|
|
|
|
স্বশাসনে অনড় ঝাড়খণ্ডী দল |
ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনে সর্বদল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম |
মেদিনীপুর আগেই ভেঙেছে। ১০ বছর আগে তৈরি হয়েছে দু’টি জেলা--পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর। ফের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভেঙে নতুন আর একটি জেলা--ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে সোমবার জেলাস্তরে প্রথম সর্বদল বৈঠক হল মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে। প্রশাসনের তরফে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত, ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার গৌরব শর্মা। তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস, সিপিআই, বিজেপি-র প্রতিনিধিরাও বৈঠকে যোগ দেন। কী কারণে রাজ্য সরকার পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনের পরিকল্পনা করেছে, বৈঠকের শুরুতেই সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন জেলাশাসক। তাঁর বক্তব্য, “জেলা ভাগ হলে জঙ্গলমহল এলাকার মানুষ সব দিক থেকেই উপকৃত হবেন। প্রশাসনিক কাজেও সুবিধা হবে।” বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক দলগুলি ১৫ দিনের মধ্যে তাদের মতামত লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসনকে জানাবে। জেলা প্রশাসন সেই মতামত রাজ্য সরকারের উপরমহলে পৌঁছে দেবে। তার পর প্রয়োজনে ফের জেলাস্তরে সর্বদল বৈঠক হবে। |
|
মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে সর্বদল বৈঠক। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
সোমবারের বৈঠকে ডাক না পেয়ে জঙ্গলমহল এলাকার আঞ্চলিক দলগুলি অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর--এই ৩ জেলার বিস্তীণর্র্ এলাকা নিয়ে স্বশাসিত পরিষদ গঠনের জন্য ঝাড়খণ্ডী দলগুলি দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানাচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর ভাগের ভাবনাটি ফের গতি পাওয়ায় স্বশাসিত পরিষদের দাবিও ফের উঠেছে। সোমবারের সর্বদলীয় বৈঠকে ডাক না পেয়ে ফ্যাক্স মারফৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছেন ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) নেত্রী তথা প্রাক্তন বিধায়ক চুনিবালা হাঁসদা। প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে জেলাশাসকের কাছেও। চুনিবালাদেবীর বক্তব্য, “জঙ্গলমহলের আঞ্চলিক দলগুলিকে উপেক্ষা করে রাজ্য সরকার কী বার্তা দিতে চাইছে? এই এলাকা নিয়েই বৈঠক। অথচ সর্বদল বৈঠকে আঞ্চলিক দলগুলিরই প্রতিনিধি নেই!” তাঁর কথায়, “জঙ্গলমহল এলাকার অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত আমাদের পার্টির দখলে। আমাদের নেতা-কর্মীরাই স্থানীয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বোঝেন। অথচ বৈঠকে আঞ্চলিক দলগুলিকে উপেক্ষা করা হল।” পাহাড়ের প্রস্তাবিত ‘জিটিএ’-এর ধাঁচে ৩ জেলাকে নিয়ে স্বশাসিত পরিষদ গঠনের দাবি জানিয়েছেন চুনিবালা।
ঝাড়গ্রাম অনুশীলন পার্টির নেতা অসিত খাটুয়ার বক্তব্য, “বৈঠকে আঞ্চলিক দলগুলিকে ডাকা উচিত ছিল। তিন জেলাকে নিয়ে স্বশাসিত পরিষদ গঠন করার দাবি দীর্ঘদিনের। অথচ, সরকার সেই দাবি নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না।” ঝাড়খণ্ড আন্দোলন সমন্বয় মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক তথা পিসিসি-সিপিআইএমএল দলের নেতা সন্তোষ রানা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিন জেলার ২২টি ব্লক নিয়ে স্বশাসিত পরিষদ গড়ার দাবি জানিয়েছিলাম। এখনও তার জবাব পাইনি। জেলা ভাগ করার আগে স্থানীয় মানুষের সমস্যা বুঝতে হবে।” ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক স্বপন মাহাতোর বক্তব্য, “ঝাড়খণ্ডী দলগুলির অস্তিত্বকে অস্বীকার করে রাজ্য সরকার গা-জোয়ারি করে ঝাড়গ্রামকে পৃথক জেলা করতে চলেছে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করব।” জঙ্গলমহলের তিন জেলার ২২টি ব্লককে নিয়ে স্বশাসিত পরিষদ গঠনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে ডাক না পেয়ে জেলাশাসকের কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে এসইউসিও। দলের জেলা সম্পাদক অমল মাইতির বক্তব্য, “বিভাজনের কথা না ভেবে জেলার সার্বিক উন্নয়নে জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি।”
অন্য দিকে, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দুবে, সহ-সভাপতি শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হরেকৃষ্ণ সামন্ত, ডহরেশ্বর সেন, সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রানা। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বৈঠক শুরু হয়। ঘণ্টাখানেক আলোচনা হয়। শুরুতে রাজ্য সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিনিধিদের হাতে ১৮ পাতার একটি ‘নোট’ তুলে দেওয়া হয়। সেখানে কোন কোন এলাকা ঝাড়গ্রাম জেলায় রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, সেখানকার জনসংখ্যা কতসেসবের উল্লেখ রয়েছে। রাজ্য সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনা হল, ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্যে দু’টি মহকুমা থাকবে। ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর। এখন যে ৮টি ব্লক ও একটি পুরসভা ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে রয়েছে, সেগুলিই নতুন জেলার মধ্যে থাকবে। তবে বিনপুর-১ ও বিনপুর-২ ব্লক ভেঙে নতুন লালগড় ব্লক গঠন হবে। ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে থাকবে মোট ৫টি ব্লক। ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, বেলপাহাড়ি, লালগড় ও জামবনি। সঙ্গে ঝাড়গ্রাম পুর-এলাকা। অন্য দিকে, গোপীবল্লভপুর মহকুমার মধ্যে থাকবে ৪টি ব্লক। গোপীবল্লভপুর-১, গোপীবল্লভপুর-২, সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম। প্রস্তাবিত নতুন জেলার এলাকায় সর্বশেষ আদমসুমারি-র (২০১১) হিসাবে জনসংখ্যা হবে ১১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭১০।
সরকারের পরিকল্পনা দেখে জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবে বলেন, “রাজ্য সরকার যদি সব পরিকল্পনাই করে নেয়, তা হলে আমাদের আর কী বলার থাকতে পারে! যদি পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হয়ে থাকে, তবেই আমরা মতামত দেব।” জেলাশাসক জানান, মতামত/প্রস্তাব চাওয়ার জন্যই সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হরেকৃষ্ণবাবু বলেন, “আমরা আগে দলে আলোচনা করব। তার পর জেলা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে আমাদের মতামত জানাব।” |
|
|
|
|
|