একটার পর একটা টর্নেডো আছড়ে পড়ছে। তিলে তিলে গড়ে তোলা সুন্দর সাজানো গোছানো শহর চোখের সামনে এক নিমেষে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকার উপসাগরীয় উপকূল থেকে গ্রেট লেক পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চিত্রটা অনেকটা এ রকমই। আমেরিকার আবহাওয়া দফতরের মতে, কাল রাতে অন্তত ৪৪টা টর্নেডো আছড়ে পড়েছে ইন্ডিয়ানা, আলাবামা, কেন্টাকি, ওহায়ো-সহ ৯টি রাজ্যে। এর মধ্যে দু’টোর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার। এখনও পর্যন্ত ৩১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ বহু। ধ্বংসস্তূপের তলায় আরও অনেকে আটকে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে। |
টর্নেডোর ধাক্কায় বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছে স্কুল বাস। ছবি: এপি |
ঝড়ের তাণ্ডবলীলার জেরে কেন্টাকি, দক্ষিণ আলাবামা ও হেনরিভিলের সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টারে করে সেনা পাঠানো হয়েছে। এ বারের ঝড়ে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ইন্ডিয়ানার হেনরিভিলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা একেবারেই বিচ্ছিন্ন। শহরের প্রায় সব বাড়ি মাটিতে মিশে গিয়েছে। ওই অঞ্চলের বাসিন্দা অ্যান্ডি বেলের কথায়, “একটাও বাড়ি অক্ষত নেই। খালি ধ্বংসস্তূপ। এক তলা বাড়ির ছাদে উঠে গিয়েছে স্কুলবাস।” ৫৪ বছরের সুশি রেনার বললেন, “পর পর দু’টো ঝড় এল। প্রথম বারেরটা কী রকম বাদামি রঙের। পরেরটা একেবারে কালো। সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল। ঝড় চলে যাওয়ার পর দেখি কোনও কিছুই আর অক্ষত নেই।”
ইন্ডিয়ানার গভর্নর মিচ ড্যানিয়েলস ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল দেখতে যাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে নিখোঁজদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। শুধু ইন্ডিয়ানাতেই ১৩টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া কেন্টাকিতে ১২, ওহায়োতে ৩ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। গত মঙ্গলবারেই টর্নেডোর তাণ্ডবে কানসাস, মিসৌরি, ইলিনয় থেকে মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আবহাওয়া দফতর থেকে আরও বড় টর্নেডোর পূর্বাভাস দেওয়ায় শুক্রবার সকাল ইন্ডিয়ানার অধিকাংশ স্কুল ও অফিস বন্ধ ছিল। ইন্ডিয়ানার শেরিফ ড্যানি রডেন জানালেন, ‘‘এত বড় ঝড় আগে দেখিনি। আগে থেকে জানা থাকলেও একে এড়ানো সম্ভব ছিল না।” |
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আমেরিকার ইন্ডিয়ানা রাজ্যের একটি স্কুল। ছবি: এএফপি |
স্থানীয় একটি দোকানের মালিক টনি উইলিয়ামস কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর দাদু, দিদিমাকে বাঁচানো যায়নি। তিনি বললেন, “একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চারপাশে ছুটে বেড়াচ্ছিলাম। খুব জোরে ঝড় হচ্ছিল। হঠাৎ চোখের সামনে একটা বাড়ি ধসে পড়ল। বাড়ির মধ্যে তখনও লোক ছিল দেখলাম। জানি না তাঁরা কেমন আছেন।” প্রসঙ্গত আজ সকালেই ওই বাড়ির তলা থেকে ঠাকুরদা, ঠাকুমা আর তাঁদের চার বছরের নাতির দেহ পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওই শিশুটির বাবা, মা-র খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ওকলাহোমার আবহাওয়া দফতরের এক আধিকারিকের কথায় মার্চ ও এপ্রিলে আমেরিকায় এ ধরনের ঝড় প্রায়ই দেখা যায়। শুধু গত বছরেই টর্নেডোয় আমেরিকায় ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার কেন্টাকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রায় দু’ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল। ন্যাশভিলে ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গী ছিল প্রবল শিলাবৃষ্টি। কেন্টাকিতে হড়পা বানের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। আলাবামায় বহু লোকের আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে এর মধ্যেই পানীয় জল আর খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় আহতদের চিকিৎসা কী ভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তায় আলাবামা ও কেন্টাকি কর্তৃপক্ষ। |