দুটো বাড়ির মধ্যে তফাত মোটামুটি বাইশ কিলোমিটার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় বাইশ গজে উত্থান-পতন বদলে দিয়েছে দুটো বাড়ির ছবি।
এক বাড়িতে আনন্দের ছাপ। আর অন্য বাড়িতে কিছুটা ক্ষোভ ও বিষণ্ণতা।
প্রথম ছবি এশিয়া কাপে সদ্য সহ-অধিনায়ক হওয়া বিরাট কোহলির বাড়ির। দ্বিতীয়টা আপাতত ভারতীয় দলের বাইরে চলে যাওয়া বীরেন্দ্র সহবাগের।
পশ্চিম বিহারের এলআইসি কলোনির বাড়িতে বিরাটের মা সরোজ কোহলির চোখেমুখে প্রত্যাশা পূরণের আনন্দের ছাপ। আর তার থেকে প্রায় বাইশ কিলোমিটার দূরে সহবাগের সফদরজং এনক্লেভের বাড়িতে বইছে বিষণ্ণতার বাতাস। সরোজ কোহলি যেমন আজ ‘কথা বলব না, বলব না’ বলেও অনেক কিছু বললেন। আর বীরুর মা কৃষ্ণা সহবাগের অল্প কথার মধ্যেই পাওয়া গেল বিষণ্ণতার ছাপ।
বিরাটের মা যেমন বলছিলেন, “আমি কোনও দিন ছেলের ব্যাপারে কিছু বলি না। ওর বড় ভাই ও এজেন্ট এই দিকগুলো দেখে। আমি আর কী বলব! আমরা একটি মধ্যবিত্ত পরিবার। ছেলেমেয়েরা ভাল কিছু করলে মা-বাবার ভাল তো লাগেই। আমার ছেলে যা করেছে তা তো শুধু আমার একার কেন, গোটা দেশবাসীর আশীর্বাদেই হয়েছে।”
বিরাটের প্রয়াত বাবা প্রেমনাথ কোহলির কথা তুলতেই বললেন “আজ উনি বেঁচে নেই। থাকলে খুবই খুশি হতেন। তবে ওর বাবার আশীর্বাদ সব সময় দুই ভাইয়ের উপরই রয়েছে।” এর পরই অবশ্য সতর্ক করে দিচ্ছেন ভারতীয় দলের নতুন সহ-অধিনায়কের মা: “এখনই আপনারা কিন্তু ওকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করবেন না। বাচ্চা ছেলে। ওকে ওর কাজ নিঃশব্দে করতে দিন। আমার বিশ্বাস ও পারবে।”
আর সফদরজং এনক্লেভের বাড়িতে তখন বিষণ্ণতার ছায়া। শুধু তো অস্ট্রেলিয়ার ব্যর্থতা নয়, এশিয়া কাপ খেলতে যাবেন না সহবাগ এই ব্যাপারটাও যেন পরিবারের লোকজন মেনে নিতে পারছেন না। মা কৃষ্ণা সহবাগ অতি কষ্টে শুধু বললেন “বীরুর কাছে এটা নতুন নয়। আগেও বীরুর সঙ্গে এই রকম হয়েছে। আর মনে রাখবেন ভাল-খারাপ সময় সকলেরই আসে।”
বিরাটের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ মাঝে মাঝেই ওঠে। চটজলদি মাথা গরম করে ফেলেন তিনি। মা এই ব্যাপারে কিছু বলতে না চাইলেও বিরাটের কোচ রাজকুমার শর্মা বললেন “বাচ্চা বয়স থেকেই বিরাট অ্যাগ্রেসিভ নেচারের। ক্রিকেটার হিসাবেও দেখবেন খুব আক্রমণাত্মক। আর ওর বয়স এখন মাত্র ২৩। দায়িত্ব বাড়লেই সংযত হয়ে যাবে।” কোহলির মধ্যে যে নেতৃত্ব দেওয়ার একটা সহজাত ক্ষমতা আছে, তা বলছিলেন কোচ, “আমি স্কুলজীবন থেকেই ব্যাপারটা দেখেছি। আর এখন তো দেখছি অনেকেই ওকে ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসাবে চিহ্নিত করছে।”
এই যখন এক কোচের প্রতিক্রিয়া, তখন অন্য এক তারকা ক্রিকেটারের কোচ অনেক সংযত। সহবাগের অফ ফর্ম নিয়ে কোচ অমরনাথ শর্মা এ দিন শুধু বললেন, “সব ক্রিকেটারেরই এই সময়টা আসে। এ সব ব্যাপারকে বড় ক্রিকেটাররা পাত্তা দেয় না। ওরা ভাল খেলে মাঠেই সব কিছুর জবাব দেয়।”
|
এশিয়া কাপে বিরাট কোহলির সহ-অধিনায়ক হওয়া নিয়ে হঠাৎ বিতর্ক তুলে দিলেন ওয়াসিম আক্রম। প্রাক্তন পাক অধিনায়ক আজ বলেছেন, ভারতীয় দলের কয়েক জন সিনিয়র ক্রিকেটার নির্বাচকদের এই সিদ্ধান্তে মোটেই খুশি হবেন না। আক্রমের পরিষ্কার কথা, “ভারতের সহ-অধিনায়কের কাজটা যথেষ্ট কঠিন। আমার মনে হয় সহবাগ, গম্ভীরের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা নির্বাচকদের এই সিদ্ধান্তে খুশি হবে না।” কেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আক্রম। বলেছেন, “নির্বাচকদের সিদ্ধান্তে বোঝা যাচ্ছে কোহলিকে ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসাবে দেখছে ওরা। কিন্তু ঘটনা হল, সহবাগ বা গম্ভীরও ভারতের নেতৃত্ব পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। ওরা তাই মনে মনে আঘাত পাবে।” |