‘বয়ান’ লেখেনি দীপঙ্কর, মন্ত্রীর কথা অস্বীকার দলেরই নেতার
ন্ত্রীর দাবি ‘উড়িয়ে’ দিলেন তাঁর দলেরই নেতা।
বারাসত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দীপঙ্কর মিস্ত্রিকে দিয়ে কোনও ‘বয়ান’ লেখানো হয়নি বলে শুক্রবার মন্তব্য করেন তৃণমূল নেতা তাপস দাশগুপ্ত। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এর আগে বলেছিলেন, তাপসবাবু তাঁদের দলের কয়েক জনকে নিয়ে দীপঙ্করের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে লিখিত ‘বয়ানে’ ওই কিশোর জানিয়েছে, ‘তোলাবাজির’ জন্য তাকে মারধর করা হয়নি। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ‘টাকা-পয়সা নিয়ে ঝামেলা’র জেরেই এই কাণ্ড।
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে দীপঙ্কর মিস্ত্রি জানিয়েছিল, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাবরা স্টেশনে এক দল তোলাবাজ তার কাছে মদ খাওয়ার টাকা চায়। টাকা দিতে না চাওয়ায় তাকে মারধর করা হয়। পরে বাড়ি থকে তুলে নিয়ে গিয়ে রেল কলোনির একটি ক্লাবঘরে আটকে ফের পেটানো হয়। অসুস্থ দীপঙ্কর এখনও চিকিৎসাধীন। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার।
দীপঙ্করের বাড়িতে পুলিশ প্রহরা। ছবি: শান্তনু হালদার
হাসপাতালে গিয়ে তৃণমূলের লোকজন দীপঙ্করের উপরে ‘চাপ’ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে প্রহৃত কিশোরের পরিবার। তার বাড়িতেও ‘হুমকি’ দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানিয়ে দেন, তৃণমূল নেতাদের কাছে লিখিত ‘বয়ান’ দিয়েছে দীপঙ্কর। এমনকী, তাকে মারধরের ঘটনায় ‘রাজনীতির’ যোগ নেই বলেও সে জানিয়েছে।
মন্ত্রীর এই দাবির উল্টো সুরই এ দিন শোনা গিয়েছে তাপসবাবুর কথা।
উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল পরিচালিত শ্রমিক সংগঠনের কার্যকরি সভাপতি তাপসবাবু বলেন, “ছেলেটির ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। আমরা বারাসত হাসপাতালে যাই। ও বেশি কথা বলার মতো অবস্থায় ছিল না। শুধু বলে, মদ খাওয়ার টাকা না দেওয়ায় ওকে মারধর করেছে এলাকার কিছু ছেলে। দু’এক কথা বলার পরে আমি ফিরে আসি। বয়ান লেখানোর মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্তে নেমে গ্রেফতার করেছে দু’জনকে। বাকি অভিযুক্তেরা এখনও পলাতক। এই অবস্থায় দীপঙ্কর তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ‘বয়ান’ লিখে দিতে যাবে কেন, সে প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে। এমনকী গুরুতর জখম ওই কিশোর এখনও যেখানে ভাল ভাবে কথাই বলতে পারছে না, হাসপাতালে শুয়ে সে কী ভাবে ‘বয়ান’ লিখল, তা নিয়েও সংশয় দেখা দেয়। তাপসাবুর এ দিনের বক্তব্যে অবশ্য সেই ‘জট’ কেটেছে। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয়বাবু কেন ‘বয়ানের’ প্রসঙ্গ আনলেন, সে ব্যাপারে ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে। তাপসবাবুর এ দিনের মন্তব্য শুনে খাদ্যমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “তা হলে হয় তো ছেলেটি যা বলার মুখেই বলেছে।”
অন্য দিকে, আনন্দবাজারের খবরের জেরে এ দিন হাবরা স্টেশনের পাশে রেল কলোনিতে দীপঙ্করের বাড়িতে তিন জন লাঠিধারী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি, হাবরা প্ল্যাটফর্মেও মোতায়েন হয়েছে রেল পুলিশ। ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি) অনিল কুমার এ দিন হাবরা থানায় আসেন। তিনি বলেন, “ওই ছাত্রকে মারধরের ঘটনার তদন্ত চলছে। বাকি অভিযুক্তেরও অবিলম্বে গ্রেফতার হয়ে যাবে।”
বারাসত হাসপাতালে দীপঙ্করের জন্য অবশ্য এখনও কোনও পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়নি। দীপঙ্করের সঙ্গে একই ওয়ার্ডে ভর্তি জয় সমাদ্দার নামে এক যুবক। দীপঙ্করকে মারধরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে যাঁকে পিটিয়ে হাবরা থানায় নিয়ে গিয়েছিল জনতা। যদিও হাবরার বাসিন্দা ওই যুবককে তৃণমূল থানা থেকে ‘ছাড়িয়ে নিয়ে যায়’ বলে অভিযোগ। দীপঙ্করের মামা মৃণাল ব্যাপারি এ দিনও বলেন, “আজও তৃণমূলের কিছু লোকজন হাসপাতালে গিয়ে ওকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমাদের চাপ দেয়। তবে দীপঙ্করের সঙ্গে ওরা কথা বলতে পারেনি।” সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক সত্যসেবী করের নেতৃত্বে সিপিএমের একটি প্রতিনিধি দল এ দিন দীপঙ্করের সঙ্গে দেখা করে। তৃণমূলের ‘চাপে’ পড়ে বৃহস্পতিবারই দীপঙ্করকে ছুটি দিয়ে দিয়েছিল হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ। সে কথা সংবাদমাধ্যমে চাউর হয়ে যায়। পরে ছেলেটির অসুস্থতার কথা ‘পুনর্বিবেচনা’ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি রেখে দেন হাসপাতালে। হাসপাতালের সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত এ দিন বলেন, “দীপঙ্কর এখনও অত্যন্ত দুর্বল। তার পিঠে, বুকে ব্যথা। এখনই ছাড়া যাবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.