মেলবোর্নের ম্যাচটা দেখে অনেকেই নিশ্চয়ই মুষড়ে পড়েছেন। শ্রীলঙ্কা শুক্রবার জিতে যাওয়ায় অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, বিরাট কোহলির ও রকম দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরিটা জলে গেল। কিন্তু আমার আফশোস তো নয়ই, মন খারাপও হচ্ছে না। পরিষ্কার বলে রাখি, ধোনির এই টিম ফাইনালে যাওয়ার যোগ্যই ছিল না। তাই ফাইনালের আগেই বিদায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের, যেটা কি না হওয়ারই ছিল। বরং এ রকম ছন্নছাড়া একটা টিম ফাইনালে উঠলেই অন্যায় হত।
টিভিতে আজকের ম্যাচটা দেখতে দেখতে শুধু দু’টো টিমের তফাতটা দেখছিলাম। ভারত, শ্রীলঙ্কা দু’টো টিমই বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে। ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়নও হয়েছে। অথচ মাঝের এগারোটা মাস কী ভাবে পাল্টে দিয়েছে সব কিছু! জয়বর্ধনেদের মধ্যে যে অদম্য একটা জেদ আজ দেখছিলাম, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার যে একটা মরিয়া চেষ্টা চোখে পড়ছিল, শেষ ম্যাচটা ছাড়া সে সব কোথায় ছিল ধোনির টিমে? উল্টে ধোনি-রায়নাদের মনোভাবটা এমন দাড়িয়েছে, হেরেছি তো কী? মিডিয়া দু’দিন লেখালেখি করবে। বিশেষজ্ঞরা ‘গেল গেল’ আওয়াজ তুলবে দিন কয়েক। তার পর আবার যে কে সেই। আমরা একই অবস্থায় থেকে যাব। কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না। বুঝে পাচ্ছি না, এই ঔদ্ধত্যটা আসছে কী ভাবে?
আরও একটা কথা সোজাসাপ্টা জানিয়ে রাখি। এশিয়া কাপে কিন্তু এই টিমের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করবেন না। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান উপমহাদেশের উইকেটে একেই কঠিন প্রতিপক্ষ। আর তার উপর ধোনির এই টিমটা টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। আরও ইন্ধন দিচ্ছে ভারতীয় বোর্ড। বিরাট কোহলির মধ্যে নিশ্চয়ই অধিনায়ক হওয়ার মশলা আছে। কিন্তু এই অবস্থায় ওকে সহ-অধিনায়কত্ব দেওয়া মানে ধোনির মুখের উপর আর কেউ কথা বলার থাকল না। যেটা সহবাগ বা গম্ভীর হলে হত। কিন্তু বিরাটের কথা ধোনি শুনবে বলে মনে হয় না। বাঁচার উপায় একটাই মাথায় আসছে। সচিন তেন্ডুলকর। টিমের এই অবস্থা দেখে ও যদি হাল ধরে, যদি মুখ খোলে তা হলেই কিছু হতে পারে টিমটার। বিদেশি কোচের উপর আমার কোনও আস্থা নেই। ফ্লেচারদের কাজই হচ্ছে অধিনায়কের কথায় ঘাড় নাড়া। |
সচিন এমনিতে ক্রিকেটের বাইরের কোনও ব্যাপারে থাকতে চায় না। কিন্তু এ বার ওর মুখ খোলা উচিত। টিমটার যা দশা।
টেস্ট সিরিজটা জঘন্য ভাবে হারার পর ভেবেছিলাম, ওয়ান ডে-তে অস্ট্রেলিয়া এ ভাবে মারতে পারবে না। ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সে সব নয়, উল্টে দেখলাম ওয়ান ডে সিরিজ শুরুর আগেই সুরেশ রায়না খোলাখুলি বলে গেল, ও তিন নম্বরে নামতে চায়। কিন্তু বাধ্য হয়ে ছ’নম্বরে নামতে হচ্ছে কারণ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ক্ষমতা নেই মিডল অর্ডার সামলানোর! আর এই কথাগুলো বলার সাহসটা রায়না কোথা থেকে পেল? সহজ উত্তর, ধোনি। বাচ্চারাও জানে, ধোনির সবচেয়ে কাছের লোক এখন রায়না। যে টিমের অধিনায়কের মনোভাব এমন, সেই টিমের আবার ভাল কিছু হয় নাকি? বরং ধোনিরা ধন্যবাদ দিতে পারে বিরাট কোহলিকে। হোবার্টে ও রকম দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরিটা না হলে তো এই শেষ সুযোগটাও তৈরি হয় না। অনেক আগেই ছুটি হয়ে যায় ভারতের।
সবার আগে আসলে অধিনায়ককে সরানো উচিত ছিল। কখনও শুনিনি, বিদেশে টানা আটটা টেস্ট হেরে কেউ অধিনায়কত্ব বাঁচিয়ে রেখেছে। পাল্টা লড়াইয়ের স্ট্র্যাটেজি নেই, উল্টে একের পর এক ভুল পদক্ষেপ। ধোনির কাছে আমি জানতে চাই, কেন তুমি ওয়ান ডে সিরিজের প্রথম থেকে সেট টিম খেলাওনি? সচিন-সহবাগরা স্লো ফিল্ডার বলে কেন শুরুতেই তুমি বিতর্ক তৈরি করেছিলে? কোন যুক্তিতে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলে টিম স্পিরিটের? আর রোটেশন কখন হয়? যদি আপনার টিম ফাইনালে উঠে যায়, তখন আপনি না হয় দু’তিন জন প্লেয়ারকে দেখে নিলেন। কিন্তু সে সব সিরিজের আগে কেন? ধোনি যুক্তি দিয়েছে, ও নাকি ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা ভেবে তরুণদের নামাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, ‘তরুণ’ শব্দটা কী শুধু সুরেশ রায়না-রোহিত শর্মাদের ক্ষেত্রে খাটে? মনোজ তিওয়ারি তরুণ নয়? স্রেফ অধিনায়কের খামখেয়ালিপনার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে এ ভাবে লজ্জা নিয়ে ফিরতে হল।
এশিয়া কাপে ভাল কিছু করতে হলে ধোনিকে এ সব পাগলামি ছাড়তে হবে। রায়না-রোহিত প্রীতি ছেড়ে মনোজকে খেলাতে হবে। এক মাসে একটাও ম্যাচ পেল না ছেলেটা। সেঞ্চুরি করে কী লাভ হল তা হলে? খেলাতে হবে অশোক দিন্দাকেও। দেশের সেরা জোরে বোলার এখন দিন্দা। দরকারে দুই স্পিনার, দুই পেসারে এশিয়া কাপ খেলুক ভারত। আর এশিয়া কাপে ধোনির শেষ সুযোগ হওয়া উচিত। উপমহাদেশেও যদি না পারে, তা হলে আর কোথাওই পারবে না। |
সংক্ষিপ্ত স্কোর |
শ্রীলঙ্কা: ২৩৮ (৫০ ওভারে) |
চণ্ডীমল ৭৫
সঙ্গকারা ৬৪
ক্রিশ্চিয়ান ৫-৩১, প্যাটিনসন ৪-৫১ |
অস্ট্রেলিয়া: ২২৯ (৪৯.১ ওভারে) |
ডেভিড হাসি ৭৪
ওয়াটসন ৬৫
মালিঙ্গা ৪-৪৯, কুলশেখরা ২-৩৮ |
|