পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডে ধৃত নিশাদ আলম ওরফে রুমান খান, নাসির খান এবং সুমিত বজাজকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল আদালত। শনিবার দুপুরে ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতের মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে পেশ করা হয়।
অভিযুক্তদের আইনজীবীরা তাঁদের মক্কেলদের জামিনের আবেদন জানান। সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী সর্বাণী রায় তার বিরোধিতা করে বলেন, ওই ঘটনায় এক অভিযুক্ত এখনও পলাতক। তা ছাড়া, ধৃতদের নিয়ে ‘টি আই প্যারেড’ (টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন প্যারেড) করানোর প্রয়োজন রয়েছে। সরকার পক্ষের আইনজীবী আরও জানান, কলকাতা এবং অন্য রাজ্য থেকে ক্রমাগত হুমকি ফোন পাচ্ছেন অভিযোগকারী মহিলা। এই পরিস্থিতিতে ধৃত যুবকদের জামিন দেওয়া উচিত হবে না। তাদের জেল হেফাজতে পাঠানোর আর্জি জানান তিনি।
শুনানি চলাকালীন অভিযুক্ত পক্ষের এক আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বিচারককে বলেন, ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই মহিলা। এফআইআর-এ লাভি গিদওয়ানি, আজহার, শরাফত আলি, সলমন এবং অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের নাম ছিল। একটি সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ওই যুবকদের মধ্যে কয়েক জনের ছবি শনাক্ত করার দাবিও করেন অভিযোগকারিণী। মিলনবাবু আরও বলেন, কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ নাসিরদের গ্রেফতার করে। অন্যের নাম ‘ভাঁড়িয়ে’ নাসিররাই ওই কাজ করেছে বলেও দাবি করা হয়। মিলনবাবুর দাবি, তাঁর মক্কেলরা ওই ঘটনায় জড়িত থাকলে নিজেদের বাড়িতে থাকতেন না, কোথাও গা-ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি বলেন, ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকলেও, তাঁর মক্কেলদের শনাক্তকরণের (টি আই প্যারেড) জন্য ওই মহিলা এখনও লালবাজারে যাননি। ধর্ষণ-কাণ্ডে যে গাড়িটি ব্যবহার হয়েছিল বলে অভিযোগ, সেটির ফরেন্সিক পরীক্ষা নিয়েও অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন। আইনজীবী সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায়, তীর্থঙ্কর ঘোষরা বলেন, ২১ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি লালবাজার চত্বরে গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু প্রথম দিন তেমন কিছু না মিললেও, পরের দিন ওই গাড়ি থেকেই কানের দুল, এক মহিলার মাথার চুলের হদিস মেলে। এই বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা। ধৃতদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি নিশাদ, নাসির, সুমিতদের আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। সেই সময় ধৃতদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
|
যাদবপুরে স্টার আনন্দ, আনন্দবাজার-সহ কিছু সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের উপরে তৃণমূল কর্মীদের মারধরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক নিউজ চ্যানেলগুলির সম্পাদকদের সংগঠন ‘ব্রডকাস্ট এডিটর্স অ্যাসোসিয়েশন’ (বিইএ)। গত মঙ্গলবার, ধর্মঘটের দিন ওই ঘটনা ঘটে। সেই দিনই মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে চিহ্নিত করেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়াতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিইএ। সংবাদমাধ্যমের উপরে বিভিন্ন গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান এবং সাংবিধানিক পদাধিকারীর আক্রমণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শনিবার একটি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেছে ওই সংগঠন। বেঙ্গালুরুর আদালত চত্বর, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা থেকে শুরু করে যাদবপুর সাংবাদিকদের মারধর ও সংবাদমাধ্যমের বাক্-স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য আক্রমণের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে বলে ওই সংগঠনের অভিযোগ। সংবাদমাধ্যম জনস্বার্থে কাজ করে বলে তাকে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই নির্দিষ্ট একটি ধাঁচে একের পর এক আক্রমণ ঘটানো হচ্ছে বলে মনে করছে বিইএ। |