|
|
|
|
অভিযোগ ব্যাপক অনিয়মের |
রেকর্ড ভোটে জিতে ফের প্রেসিডেন্ট পুতিন |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
তিনি ‘কথা দিয়েছিলেন’, নির্বাচনে জিতবেন।
জয়ের পর প্রায় দশ হাজার সমর্থকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমেই তাই বললেন, “কথা রেখেছি।” চোখ দিয়ে তখন জল গড়াচ্ছে রাশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিনের। চার প্রতিদ্বন্দ্বীকে রেকর্ড ভোটে হারিয়ে যিনি তৃতীয় বারের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে আসতে চলেছেন।
নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, প্রায় ৬৩.৭৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন পুতিন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান জুগানভ পেয়েছেন মাত্র ১৭.৭ শতাংশ ভোট। বাকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থাও তথৈবচ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আট বছর, আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চার বছর! গত ১২ বছর রাশিয়ায় দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে আছেন পুতিন। এ বার আরও ছয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হলেন। তাঁর সামনে আছে শুধু সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই নেতার রেকর্ড। টানা ২৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন জোসেফ স্তালিন এবং লিওনিদ ব্রেজনেভ। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন পুতিন। আর সে বারও ইচ্ছে পূরণ হলে স্তালিনদের রেকর্ড ছোঁয়া তো সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
সমালোচকরা কিন্তু বলছেন, ‘সম্রাট’ যে কথা রাখবেন, তা তো জানাই ছিল! এটা আবার একটা নির্বাচন নাকি? কারচুপি আর অনিয়মে ভর করেই তো পুতিনের এই জয়! ইউরোপীয় পর্যবেক্ষকদের বক্তব্যও তাই। এক জন পর্যবেক্ষক টনিনো পিকুলা বলছেন, “এখানে তো পুরো ব্যবস্থাই এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই না হয়। ফলে কী হবে, সবাই জানত। সরকারি ক্ষমতা আর যন্ত্রের অপব্যবহার করা হয়েছে ব্যাপক ভাবে।” তাঁদের অভিযোগ, সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে শুধু পুতিনের প্রচার হয়েছে, দেশের প্রথম সারির সাতটি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ছিল শুধু পুতিনের বাণী আর ছবি। অন্য কেউ যে লড়ছেন, তা জানার উপায় রাখেননি প্রাক্তন কেজিবি প্রধান। |
|
জিতেও বিক্ষোভের মুখে পুতিন। দাবি, স্বচ্ছতা আসুক ভোটে। রস্তভ-অন-ডন শহরে। রয়টার্স |
নির্বাচন কমিশনের প্রধান, পুতিন-ঘনিষ্ঠ ভ্লাদিমির চুরোভের দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করা হয়েছিল, ছিল ক্যামেরাও। ফলে নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব ছিল না। সমালোচকরা এবং পর্যবেক্ষকরা হাসছেন। বলছেন, কারচুপি হয়েছে মূলত ভোট গণনায়। সেই কারচুপি চাপা দিতে গণনা কেন্দ্রের ক্যামেরাগুলি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তবে রাশিয়ার ভোটারদের একটা বড় অংশ এই জয় মানতে নারাজ। গত বছরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে যেমন দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হয়েছিল, তেমন প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছেন বিরোধীরা। ক্রেমলিনের সামনে এবং রাজধানী জুড়ে
তাই দাঙ্গা-দমনকারী পুলিশকেও নামিয়ে দিয়েছেন পুতিন।
দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে থাকা যায় না, তাই অনুগত মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট করে নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন পুতিন। তবে গত বছরই তিনি ঘোষণা করেন, ফের প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন তিনি আর প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরবেন মেদভেদেভ। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ রাস্তায় নামে তখনই। গত ডিসেম্বরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের জেরে আরও বাড়ে পুতিন-বিরোধিতা। গত ৪ ফেব্রুয়ারি কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে মস্কোয় প্রায় দশ হাজার প্রতিবাদীর জমায়েত কাঁপিয়ে দিয়েছিল ক্রেমলিনকে। এ বারের নির্বাচনে ফের অনিয়মের অভিযোগ সেই ক্ষোভে নতুন ইন্ধন জোগাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অনেক পর্যবেক্ষকই বলছেন, এই জয় আসলে পুতিন সাম্রাজ্যের ‘শেষের শুরু।’ কেন? বারো বছর আগে যে রাশিয়ায় প্রথম ক্ষমতায় আসেন পুতিন, তা ছিল রাজনৈতিক ভাবে অস্থির, অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল। সেই অবস্থাকে শক্ত হাতে সামাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই কাজে অনেকাংশে সফল হয়ে প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু সময় পাল্টেছে। ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপোষণ আর স্বৈরাচারের অভিযোগ জমা হয়েছে পুতিনের বিরুদ্ধে। ‘পরিবর্তিত’ রাশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। দেশে দুর্নীতি, সম্পদের অসম বণ্টন নিয়ে ক্রমশই ক্ষোভ বেড়েছে তাঁদের মধ্যে, যা ধীরে ধীরে ছড়িয়েছে গরিবদের শ্রেণির মধ্যেও। জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন পুতিন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থা সামাল দিতে পুতিনের সামনে এখন দু’টো রাস্তা। এক, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে নির্মম ভাবে দাবিয়ে দেওয়া। পুতিনের অতীত বলছে, এই রাস্তা বাছার সম্ভাবনাই বেশি। দ্বিতীয়, প্রতিবাদীদের দাবি মেনে সংস্কারের পথে হাঁটা। যার শুরুটা হতে পারে ২০১৮-র নির্বাচনে আর না লড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। এ ছাড়া, ‘হাতের পুতুল’ মেদভেদেভের জায়গায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করতে পারেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অ্যালেক্সি কুদ্রিনের মতো সংস্কারপন্থী নেতাকে।
‘শেষের শুরু’ ঠেকাতে এই রাস্তাই কৌশল হতে পারে ‘সম্রাট’ পুতিনের। |
|
|
|
|
|