‘অন্ধকারে কাঁদিছে ঊর্বশী/ কান পেতে শোন বন্ধু...’ শুরুতেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দিবারাত্রির কাব্য’র সেই রোমহর্ষক অংশ। নাটক শেষেও সেই দমবন্ধ অনুভূতি। সত্যিই সাহসী প্রযোজনা। গোত্রহীন প্রযোজিত ‘প্রাগৈতিহাসিক’এর নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় সুপ্রতিম রায়। ডাকাতির দৃশ্যে ছৌ নাচের এবং ভিখুর কামস্বপ্নে নৃত্য কম্পোজিশনে মার্থা গ্রাহামের প্রভাব লক্ষণীয়। অসাধারণ টিম ওয়ার্ক। আহত ডাকাত সর্দার ভিখু তার পুরনো স্যাঙাত প্রহ্লাদের কাছে আশ্রয় চায়। প্রহ্লাদ ভিখুকে বনের মধ্যে এক মাচায় লুকিয়ে রাখে। ভিখুর মাচা শূন্যে ভাসছে। এই অ্যাবস্ট্রাক্টনেস মনে করিয়ে দেয় ম্যাকবেথের থ্রি উইচেস-এর কথা। সাহসী শরীরের ব্যবহার, কিন্তু তা চটুল বা সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য নয়। দেখা যায় পঙ্গু ভিখু প্রহ্লাদের স্ত্রীর শরীরের গন্ধে ক্ষুধার্ত পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রহ্লাদও ভিখুকে পিটিয়ে আধমরা করে স্ত্রীর উপর কায়েম করে নিজের অধিকার। ভিখু ভেসে যায় একটি ডিঙি করে। অন্তরালে দারোগার কাছে শরীরের বিনিময়ে পাঁচি পায় ভিক্ষায় বসার অনুমতি। মূল গল্পের বাইরে আসে এক পূজারি আর এক দারোগার চরিত্র। তবে স্বয়ং দারোগা ভিখারিদের কাছ থেকে টাকা তোলার দৃশ্যটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
দেবার্চনা সরকার, জয় মোদক, অমিত ভট্টাচার্য ও শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় যথাযথ। অন্যান্য ভূমিকায় হৈমন্তী, শ্রেষ্ঠা, মনামী, সিদ্ধার্থ, সম্রাট, শংকর, দুলাল ও সুপ্রতিম রায়। সফল বাবলু সরকারের আলো।
|
বর্তমান সময় বড় অস্থির, বাড়ছে হিংসা, বিদ্বেষ। সামাজিক অবক্ষয় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রেম যেন তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ‘অন্তরীক্ষ’ আয়োজিত ‘সময়ের মুখোমুখি’ শীর্ষক কবিতা পাঠের আসরে। পৌলমী ভট্টাচার্য পাঠ করলেন জীবনানন্দের ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ এবং ‘অন্ধকার’ কবিতা দু’টি। এছাড়াও অমিতাভ দাশগুপ্তের ‘শুনুন কমরেডস’ এবং শঙ্খ ঘোষের ‘তুমি কোন দলে’ শ্রোতাদের মন জয় করে। শিল্পীর এ দিনের কবিতা চয়ন ছিল বেশ অভিনব। উপস্থাপনাও বেশ সাবলীল। তবে কবিতা পাঠে রাহুল ঘোষের পাঠ ছিল সাধারণ মানের। তাঁর কণ্ঠে ‘অপেক্ষায়’ কবিতাটি মানানসই হয়নি। অপর শিল্পী রফিক আলমের কণ্ঠে ‘প্রশ্ন’ কবিতাটি শুনতে মন্দ লাগে না। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন পীতম ভট্টাচার্য। |