অসুস্থ নবজাতকের চিকিৎসার নজরদারিতে তৈরি স্বাস্থ্য দফতরের টাস্ক ফোর্স বারণ করেছিল রেফার করতে। অভিযোগ, সেই নিষেধাজ্ঞা আগ্রাহ্য করে ডায়মন্ড হারবার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সেখানকার এসএনসিইউ (সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট) থেকে গুরুতর অসুস্থ এক সদ্যোজাতকে কলকাতায় রেফার করে দেন। কলকাতায় এসে ভর্তির জন্য সেই ৮০০ গ্রামের অসুস্থ শিশুকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ঘুরতে হয় তার অভিভাবকদের। শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ পথ যাতায়াত ও দীর্ঘ ক্ষণ বিনা চিকিৎসায় থাকায় শিশুটির অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছিল। তিন-চার দিন এম আর বাঙুরের এসএনসিইউ-এ চিকিৎসার পর তার বিলিরুবিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। এই ঘটনায় ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ জমা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের টাস্ক ফোর্সের কর্তারা। তাঁরা বলেছেন, বারণ করা সত্ত্বেও অসুস্থ শিশুকে রেফার করা অপরাধ। আরও বলেছেন, এম আর বাঙুরের এসএনসিইউ-এ ওই শিশুর চিকিৎসা হলে ডায়মন্ড হারবারের এসএনসিইউ-এ কেন তা হল না, ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের ১১ জন চিকিৎসককে শো কজ করেছেন সুপার।
গত রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে এসএনসিইউ-এ শিশু ভর্তি শুরু হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং টাস্ক ফোর্সের কর্তারা প্রসূতি বিভাগ পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারেন, হাসপাতালে ওই দিনই বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ সাবিনা বিবি নামে এক মহিলা ৮০০ গ্রামের একটি শিশুর জন্ম দিয়েছেন। শিশুটি ধুঁকছে। তাকে ১০ শয্যার এসএনসিইউ-এ ভর্তি করানো হয়নি। বিনা গ্লুকোজে সে সাধারণ শয্যায় পড়ে রয়েছে!
টাস্ক ফোর্সের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “তৎক্ষণাৎ সদ্যোজাতকে এসএনসিইউ-এ নিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তর্ক করে বলতে থাকেন, যে হেতু হাসপাতালে নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট নেই, তাই শিশুটিকে রেফার করতে হবে। কিন্তু আমরা পরীক্ষা করে দেখি, এসএনসিইউ-এ রেখে চিকিৎসা করলেই সে অনেকটা সুস্থ হবে। সেই সময়ে তাকে এসএনসিইউ-এ নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানতে পারি, আমাদের নিষেধ সত্ত্বেও তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে সে ভর্তি হতে পারেনি।”
কেন টাস্ক ফোর্সের নির্দেশ অমান্য করলেন ডায়মন্ড হারবারের চিকিৎসকেরা? ওই হাসপাতালের এসএনসিইউ-এর এক চিকিৎসক বলেন, “শিশুটির যা অবস্থা ছিল, তাতে তাকে এসএনসিইউ নয়, নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটেই রাখতে হত। টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের তা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওঁরা আমাদের অপমান করেন। শিশুটিকে বাঁচাতেই তাকে রেফার করা হয়েছে।”
টাস্ক ফোর্সের কর্তাদের বক্তব্য, ডায়মন্ড হারবারের চিকিৎসকেরা শুধু রেফার করে অন্যায় করেছেন তা-ই নয়, কলকাতায় পাঠানোর সময় অ্যাম্বুল্যান্সে শিশুর সঙ্গে কোনও চিকিৎসক বা নার্স দেননি। এসএসকেএমে জায়গা রয়েছে কি না, সেটাও তাঁরা আগে থেকে জেনে নেননি। এর ফলে অযথা এক এসএনসিইউ থেকে অন্য এসএনসিইউ-এ যেতে গিয়ে শিশুর জীবন বিপন্ন হয়েছিল বলে তাঁদের অভিযোগ।
|
গাফিলতির জেরে মৃত্যুর অভিযোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে শনিবার এসএসকেএম-এ এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। পুলিশ জানায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার বাসিন্দা জয়দেব মিস্ত্রিকে এ দিন বিকেলে হাসপাতালে আনেন তাঁর পরিবারের লোকেরা। কিন্তু দীর্ঘ ক্ষণ পেরিয়ে গেলেও তাঁকে ভর্তি করা হয়নি বলে অভিযোগ। দেরির কারণেই জয়দেববাবুর মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁর পরিবারের তরফে অভিযোগ হয়েছে। |