একের পর ধর্ষণ ও রাজনৈতিক খুনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে যে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ বার রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বকে আরও কিছুটা আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়ার ছাড়পত্র দিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য আজ দিল্লি এসে বৈঠক করেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের সঙ্গে। বৈঠকে শাকিলকে প্রদীপবাবু জানান, রাজ্যে যে ‘অরাজকতা’ তৈরি হয়েছে, তাতে মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। প্রদীপবাবুর মুখের কথা শেষ না হতেই শাকিল বলেন, হাইকম্যান্ডের কাছে সব খবরই রয়েছে। রাজ্য নেতৃত্ব এ বার একটু একটু করে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিক। পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে জেলায় জেলায় আরও বেশি করে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে শুরু করুক রাজ্য নেতৃত্ব।
সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সদর দফতরে ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে প্রদীপবাবু আজ বলেন, “রাজ্যে একের পর অপরাধের ঘটনা নিয়ে জনমানসে উষ্মা বাড়ছে। ধর্ষণ, খুন ও অপরাধের ঘটনায় তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশও অনেক সময় তৃণমূল নেতৃত্বের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা নয়। বরং আশা করব পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করবে।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিন্তু এখনই আক্রমণাত্মক পথে হাঁটবে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে মমতার সরকার কিছুটা চাপে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু তিনি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। তাঁর হাতে সময়ও রয়েছে। তা ছাড়া মমতাকে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিব্রত করলে কেন্দ্রে তিনিও কংগ্রেসকে চাপে ফেলতে পারেন। শীতকালীন অধিবেশনেই তিনি লোকপাল বিল থেকে খুচরো বিতর্ক সব বিষয়ে কংগ্রেসকে যথেষ্ট অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন। এখন হাইকম্যান্ড কঠোর অবস্থান নিলে আসন্ন বাজেট অধিবেশনেও তৃণমূল গোল বাধাতে পিছপা হবে না। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলও দেখতে হবে। সেখানে কংগ্রেস ভাল করলে পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনা।
তবে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা যে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করছেন না, তা-ও নয়। ইদানীং অল্পবিস্তর টিকা-টিপ্পনিও শুরু করেছেন। যেমন, আরপিএফ আইন সংশোধন বিতর্কে কৌশলে বল তৃণমূলের কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন তাঁরা। আবার গত কাল রাজ্যপাল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা সমর্থন করেছেন। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, হাইকম্যান্ড আপাতত এই লক্ষ্মণরেখা পার করবেন না। কিন্তু কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা তো রাজ্য নেতৃত্বের নেই। ফলে তারা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী অবস্থান নিতেই পারে।
তাঁরা যে এই ছাড়পত্র পেয়েছেন, সেটা প্রদীপবাবুর কথাতেও স্পষ্ট। তাঁর কথায়, “আমরা ধরেই নিয়েছি যে, নভেম্বরে পঞ্চায়েত ভোট হবে। আর তা মাথায় রেখেই জেলায় জেলায় রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে চাইছি।” শাকিল-প্রদীপ বৈঠকেই আজ স্থির হয়েছে, ১০ মার্চ মেদিনীপুরে মানস ভুইঞার ডাকা জনসভায় প্রদীপ-শাকিল উপস্থিত থাকবেন। ওই দিনই পুরুলিয়ায় এক সভায় থাকবেন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। ১৮ মার্চ প্রদেশ কংগ্রেসের এক্সিকিউটিভ কমিটির বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে শাকিলও থাকবেন।
রাজ্য কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্য নেতারা মনে করেন, সরকার থেকে মন্ত্রীদের প্রত্যাহার করে নিক হাইকম্যান্ড। দীপা দাশমুন্সিরা এ কথা রাহুল গাঁধীকেও জানিয়েছেন। তাঁদের কথায়, উত্তরপ্রদেশে রাহুল জোট সরকারে সামিল হতে চাইছেন না। তা হলে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কেন অন্য নিয়ম হবে? কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, সেই পরিস্থিতি এখনও আসেনি। সম্প্রতি মন্ত্রিসভা থেকে দলের এক মন্ত্রী ইস্তফা দেওয়ার পর সেই শূন্যস্থান পূরণ করা হয়নি। তৃণমূলকে বার্তা দেওয়ার জন্য আপাতত তাই যথেষ্ট। সুতরাং রাজ্য নেতৃত্বের উচিত হবে, রাজ্যে তৃণমূলের শাসনে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে আরও বেশি করে মানুষের কাছে যাওয়া ও সংগঠনকে জোরদার করা। |