সম্পাদকীয় ১...
ভাষা নামক অস্ত্র
রাজনীতির লড়াইয়ে ভাষা একটি জরুরি অস্ত্র। বস্তুত, একটি অত্যন্ত জরুরি অস্ত্র। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, রাজনীতিকরা, বিশেষত ভারতীয় রাজনীতিকরা এ কথা মোটেও মনে রাখেন না। মনে রাখেন না বলিয়া তাঁহারা এমন একটি উত্তম অস্ত্রের সদ্ব্যবহারে ব্যর্থ হন। তাঁহারা ইহাও মনে রাখেন না যে, রাজনীতির যুদ্ধে নামিয়া যদি ভাষার ভুল বা অসঙ্গত প্রয়োগ হয়, তবে তাহা লক্ষ্যের দিকে ধাবিত না হইয়া ভাষা-ব্যবহারকারীর দিকেই ব্যুমেরাং হইয়া ধাইয়া আসিতে পারে। অর্থাৎ, ভাষা কেবল অস্ত্রই নহে, রীতিমত গোলমেলে অস্ত্র, দুই দিকেই তাহা সমান কাটিতে সক্ষম। কে কী ভাবে ব্যবহার করিল, তাহার উপরেই অস্ত্রের গতিটি নির্ভর করিবে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল সে দিন যে ভাবে ভারতীয় সাংসদদের অতি নিকৃষ্ট ভাষায় আক্রমণ করিলেন, চরিত্রহননের যাবতীয় চেষ্টা করিলেন, তাহাতে তাঁহার উদ্দেশ্য তো সাধিত হইলই না, উল্টাইয়া তাঁহার ও তাঁহার পক্ষাবলম্বী অন্যান্য নাগরিক নেতার বিশেষ অসম্মান-সাধন হইল। বলিবার সুযোগ ঘটিল যে, সাংসদরা নির্দোষ মানুষ নহেন ঠিকই, কিন্তু কেজরিওয়াল প্রমুখ যে নাগরিক নেতারা এই সাংসদদের বর্জন করিবার কথা বলিতেছেন, তাঁহারাও অতি দোষগ্রস্ত, হীন-স্বভাব মানুষ। বুঝা গেল, এমন অভদ্র দুর্বাক্য যাঁহারা অবলীলায় কপচাইতে পারেন, তাঁহাদের উপর ভরসা রাখিবার কোনও কারণ নাই, তাঁহাদের নেতৃত্বে সমাজ-সংস্কারের স্বপ্ন দেখিবার কোনও উপায় নাই।
ভদ্র ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত ভাবেই ভদ্র সমাজ-সংগঠনের একটি পথ। ভাষা তো কেবল সাময়িক শব্দসমষ্টি নহে, তাহার মধ্য দিয়া প্রকাশিত হয় বক্তার মানস-জগৎ। সেই মানস-জগতের হাল-হকিকত কেমন, তাহা প্রতিবেশী মানুষের জানিবার অধিকার নিশ্চয়ই আছে। বিশেষ করিয়া রাজনীতিতে বা সমাজে যাঁহারা অন্যান্য মানুষের হইয়া প্রতিনিধিত্ব করিতে চান, তাঁহাদের নিজেদের সুস্থ, ভদ্র মানসিকতার পরিচয় দিবার একটি দায় অবশ্যই রহিয়াছে। দুর্ভাষা তাই প্রতিনিধিত্বের অধিকার বিষয়েই মৌলিক প্রশ্ন তোলে। অথচ, ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক দস্তুর দাঁড়াইয়া এমন যাহাতে রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা নিরন্তর দুর্ভাষার আশ্রয় লহেন, সমানে নিজেদের ক্লিন্ন মানসিকতার পরিচয় দিয়া যান। অণ্ণা হজারের আন্দোলন যখন রাজনীতিকদের সেই ক্লিন্নতার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংশোধন চাহিয়াছিল, তখন দলমতনির্বিশেষে বহু-সংখ্যক নাগরিকই তাহাতে উদ্বুদ্ধ, আশান্বিত বোধ করিয়াছিলেন। অথচ হজারের সেনাপতি অরবিন্দ কেজরিওয়াল সেই নাগরিক আন্দোলনের চূড়ান্ত ব্যর্থতাই প্রমাণ করিলেন। প্রমাণ করিলেন, বর্তমান বা ভবিষ্যতে সক্রিয় রাজনীতিতে আসুন কিংবা না আসুন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও কিন্তু রাজনীতির ক্লিন্নতার বাহিরে বিচরণ করেন না। পুরনো কথাটিই আরও এক বার প্রমাণ হইল: সমাজই যেহেতু তাহার রাজনীতিকদের তৈরি করে, ভারতের সমাজের দুষ্ট মানসিকতা হইতেই সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা উৎসারিত হইতেছেন।
বেশ কিছু সাংসদ, বিশেষত রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদরা দাবি করিয়াছেন যে, কেজরিওয়ালের বক্তব্য ভারতীয় গণতন্ত্রের অপমান, দেশের গর্বের প্রতিষ্ঠান সংসদের অবমাননা। তাঁহার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকিবার কথাও হইতেছে। এ সবই অর্থহীনতার চর্চা। কেজরিওয়াল তো একা এই দোষে দোষী নহেন, তিনি এক দেশব্যাপী অসুস্থতার প্রতীক মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও এই অসুস্থতার প্রকাশ সম্প্রতি কম দেখা যায় নাই। কোনও এক ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়া যদি সেই ব্যাপক অসুস্থতার নিরাময়ের পথে একটুও আগানো যায়, তবেই একমাত্র শাস্তির কিছু অর্থ হইতে পারে। নতুবা, ইহা অকারণ সময় নষ্ট। ভদ্রতা ও সম্মানের ভাষা তৈরি করিবার দায় প্রত্যেকের, সুতরাং শাস্তিবিধানের অপেক্ষা জরুরি নেতা বা সাংসদবৃন্দ আপনি আচরি ধর্ম নীতিতে বিশ্বাস রাখিতেছেন কি না, তাহা দেখা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.