হাসপাতালে গিয়ে লিখিত বয়ান জোগাড় তৃণমূলের
হুমকির অভিযোগ হাবরার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর উপরে ‘চাপ’ সৃষ্টির অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার পরিবারকেও লাগাতার ‘হুমকি’র মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
হাবরায় তোলাবাজদের মারে জখম মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দীপঙ্কর মিস্ত্রি বারাসত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে আসেন তৃণমূলের কয়েক জন নেতা-কর্মী। হাবরার তৃণমূল বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, দীপঙ্কর তাঁদের কাছে ‘লিখিত বয়ানে’ জানিয়েছে, ‘তোলাবাজির’ ঘটনা ঘটেনি। ‘বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে বিবাদে’র জেরেই মারধর করা হয় তাকে। এর সঙ্গে ‘রাজনীতির’ও যোগ নেই।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকে দেওয়া তার ‘বয়ান’ আইনের চোখে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “প্রাথমিক প্রমাণ মেলার পরে ধৃত দু’জনের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, মারধর-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এ ধরনের কোনও বয়ান আদালতে গ্রাহ্য হবে না।”
অসুস্থ দীপঙ্কর এখনও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ফলে কী ভাবে ওই ‘বয়ান’ সে লিখল, তা জানা যায়নি। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “ওই ছাত্রের কাছে বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেতা তাপস দাশগুপ্তেরা গিয়েছিলেন। ওঁদের কাছে ওই ছাত্র লিখে দিয়েছে, এটা তোলাবাজির ঘটনা নয়। বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে টাকা চাওয়া নিয়ে গণ্ডগোল। এর মধ্যে রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই।”
কিন্তু তৃণমূলের এই ভূমিকা পুলিশ-প্রশাসন এমনকী দলের একাংশের মধ্যেও নানা প্রশ্ন তুলেছে।
প্রথমত, পুলিশ যেখানে তদন্ত শুরু করেছে, সেখানে তৃণমূলের ‘আগ বাড়িয়ে’ দীপঙ্করকে দিয়ে ‘বয়ান’ লিখিয়ে নেওয়ার দরকার পড়ল কেন? দ্বিতীয়ত, ঘটনাটিকে ‘লঘু’ প্রমাণ করে অভিযুক্তদের কাউকে ‘আড়াল’ করার চেষ্টা হচ্ছে কি? তৃতীয়ত, দীপঙ্কর যদি ‘স্বতঃপ্রণোদিত’ হয়ে বয়ান লিখেও থাকে, তবে ঘটনার সঙ্গে ‘রাজনীতির যোগ নেই’ বলার কারণ কী ওই কিশোরের? এ সবের কোনও স্পষ্ট উত্তর দেননি খাদ্যমন্ত্রী।
বস্তুত, ২৪ ফেব্রুয়ারি দীপঙ্করকে মারধরের পরে ওই ঘটনায় জড়িয়ে যায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা কৃষ্ণপদ দাসের নাম। অভিযুক্তদের ‘পক্ষ নিয়ে’ তিনি থানায় যান বলে অভিযোগ। কৃষ্ণপদবাবু সে সময়ে দাবি করেছিলেন, বিষয়টি ‘মিটমাট’ করতে থানায় গিয়েছিলেন তিনি। অভিযুক্তদের ‘আড়াল করার’ উদ্দেশ্যে তাঁর ছিল না। যদিও দলীয় তদন্তে কারও ‘জড়িত’ থাকার কথা জানা গেলে ‘কড়া-ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা বলেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু।
দীপঙ্করকে মারধরে জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার রাতে এক জন যুবককে মারধর করে হাবরা থানায় নিয়ে যায় জনতা। দীপঙ্করকে রেল কলোনির যে ক্লাবঘরে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়েছিল, সেই ক্লাবেরই কর্মকর্তা জয় সমাদ্দার নামে ওই যুবক। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা গভীর রাতে থানায় গিয়ে পুলিশের উপরে ‘চাপ’ সৃষ্টি করে ছাড়িয়ে আনে জয়কে। তিনিও আপাতত বারাসত হাসপাতালে দীপঙ্করের সঙ্গে একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
এ দিন তৃণমূল নেতৃত্ব দীপঙ্করের সঙ্গে দেখা করে আসার পরে অসুস্থ ছাত্রটিকে ‘ছুটি’ (ডিসচার্জ) দিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও তার মামা মৃণাল ব্যাপারি এ দিন অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের কিছু লোক হাসপাতালে গিয়ে দীপঙ্করকে ছেড়ে দিতে বলে। আমরা হাসপাতালে গিয়ে বলি, ছেলেটা এখনও ব্যথায় মাথা তুলতে পারছে না, ও তো সুস্থই হয়নি।” পরে অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দীপঙ্করকে ভর্তি রেখে দেন। হাসপাতালের সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “ছেলেটির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলেই চিকিৎসক ওকে ছুটি দিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেটি জানায়, ওর এখনও যন্ত্রণা আছে। তখন ওকে ভর্তি রাখা হয়েছে।” সুপারের দাবি, হাসপাতালে এসে কেউ ‘হুমকি’ দিয়েছে কিনা, তা তাঁর জানা নেই। মৃণালবাবু বলেন, “আমাদের উপরে নানা ভাবে হুমকি আসছে। হাসপাতালে ঘনঘন লোক দীপঙ্করের কাছে গিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমাদের বাড়িতে এসে গালিগালাজ, মারধরের হুমকি দিচ্ছে।”
ঘটনায় ‘অসন্তুষ্ট’ কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশও। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সমাদ্দার বলেন, “তৃণমূলের কিছু কর্মী বারাসত হাসপাতালে গিয়ে দীপঙ্করকে বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। ওর বাড়িতেও হুমকি দিচ্ছে।”
এত বড় ঘটনার পরে হাসপাতালে কিংবা দীপঙ্করের বাড়িতে পুলিশ পাহারা নেই কেন? পুলিশ সুপার বলেন, “কারা বাড়িতে, হাসপাতালে হুমকি দিচ্ছে তা দেখা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.