হাসপাতালে চিকিৎসকদের পায়ে দেওয়ার চটি যথেচ্ছ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে তা নিয়েই।
ওটি, আইসিইউ, আইটিইউ, নিওনেটাল ও পেডিয়াট্রিক কেয়ারের মতো জায়গায় জুতো খুলে এই চটি পরে ঢোকাই বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রায় তিন বছর সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স এই চটির জন্য দরপত্র ডাকা বন্ধ করেছে। হাসপাতালগুলি ইচ্ছেমতো চটি কেনে। ফলে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে নিয়ম না মেনে বরাত দেওয়া, দরপত্র ছাড়া চটি কেনা ও টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরে।
অনেক জায়গায় খাতায়-কলমে চটি কেনা হলেও বাস্তবে চটির দেখা মিলছে না বলেও অভিযোগ একাধিক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের। এনআরএস, ন্যাশনাল মেডিক্যাল, পিজির ডাক্তাররা স্বাস্থ্যকর্তাদের জানিয়েছেন, চটি না পেলে তাঁদের ওটি-তে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে।
স্বাস্থ্য দফতরের টনক নড়ে সম্প্রতি, ন্যাশনাল মেডিক্যালের একটি ঘটনায়। অভিযোগ, চটির অভাব দেখিয়ে ২০০টি চটি বিনা দরপত্রেই কেনার নির্দেশ দেন ডেপুটি সুপার অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশির ভাগ মেডিক্যাল কলেজে যেখানে ৬৫-৭০ টাকায় একজোড়া চটি কেনা হয় সেখানে ন্যাশনালে প্রতি জোড়া কেনা হয় ১৭০ টাকায়। স্বাস্থ্যকর্তারাই জানান, যেখানে ১৩ হাজার টাকায় সব চটি কেনার কথা, সেখানে ৩৪ হাজার টাকায় ২০০ জোড়া কেনা হয়েছে। সেই চটিও পায়ে দিলেই ছিঁড়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অতনুবাবুর জবাব, “যা বলার সুপার বলবেন।” সুপার পার্থ প্রধান বলেন, “আমাকে অন্ধকারে রেখে সব হয়েছে। জানামাত্র বিল আটকেছি।”
ডাক্তারেরা জানান, সংক্রমণ এড়াতে এই চটি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এত জরুরি জিনিসের জন্য কেন সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স দরপত্র ডাকা বন্ধ করেছে তা তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে না।
পিজি কর্তৃপক্ষের দাবি, তিন মাস আগেই তাঁরা ১৫০ জোড়া চটি কিনেছেন। কিন্তু ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদেরই অভিযোগ, চটির অভাবে তাঁদের কাজ বন্ধ হতে বসেছে। নতুন কেনা চটির হদিশ নেই। একই অবস্থা মেডিক্যাল কলেজ কিম্বা এনআরএস-এ। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, চটি অবাধে চুরি হচ্ছে। হাসপাতালের কর্মী থেকে রোগীর আত্মীয় ওই চটি পরে চলে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের কথায়, “ভাবছি, এ বার একজোড়া চটির মধ্যে দু’টো দু’রঙের অর্ডার দেব। তা হলে আর সেটা বাইরে পরা যাবে না।”
কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স মারফত দরপত্র ডেকে চটি কেনা বন্ধ করল কেন? সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সের প্রধান অসিত সামন্তের জবাব, “বছর তিনেক আগে একবার দরপত্র ডাকা হয়। কিন্তু আগ্রহী সংস্থাগুলোর কারও চটির মানই বিশেষজ্ঞদের পছন্দ হয়নি। তখন থেকেই চটি কেনা বন্ধ। কবে হবে, জানা নেই।” |