মাত্রাছাড়া মিসোপ্রোস্টলের বলি শিশুরাও
‘উপকারী’ ওষুধের যথেচ্ছ প্রয়োগে বিপন্ন প্রসূতি
শিশু ও প্রসূতির মৃত্যুর কারণ খুঁজতে এত দিন শুধু হাসপাতালের চিকিৎসা-পরিকাঠামো যাচাই করা হচ্ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশেষ একটি ওষুধের নির্বিচার প্রয়োগও। এ ব্যাপারে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ‘সতর্ক’ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
কী সেই ওষুধ?
এর নাম ‘মিসোপ্রোস্টল।’ স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর, ন্যূনতম নজরদারির ব্যবস্থা না-রেখে বিনা বাছবিচারে এটি প্রয়োগের ফলেও সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে বহু প্রসূতি মারা যাচ্ছেন। জরায়ুর গণ্ডগোলে। আবার ‘মিসোপ্রোস্টল’ প্রয়োগের কারণেই জন্মের সময়ে হাঁফিয়ে উঠে (অ্যাসপেক্সিয়া) প্রাণ হারাচ্ছে বহু সদ্যোজাত। দফতরের বিশেষজ্ঞেরা সরেজমিনে ঘুরে এর প্রমাণ পেয়েছেন বলে সূত্রটির দাবি। আর তাই এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সুপারদের বলা হয়েছে বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে সমস্ত ডাক্তারকে অবিলম্বে অবহিত করতে। মিসোপ্রোস্টলের বৈশিষ্ট কী?
বিশেষজ্ঞেরা জানান, এটি প্রথম চালু হয়েছিল গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসায়। পরে দেখা যায়, এতে জরায়ুর সঙ্কোচন মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তখনই প্রথম পর্যায়ে গর্ভপাতের ওষুধ হিসেবে তার ব্যবহার শুরু হয়। প্রসবের সময় এগিয়ে এলেও যাঁদের প্রসব বেদনা ওঠে না, তাঁদের ব্যথা ওঠাতে ও প্রসব ত্বরান্বিত করার অস্ত্র হিসেবেও শুরু হয় মিসোপ্রোস্টলের ব্যবহার। সঙ্গে দেখা দেয় বিপদও। এক স্বাস্থ্য-কর্তার ব্যাখ্যা, “ওষুধটি প্রয়োগের আগে অনেক ভাবনা-চিন্তা প্রয়োজন। মাত্রা সম্পর্কে বিশেষ সতর্কতা জরুরি। সবচেয়ে বড় কথা, ওষুধ দেওয়ার পরে প্রসূতির শারীরিক অবস্থার উপরে সব সময়ে নজর রাখতে হবে। এক চুল এ ধার-ও ধার হলেই মুশকিল।”
কিন্তু স্বাস্থ্য-কর্তাদের অভিযোগ: খুব কম ডাক্তারই এ সব খেয়াল রাখেন। প্রসূতিকে মিসোপ্রোস্টল দিয়েই তাঁদের দায়িত্ব খালাস! এমনকী, কিছু ক্ষেত্রে বিনা প্রয়োজনেও তা ‘প্রেসক্রাইব’ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তো বটেই, কিছু জুনিয়র ডাক্তারও মর্জিমাফিক ‘মাত্রাজ্ঞান’ ছাড়া ওষুধটি প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ। আর তাতেই ঘটছে বিপদ। কী রকম?
প্রবীণ স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেন, “মিসোপ্রোস্টলের ডোজটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রসব বেদনা তুলতে হলে কোনও অবস্থাতেই ২৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি দেওয়া উচিত নয়। অথচ অনেকেই ভাবনাচিন্তা না-করে দ্রুত প্রসব ঘটাতে ৫০ মাইক্রোগ্রাম বা তারও বেশি দিয়ে ফেলছেন। তাতে জরায়ু ফেটে অনেক প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে। জন্মের পরেই প্রাণ হারাচ্ছে বহু শিশু। জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে ইদানীং প্রবণতাটা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।” সঞ্জীববাবু জানান, বহু হাসপাতালে মিসোপ্রোস্টল প্রয়োগের রেকর্ড থাকে না। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হচ্ছে। “এক জন ডাক্তার এসে প্রসূতিকে মিসোপ্রোস্টল দিয়ে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে আর এক জন এসে হয়তো আবার দিলেন। এতে রোগিণীর ক্ষতি অনিবার্য।” আক্ষেপ সঞ্জীববাবুর।
এত আশঙ্কা সত্ত্বে এটি দেওয়া হয় কেন?
কারণ, মিসোপ্রোস্টলের সুফল প্রচুর। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গর্ভপাত ঘটানো বা প্রসব বেদনা তোলা ছাড়াও প্রসবের পরে অতিরিক্ত রক্তপাত ঠেকাতে এটি সাহায্য করে। তবে সব ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সতর্কতা আবশ্যিক। এসএসকেএমের স্ত্রী-রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তরুণ ঘোষের কথায়, “সুফল মিলবে কি না, তার পুরোটাই নির্ভর করছে সঠিক ডোজ এবং রোগিণীর উপরে টানা নজরদারির উপরে। ডাক্তারদের জানা উচিত, কোথায় থামতে হবে। বহু ক্ষেত্রে হাতুড়েরা গর্ভপাতের জন্য যথেচ্ছ মিসোপ্রোস্টল দেন। ডোজে ভুল হওয়ায় অনেকে মারাও যান।”
কিন্তু এত বছর ধরে মিসোপ্রোস্টল প্রয়োগকে যাঁরা প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন, তাঁদের শেখানো যাবে কী ভাবে?
স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর জবাব, “চেষ্টাটা বহু আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল। আমরা নজরদারি শুরু করছি। কোন হাসপাতালে মিসোপ্রোস্টলের ব্যবহার বেশি এবং সেখানে মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কত, তার হিসেব নেওয়া হবে। যিনি ওষুধটি দেবেন, মা ও শিশুর দিকে খেয়াল তাঁকেই রাখতে হবে। ওষুধ দিয়েই ডাক্তারের দায়িত্ব ফুরিয়ে যাবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.