|
|
|
|
|
পরিবেশ, জল আর কয়লার
জটেই থমকে রেলের প্রকল্প |
|
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল • আদ্রা |
তিন জটে আটকে আছে আদ্রার তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প।
প্রায় দু’বছর আগে রেল মন্ত্রক ও ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি) যৌথ ভাবে ১,৩২০ মেগাওয়াটের ওই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলবে বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এ বারের রেল বাজেটের আগেও ওই প্রকল্পে পরিকাঠামোগত কোনও কাজই কার্যত শুরু হয়নি। অথচ, কাটোয়ার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো জমি নিয়ে সমস্যা এ ক্ষেত্রে নেই। মূলত, কয়লা, নদীর জল ও পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্রের অভাবেই কাজ এগোচ্ছে না।
৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প রূপায়িত হলে ‘পিছিয়ে পড়া’ পুরুলিয়ার অর্থনীতিই বদলে যেতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অনুসারী শিল্পে হতে পারে স্থানীয় কর্মসংস্থান। ২০১০-এ তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদ্রায় ওই কেন্দ্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই বছরই ৩১ অক্টোবর পুরুলিয়ার আনাড়ায় মমতার উপস্থিতিতে এ ব্যাপারে রেল-এনটিপিসি ‘মউ’ স্বাক্ষর হয়। ২০১৫ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। রেলের নিজস্ব ব্যবহারে লাগা ছাড়াও উৎপাদিত বিদ্যুতের একটি অংশ জেলার পাওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তিন বছরের মধ্যে এত বড় প্রকল্প শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রেলের কর্তারাও।
কাজ এগোচ্ছে না কেন?
প্রথমত, আদ্রার উপকন্ঠে যেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে ওঠার কথা, সেই মোহনপুরার জঙ্গলে রেলের জমি রয়েছে ১,০৬২ একর। তা লিজ দেওয়া রয়েছে বন দফতরকে। সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে সেখানে গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। শর্ত ছিল, রেল নিজের প্রকল্পের জন্য জমি ফেরত নিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু এখন প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গেলে ওই গাছ কাটতে হবে। তাতে পরিবেশের ক্ষতি হবে দাবি করে পরিবেশ মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছিলেন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া। এখনও ওই মন্ত্রকের ছাড়পত্র পায়নি রেল। তবে রেল আশাবাদী, যে ভাবে বিভিন্ন মহল থেকে তদ্বির চালু রয়েছে, তাতে দ্রুত পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র মিলবে। তার পরেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করবে রেল।
দ্বিতীয়ত, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১০ লক্ষ গ্যালন জলের প্রয়োজন। সবচেয়ে কাছের নদী হল দ্বারকেশ্বর, যা অধিকাংশ সময়েই শুকনো থাকে। তাই রেল মন্ত্রকের পরিকল্পনা ছিল, পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে প্রয়োজনীয় জল নেওয়া হবে। কিন্তু রেলের প্রকল্পে ওই পরিমাণ জল দিতে আপত্তি জানায় তৎকালীন বাম সরকার। তাদের যুক্তি ছিল, ওই পরিমাণ জল বিদ্যুৎকেন্দ্রে চলে গেলে প্রয়োজনীয় জলের ঘাটতি দেখা দেবে দামোদর নদে। পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যেই জলের জন্য আবেদন করা শিল্পসংস্থাগুলিও বঞ্চিত হবে। পরে অবশ্য ‘দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেশন কমিটি’ ছাড়পত্র দিলেও রাজ্যের আপত্তিতে বিষয়টি গড়ায় কেন্দ্রীয় জল কমিশনে। আজ, মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে এ বিষয়ে কমিশনের শুনানি হওয়ার কথা। রেলমন্ত্রকের আশা, পশ্চিমবঙ্গে পালাবদলের ফলে আর এ ব্যাপারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না রাজ্য সরকার। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আদ্রায় এসে জানান, পাঞ্চেত জলাধার থেকে প্রকল্পের জল সরবরাহের ব্যাপারে প্রাথমিক ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে।
তৃতীয় সমস্যা কয়লার। প্রকল্পটির জন্য বছরে ৫৬ লক্ষ টন কয়লার প্রয়োজন ফি বছর। এই সমস্যাটি মেটাতে ইতিমধ্যেই কয়লা মন্ত্রকের কাছে নিরবচ্ছিন্ন কয়লা সরবরাহের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন কয়লা খনি এলাকা থেকে, কত কয়লা ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পে নিয়মিত সরবরাহ করা হবে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এনটিপিসি সূত্রের খবর, কয়লা লাগবে উৎপাদনের সময়ে। আগে পরিবেশগত ও জলের সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।
কাজ শুরু না হওয়ার জন্য রেলের ‘বেহাল’ ভাঁড়ারের প্রসঙ্গও তুলছে কোনও কোনও মহল। কারণ, ওই প্রকল্পের জন্য ৬০০ কোটি টাকা রেলের খরচ করার কথা। যদিও রেলের বক্তব্য, আগে বিভিন্ন মন্ত্রকের ছাড়পত্র মিলুক। তার পরে অর্থ বরাদ্দ করার প্রশ্ন। তা ছাড়া, ওই পরিমাণ অর্থ তো একবারে লাগবে না।
দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ উঠেছে এনটিপিসি-র বিরুদ্ধেও। ‘মউ’ স্বাক্ষরের কয়েক মাস পরেই এই প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এনটিপিসি-র অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার পদমর্যাদার এক আধিকারিককে। কিন্তু তিনি আদ্রায় কয়েকবার এসে জমি পরিদর্শন ও রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়া কার্যত কিছুই করেননি বলে অভিযোগ। আদ্রার ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “এনটিপিসি-র প্রস্তাব পেয়েই প্রকল্প লাগোয়া এলাকায় দু’টি রেলের আবাসন দেওয়া হয়েছে।” রেল সূত্রের খবর, সেখানে এনটিপিসি-র কোনও কর্মী বা আধিকারিক থাকেন না। এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ মানেননি। এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর এক বছর পর থেকেই রেলের সাশ্রয় হওয়ার কথা প্রায় ৯৬৭ কোটি টাকা। কাজে দেরি হওয়ায় এলাকাবাসীর আশাভঙ্গ হচ্ছে। ক্ষতির বহর বাড়ছে রেলেরও। |
|
|
|
|
|