মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্রমাণ্বয়ে বলছেন, তাঁর সরকার প্রবল আর্থিক অনটনে।
রাজ্য মন্ত্রিসভায় তাঁর অন্যতম ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সহকর্মী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলছেন, “প্রকল্পের কাজ করার আগে পরিকল্পনা সঠিক হলে এবং দ্রুত সেই কাজ শুরু করে দিলে অর্থ প্রতিবন্ধক হয় না।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রকাশ্যেই বারবার বলছেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ‘ভিক্ষা’ চাইতে বা ‘বিশেষ কোনও আর্থিক প্যাকেজে’র জন্য দরবার করতে রাজি নন। তিনি ‘প্রাপ্য’ চান। কিন্তু তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য সুব্রতবাবু দেখাচ্ছেন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় দফতরের কাজ কী ভাবে
করতে হয়।
কী ভাবে? না, উন্নয়নের কাজের ‘পরিকল্পনা’ করে যে পরিমাণ অর্থ পাচ্ছেন, তা দিয়েই দফতরের কাজ করছেন সুব্রতবাবু। মাথায় রেখেছেন, কেন্দ্রীয় অধিকাংশ প্রকল্পের শর্তানুসারে কাজের গতি-প্রগতির নিরিখে পরবর্তী কিস্তির টাকা দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের থেকে পিছিয়ে-পড়া অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকার প্রথম কিস্তি পেয়ে তা কাজে লাগিয়েছেন সুব্রতবাবু। গরমে বাকুঁড়া, পুরুলিয়া, জঙ্গলমহলের অর্ন্তগত পশ্চিম মেদিনীপুরের অঞ্চল জলের অভাবে প্রতিবছর ‘শুখা’ হয়ে যায়। তার মোকাবিলার জন্য সুব্রতবাবু প্রকল্প করেছেন। সেই কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, ওই এলাকার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রথম কিস্তির ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। সেই টাকায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং জঙ্গলমহলে জল সরবরাহের ব্যপারে ‘ডিটেলস প্ল্যানিং রিপোর্ট’ (ডিপিআর) তৈরি হয়ে গিয়েছে। ওই তিন জেলা ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের নোদাখালি এবং উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিঙে পরিস্রুত জল সরবরাহের প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুব্রতবাবুর দাবি, তাঁর দফতরের কাজের গতি দেখে ‘সন্তুষ্ট’ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, কাজ শেষ করতে টাকার কোনও অভাব হবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না-করায় কেন্দ্রের পাঠানো টাকা ফেরত যাওয়াটাই বাম সরকারের আমলে ‘রেওয়াজ’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকী, পালাবদলের পরেও পঞ্চায়েত দফতরের গাফিলতিতে সড়ক তৈরির প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের টাকা ফেরত গিয়েছে। প্রসঙ্গত, নতুন সরকারের আট মাসের মাথায় পঞ্চায়েত মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে সরিয়ে সুব্রতবাবুর হাতে ওই দফতরের দায়িত্ব দেন মমতা। ওই সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখেই কাজ করছেন সুব্রতবাবু। এবং কাজে লাগাচ্ছেন কলকাতার মেয়র থাকার অভিজ্ঞতা। তাঁর কথায়, “মেয়র থাকাকালীন আমার লক্ষ্য ছিল, কোন জায়গায় পুরসভার টাকা বকেয়া আছে, তা খোঁজ নিয়ে আদায়ের ব্যবস্থা করা এবং পুরসভার আয়ের উৎসগুলি থেকে টাকা ঠিকমতো আসছে কিনা, সেটা
নিজে দেখা।”
প্রথমে জনস্বাস্থ্য করিগরি এবং পরে পঞ্চায়েত দফতরের দায়িত্ব নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ‘সঠিক পরিকল্পনা’ তৈরি করে সেই সমস্ত প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কোন বিভাগ থেকে টাকা পাওয়া যাবে, তার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। ‘সতর্ক’ মন্ত্রীর কথায়, “আমাদের পরিকল্পনার অভাবে কেন্দ্রের টাকা যাতে ফেরত না-যায়, তার দিকে নজর রাখাই আমার লক্ষ্য। কেন্দ্রীয় সরকার কোন কোন প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে, সেটা দেখে দ্রুত প্রকল্প তৈরি করছি।’’ তাঁর দাবি, “আগামী পাঁচবছরে আমার দফতরের জন্য পাঠানো কেন্দ্রের টাকা যেমন ফেরত যাবে না, তেমনই আমাদের কোনও প্রকল্প টাকার অভাবে আটকে যাবে না। এটা নিশ্চিত।”
প্রশাসনিক মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, সুব্রতবাবু ‘কর্মপদ্ধতি’ সরকারের অন্যান্য দফতরের মন্ত্রীর কাছে ‘মডেল’ হতে পারে। তবে প্রশাসনের অন্য অংশের বক্তব্য, এই মন্ত্রিসভায় সুব্রতবাবুই একমাত্র মন্ত্রী যিনি এর আগে রাজ্যে মন্ত্রিত্ব করেছেন এবং কলকাতা পুরসভা চালানোর মতো প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলেছেন। ফলে তাঁর কাছে পদ্ধতি মেনে কাজ করা ‘প্রত্যাশিত’ই। সরকারের অন্দরে বিভিন্ন বিষয়ে এর আগে কিছু মন্ত্রী তাঁদের দফতর নিয়ে সুব্রতবাবুর দ্বারস্থ হয়েছেন। এখন দেখার, আর্থিক অনটনের এই বাজারে দফতরের কাজে ‘সাফল্য’ দেখিয়ে সুব্রতবাবু ‘উদাহরণ’ হতে পারেন কিনা। |