আজ শুরু ইস্টবেঙ্গলের এএফসি অভিযান
সন্ত্রাসের দেশের ফুটবল বনাম মর্গ্যানের নতুন ছক
ল্টলেক স্টেডিয়ামে তখন ইয়েমেনের আল ওরুবা ফুটবলাররা প্র্যাক্টিস করছেন। খবরটা সে সময়ই পাঠাল সংবাদসংস্থা। ইয়েমেনে সেনা ঘাঁটিতে আল-কায়দা হানায় ১০৬ জন মারা গিয়েছেন। উগ্রপন্থীরা ৫৫ জন সেনাকে ধরে নিয়ে গিয়েছে।
ইয়েমেন এখন খবর শুধু মৃত্যু মিছিলের জন্য। ইয়েমেন মানে তো অনেকের কাছে আল-কায়দার আঁতুড়ঘর।
মঙ্গলবারের কলকাতায় সেই ইয়েমেনিরাই ফুটবল নিয়ে হাজির।
সামান্য আগে সন্ত্রাস নিয়ে আল ওরুবা কোচ মহম্মদ সালে-কে প্রশ্ন করেছিলেন এক সাংবাদিক। তাঁকে থামিয়ে দিলেন প্রতিপক্ষ কোচের পাশে বসা ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যান। “ওদের শুধু ফুটবল নিয়ে প্রশ্ন করাই ভাল।”
চিন্তিত এশীয় ফুটবল সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, ইয়েমেনের সন্ত্রাসের জন্য ওখানে কোনও হোম ম্যাচ নয়। আল ওরুবা ফুটবলাররা জানেন না, কোথায় পরের ম্যাচ। তবু প্র্যাক্টিস দেখে মনে হল না, সন্ত্রাসে ত্রস্ত। কোচ ও অধিনায়ককে নিয়ে দোভাষীও বললেন, “সন্ত্রাসের জন্য আমাদের ফুটবল বন্ধ হয়নি। দেশের সব প্রান্তে লিগ চলছে। ঝামেলা অন্য দিকে।”
সরকারি যুব ও ক্রীড়া দফতরের উদ্যোগে, দুটো পুরনো ক্লাব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে আল ওরুবা। মহিলা শিল্পপতি হুদ্দা আল শরিফ চেয়ারম্যান। পশ্চিম এশিয়ায় বিরল ঘটনা। কলকাতায় খেলতে আসার আগে এএফসি কাপের জন্য সুন্দর একটা লিফলেট তৈরি করেছে সাড়ে তিন বছরের নতুন ক্লাব। বিদেশিদের কাছে বিলোতে। যা এখনও ভারতের কোনও ক্লাব ভাবতে পারেনি।
প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক চাপ নিয়ে খেলতে হাজির। ট্রেভর মর্গ্যানের উপর কীসের চাপ? সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ অস্থির। টোলগেকে টিম নিয়ে কোনও প্রশ্ন করলেই মর্গ্যান বিরক্ত। “ওকে কেন ওটা নিয়ে প্রশ্ন করছেন? বলব তো আমি!”
দুই অধিনায়ক। টোলগের সঙ্গে মুয়াদা আবদুল খালেক।
সোমবার যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
সকালের প্র্যাক্টিসে মাঠের বাইরে পায়ে বরফ নিয়ে বসে মেহতাব। মঙ্গলবার তো বটেই, শিল্ডে খেলাও সম্ভবত হবে না। পুরনো চোটে আবার লেগেছে। সাত সকালে যুবভারতীতে তুমুল ভিড়, প্রতিবন্ধীদের একটি মিট চলছে। ভাল করে প্র্যাক্টিসই হল না। সিরিয়ান ম্যাচ কমিশনার এসে পর্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন। মর্গ্যানের মেজাজ খারাপের কারণ আছে।
এমনিতে দেখে মনে হল, মেহতাবের অভাব ঢাকতে মঙ্গলবার মর্গ্যান অন্য আদল আনার চেষ্টা করছেন ৪-৫-১ ছকে। সামনে এডমিলসনকে রেখে দুই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার টোলগে ও রবিন সিংহ। রবিনের পজিশনই সব চেয়ে বিস্ময়কর। টলি-রলি পালা করে করে উঠে ৪-৫-১ ছকটা ৪-৪-২ করার চেষ্টায় থাকছেন। বাকি তিন মিডফিল্ডার পেন, সুশান্ত, সঞ্জু ।
সন্ত্রাসের জন্য ও দেশে বিদেশি ফুটবলার কমেনি। আল ওরুবির তিন পজিশনে তিন বিদেশি। দুই নাইজিরিয়ান এবং এক মিশরীয়। এঁদের নিষ্ক্রিয় করাই প্রধান কাজ হবে মর্গ্যানের কিপার গুরপ্রীত, ডিফেন্ডার ওপারা, গুরবিন্দর, সৌমিক, হরমনজিতের। মর্গ্যান ভুলতে পারছেন না, জাতীয় দলে নির্মল-রাজু-ভাসুমের আটকে থাকা। “আমরাও তো ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছি। কাঠমান্ডু এত কাছে। এআইএফএফ তিন জনকে খেলিয়ে পাঠাতে পারত না? এটাও তো দেশের সম্মান।”
দেশের সম্মান লিখতে গিয়ে মনে পড়ল। এএফসি কাপ চালু হওয়ার পরে ছয় বছর ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছে ইস্টবেঙ্গল। সবচেয়ে বেশি বার। আট বছর আগে একবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। পরে গ্রুপ টপকাতে পারেনি একবারও। এ বার গ্রুপে ইরাকের আলবিল, কুয়েতের কাজমা থাকায় ছবিটা অন্য কিছু হবে ভাবা যাচ্ছে না। গ্রুপে আল ওরুবা-ই পয়েন্ট তোলার সেরা দল। টোলগে বললেন, “হোম ম্যাচই পয়েন্ট তোলার সেরা রাস্তা।”
বিদেশি দলের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের রঙিন ইতিহাসের কথা তুললে সত্তরের পাস ক্লাব আসে। আসে পিয়ং ইয়ং, পোর্ট অথরিটি, আল জাওরা, বেক তেরো সাসানার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয়। গত দু’বছরে কোনও জয় নেই। আপনার জমানায় কোন ম্যাচটা সেরা? প্র্যাক্টিসের পরে প্রশ্ন করলে মর্গ্যান নিজে তুললেন, গত বারের সাউথ চায়নার বিরুদ্ধে ম্যাচের কথা। দীর্ঘদিনের ম্যানেজার স্বপন বলের মুখে শোনা গেল, গত বার তাইল্যান্ডের চোনবুরির কাছে ২-৪ পিছিয়ে ৪-৪ করার ম্যাচের কথা। মর্গ্যান, টোলগেরা গতবার একটাও হোম ম্যাচ জিততে পারেননি। সব ড্র। তার আগের বার ডি’রাইডারের ইস্টবেঙ্গল সব হেরেছিল। বরং অলোক মুখোপাধ্যায়ের কোচিংয়ে ২০০৮ সালে ইয়েমেনেরই আল আহলিকে হারিয়েছিল যুবভারতীতে।
সন্ত্রাসের দেশের ওরুবার বিরুদ্ধে সে-সব ছবি পাল্টানোর সুযোগ। আল আহলির সেই গোলকিপার মুয়াদা আবদুল খালেক এ বার আল ওরুবার অধিনায়ক। দিল্লিতে ইয়েমেনের যে দলের কাছে ০-৩ হেরে ভারতীয় কোচ নইমের চাকরি গিয়েছিল, সেই দলেও ছিলেন। এ দিনই বলছিলেন, “ভারত আগের চেয়ে উন্নতি করেছে। ওরা কঠিন লড়াই দেবে।” প্রথম পনেরো মিনিট ‘ওপেন’ প্র্যাক্টিসের পরে ইয়েমেনের টিমটা ছাড়পত্র দেয়নি প্র্যাক্টিস দেখার। কেউ শুনলে তো! সকালের মিটের রেশ তখনও আছে, গ্যালারিতে প্রচুর ভিড়। ইয়েমেনের ফুটবলাররা নির্লিপ্ত।
মর্গ্যানকেই বেশ ছটফটে লাগছে। আগের বার না-জেতার স্মৃতি? না, চার বিদেশিকে নিয়ে এ বারের নতুন পরিকল্পনা? কী জন্য কে জানে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.