|
|
|
|
শনিবারও মিড-ডে মিলের ভাবনা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
এ বার থেকে প্রয়োজনে শনিবারেও স্কুলে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক নির্দেশ এসে পৌঁছেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। জেলাস্তর থেকে আবার ওই নির্দেশ ব্লকস্তরেও পাঠানো হয়েছে। আবার এই নির্দেশ ঘিরেই একাংশ শিক্ষকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই মিড-ডে মিলের টাকা সময়মতো পৌঁছয় না। ফলে, সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময়ে ধার করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। এই অবস্থায় শনিবার ফের মিড-ডে মিল চালু করতে হলে সমস্যা বাড়বে। মিড-ডে মিলের ভারপ্রাপ্ত জেলা আধিকারিক শাশ্বতী দাস বলেন, “এ বার থেকে প্রয়োজনে শনিবারও মিড-ডে মিল দেওয়া যেতে পারে। জেলায় এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা এসেছে। এ ক্ষেত্রে সমস্যার হওয়ার কথা নয়। কোথাও সমস্যা হলে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”
গরিব ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখী করতেই মিড-ডে মিল প্রকল্প চালু হয়েছিল। এতে সাড়াও মেলে। দেখা যায়, প্রত্যন্ত গ্রামে স্কুলে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। গোয়ালতোড়ের এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের কথায়, “আগে গরিব পরিবারের একাংশ ছেলেমেয়ে স্কুলে আসত না। বাবা-মা’ই তাদের স্কুলে পাঠাতেন না। বদলে কাজ করতে নিয়ে যেতেন। এখন ওদের অনেকেই স্কুলে আসছে। সংশ্লিষ্ট অভিভাবকেরা বুঝেছেন, পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলে গেলে অন্তত ছেলেমেয়েরা দুপুরে দু’মুঠো খেতে পাবে।” এক সময়ে জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলে শনিবারও মিড-ডে মিল দেওয়া হত। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। নানা সমস্যার কারণেই শনিবারের মিড-ডে মিল বন্ধ করা হয়। বরাদ্দ চাল পেতে সমস্যা না-হলেও এই প্রকল্পের জন্য ছাত্রপিছু যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য বলেই একাংশ শিক্ষকের মত। বরাদ্দ অর্থে সপ্তাহে পাঁচ দিন ডাল-ভাত ছাড়া আর কিছু খাওয়ানো সম্ভব নয় বলেই তাঁদের বক্তব্য। তাই, শনিবার মিড-ডে মিল দেওয়া বন্ধ হয়। খড়্গপুর এলাকার এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক বলেন, “ফের শনিবার মিড-ডে মিল দেওয়া হলে সমস্যা বাড়বে।” এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র ও অন্যান্য বিদালয়ে মিড-ডে মিল দেওয়ার উপযুক্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৫২ জন। মোট ছাত্রছাত্রী সংখ্যার ৮৫ শতাংশের জন্য চাল বরাদ্দ করা হয়। সেই হিসাবে জেলায় মাসে মিড-ডে মিলের রান্নার জন্য চাল বরাদ্দ করা হয় ১৪ হাজার ৮৮৩.৪৯ কুইন্টাল। বরাদ্দ চাল পেতে স্কুল-কর্তৃপক্ষের অবশ্য তেমন সমস্যা হয় না। এমনও ঘটনা ঘটে যে, বরাদ্দ চালের একাংশ ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে মজুত থেকে যায়। একাংশ প্রাথমিক শিক্ষকের বক্তব্য, চালের ক্ষেত্রে সমস্যা না-হলেও মিড-ডে মিল চালানোর ক্ষেত্রে অন্য বেশ কিছু সমস্যা এসে পড়ে (তেল-মশলা, সব্জি ইত্যাদি)। কখনও কখনও এই প্রকল্পের অর্থ সময়মতো এসে পৌঁছয় না। তখন দোকানে ধার করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। এখনও অনেক স্কুলে খাওয়ার জায়গা নেই। স্থানী রান্নাঘর নেই। পানীয় জলের সুব্যবস্থা নেই। মেদিনীপুর মহকুমা এলাকার অন্তর্গত এক উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমার স্কুলে ৫৫০ থেকে ৬০০ জনকে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। কিন্তু, পানীয় জল, খাওয়ার জায়গা--কোনও কিছুরই ব্যবস্থা নেই।” এ দিকে, কোন মাসে কত দিন মিড-ডে মিল দেওয়া যেতে পারে, তার একটি তালিকা আগে থেকেই তৈরি করা হয়। যেমন, প্রাথমিক স্কুল ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যথাক্রমে ২০ ও ২২ দিন মিড-ডে মিল দেওয়া যেতে পারে বলে নির্দেশ রয়েছে। একাংশ শিক্ষকের বক্তব্য, শনিবার মিড-ডে মিল দিতে হলে এই দিনসংখ্যা বাড়াতে হবে। |
|
|
|
|
|