প্রায় দেড় শতাধিক মঠ-মন্দির। লক্ষাধিক বহিরাগত মানুষ। তাদের মধ্যে কয়েক হাজার বিদেশি। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা ৯টি দ্বীপ পরিক্রমার জন্য অসংখ্য শোভাযাত্রা। মঠে-মন্দিরে আলোকসজ্জা। সব মিলিয়ে ভোল পাল্টে দিয়েছে নবদ্বীপের।
বৃহস্পতিবার দোল পূর্ণিমা। কিন্তু নবদ্বীপে দোলের অন্য একটা তাৎপর্য রয়েছে। তা হলো চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মতিথি। প্রধানত চৈতন্যদেবের স্মৃতি-বিজড়িত নবদ্বীপ এবং সংলগ্ন নদিয়া-বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে নবদ্বীপ মহামণ্ডল। দেশ-বিদেশ থেকে বৈষ্ণব ভক্তরা সেই মহামণ্ডলে দোল উপলক্ষে পরিক্রমা করতে পক্ষ কাল ধরে নবদ্বীপে বসবাস করেন। তাই নবদ্বীপের দোল দীর্ঘ উৎসবে পরিণত হয়েছে। |
সেই দোল উপলক্ষে সেজে উঠেছে শহর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিদেশি এবার নবদ্বীপের কেশবজী গৌরীয় মঠ, চৈতন্য সারস্বত মঠ-সহ বিভিন্ন মঠে এসেছেন। সঙ্গে রয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কম-বেশি লক্ষাধিক পুণ্যার্থী। উৎসবের ধার-ভারে রাস না দোল, কোনটা নবদ্বীপর প্রধান উৎসবতা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
দোলকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পুরসভা-পুলিশ-দমকল-পরিবহণ-স্বাস্থ্য সব দফতর উঠেপড়ে লেগেছে। এ বারেও দোলে নবদ্বীপের বিভিন্ন এলাকাকে নতুন ধরণের বাতিস্তম্ভে সাজানো হয়েছে। পুরসভা আলো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলর শচীন্দ্র বসাক বলেন, “প্রাচীন মায়াপুরে চৌতন্য জন্মস্থান আশ্রমে যাওয়ার রাস্তাটিতে ২৫ মিটার অন্তর ৫৭টি বাতিস্তম্ভ বসানো হয়েছে। প্রতিটিতে তিনটি করে গ্লোব এবং ভেতরে সিএফএল ল্যাম্প রয়েছে। এতে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। পাশাপাশি শহরের প্রধান রাস্তা পোড়ামাতলা রোডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অত্যাধুনিক এলইডি ল্যাম্প লাগানোর কাজ চলছে। এক-একটির দাম ৩৫ হাজার টাকা। সাধারণ সোডিয়াম ভেপারের আলোর থেকে এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় অনেক বেশি। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নবদ্বীপকে সাজানোর অঙ্গ হিসেবেই এই কাজ চলছে।”
অন্য দিকে দোল উপলক্ষে শহরের মঠ-মন্দিরে যাত্রীদের থাকার বন্দোবস্ত করতে যে সব অস্থায়ী মণ্ডপ হয়তার দিকে কড়া নজর রাখছে দমকল কর্তৃপক্ষ। দমকল দফতরের নবদ্বীপ শাখার ওসি শক্তিপদ দে বলেন, “শহরের দক্ষিণ দিকের মঠগুলিতে দোলের চাপ খুব বেশি। বড় বড় মণ্ডপ হয়। আমরা অগ্নিনির্বাপন বিধি কঠোর ভাবে প্রয়োগ করছি। কেননা, নবদ্বীপে যত সংখ্যক বিদেশি আসেন, এই সময়ে তাদের নিরাপত্তা বিশেষ ভাবে নজরে রাখতে হয়। সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ আছেন। সবার সামনে দোলকে সুষ্ঠু ভাবে উপস্থাপন করা আমাদের কর্তব্য।” |
এবারে দোলের পরিক্রমায় অংশ নিতে এসে বিভিন্ন ঘটনায় মোট তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন। রবিবার বিকেলে নবদ্বীপ সেতুর কাছে ম্যাটাডোরের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে সুবাসি মণ্ডল (৬০), তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগণার গোসাবা থেকে এসেছিলেন। পরিক্রমায় অংশ নিয়েছিলেন তাঁর স্বামী সবল মণ্ডলও। দুর্ঘটনার পরে ম্যাটাডোর চালক নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। শনিবার পরিক্রমার মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বর্ধমানের পারুলিয়ার শোভারানি সাহা (৭৬) এবং নামখানার প্রতিভা দাসের। দুজনেই উচ্চ-রক্তচাপের রোগী ছিলেন।
|
সোমবার ছবি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য। |