‘ষড়যন্ত্রে’ হেরেও ফৌজি মেজাজে লড়ছেন খান্ডুরি |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
তিনি মেজর জেনারেল। ভুবনচন্দ্র খান্ডুরি।
অবসরপ্রাপ্ত। কিন্তু সেনার অনুশাসন ভোলেননি। এখনও দল দাঁড়াতে বললে
দাঁড়ান। বসতে বললে বসেন। শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধই হোক বা রাজনীতির লড়াই। কোনও ক্ষেত্রেই পিছ-পা হন না। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও নিজে ভোটে হেরে গিয়েছেন। দলে ‘ষড়যন্ত্রের জেরে’! কার ষড়যন্ত্র? যে সে নন, সতীর্থ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমেশচন্দ্র পোখরিয়ালের। তবু নিজেকে বলি দিয়েও গোটা রেজিমেন্টকে বাঁচানোর শেষ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তরাখণ্ডে সরকার গড়ার লড়াইয়ে কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এক আসনে এগিয়ে থেকে কংগ্রেসই সরকার গড়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে। নির্দল ও বহুজন সমাজ পার্টির ৩টি আসন নিয়েই কোনও এক দলকে সরকার গড়তে হবে। কিন্তু লড়াইয়ে হারতে শেখেননি খান্ডুরি। সরকার গড়ার জন্য তাই শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এখনও।
বলছেন, “ত্রিশ বছর ধরে আমি সেনা হিসাবে দেশের সেবা করেছি। এখনও দলের নির্দেশ ছাড়া এক পা-ও এগোই না। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগের ঠিক ৩ মাস ১৪ দিন আগে আমি ফের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছি। আমি নিজে জিততে পারিনি ঠিকই, কিন্তু গোটা রাজ্যই আমার নির্বাচন ক্ষেত্র। সকলের জন্য সময় দিতে গিয়ে হতে পারে নিজের কেন্দ্রে বেশি মনোযোগ দিতে পারিনি। কিন্তু দল যে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, সেটি পূরণ করার চেষ্টা করছি। এ বারে নতুন সরকারের জন্য দল যা নির্দেশ দেবে, তা পালন করব।”
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রমেশচন্দ্র পোখরিয়াল (নিশাঙ্ক) জনপ্রিয়তা খোয়াচ্ছেন দেখেই ভোটের মাত্র মাস কয়েক আগে তাঁকে সরিয়ে দেয় দল। আনা হয় খান্ডুরিকে। ক্ষুব্ধ নিশাঙ্ক নিজে ভোটে জিতে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে খান্ডুরিকে হারানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগও উঠেছে। নিতিন গডকড়ীরা সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। কিন্তু ভোটের ফল আসা পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছিলেন না তাঁরা। খান্ডুরি ও বিজেপি নেতৃত্ব যা আশঙ্কা করছিলেন, আজ তাই হল। নিজের কেন্দ্রে হেরে গেলেন খান্ডুরি।
তবে নিশাঙ্ক মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় বিজেপির সমীক্ষায় মাত্র ৮-১০টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনাই উঠে এসছেলি। আজ খান্ডুরির দৌলতেই সেটা ত্রিশের কোঠা পেরিয়ে গিয়েছে। সরকার গড়ার জন্য ৩৬টি আসন দরকার। এখন খান্ডুরি সরকার গড়ার জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে টক্কর নেওয়ার অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছেন।
কিন্তু ষড়যন্ত্রের বাপারে জিজ্ঞাসা করলেই খান্ডুরি বলছেন, “ওই যে বললাম, আমি অনুশাসনে আবদ্ধ। এ ব্যাপারে যা বলার দলের কাছেই বলব। হতে পারে, মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে আমি যে রকম কঠোর পদক্ষেপ করি, তা অনেকের পছন্দ নয়। দুর্নীতি রুখতে ও রাজ্যের উন্নয়নের জন্যই দল আমাকে পদ দিয়েছে। আমি সেই দায়িত্ব পালন করে যাব।”
কিন্তু দলের অনেকেই মনে করছেন, নিশাঙ্ককে সরিয়ে খান্ডুরিকে আরও আগে আনলে দল অনায়াসে জিততে পারত। উত্তরপ্রদেশের গ্লানি মিটত উত্তরাখণ্ডের হাত ধরে। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসকেও আরও চাপে রাখা যেত। এক সময় দলের মধ্যে কোন্দলের জন্যই খান্ডুরিকে সরিয়ে নিশাঙ্ককে আনা হয়েছিল। কিন্তু নিশাঙ্কের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ায় ফের আনা হয় ‘জেনারেল’-কে। ভোটে স্লোগানও তোলা হয়, ‘খান্ডুরি হ্যায় জরুরি।’
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “নিশাঙ্কের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি নেতারা বসে ঠিক করবেন। আপাতত উত্তরাখণ্ডে সরকার গড়ার জন্য হাল ছাড়ছি না আমরা। মাস খানেক আগে মুষড়ে পড়া দলে অক্সিজেন জোগানোর কাজটি তো করেছেন খান্ডুরিই। ফলে সরকার গড়তে পারি বা না-পারি, খান্ডুরি এখনও আমাদের কাছে জরুরি।” |