সমাজবাদী পার্টি ইউপিএ-তে যোগ দিচ্ছে, নাকি তৃণমূলের উপরেই কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকছে, তার সঙ্গে আর্থিক সংস্কারের কোনও সম্পর্ক নেই।
গত আড়াই বছরে চাইলে অনেক ক্ষেত্রেই মনমোহন-সরকার সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করতে পারত। এখনও প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই অনেকটা কাজ সেরে ফেলা যায়। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার ফলে তা হয়নি। কিন্তু সেই সাহস দেখাতে পারেনি কেন্দ্র।
রাষ্টায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি চাইছে, অন্তত পেট্রোলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সাহসী হোক সরকার। দাম বাড়াতে তাদের সবুজ সঙ্কেত দিক। কিন্তু ভোটের ধাক্কা সামলে সরকার সেটা করতে পারবে কি? সেটাই এখন দেখার। |