সংশোধনীতে সায় কেন্দ্রের
দুর্ঘটনায় রাশ টানতে আরও কড়া সাজা
মোবাইল কানে তন্ময় হয়ে কথা বলতে বলতে রাস্তা পেরোচ্ছেন অন্যমনস্ক পথচারী। কিংবা কানে মোবাইল গুঁজে স্টিয়ারিংয়ে বসে রাজপথে বেপরোয়া চালক। আর তা থেকে ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা।
শুধু কলকাতা নয়, এমন ঘটনা ঘটছে দেশের ছোট-বড় সব শহরে। মোবাইল ফোনের এই ব্যাধি এখন বাসা বেঁধেছে মফস্সলেও। কিন্তু কড়া সাজা না থাকায় বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। কারণ, সাজা মাত্র ১০০ টাকা জরিমানা। পশ্চিমবঙ্গই নয়, দেশের আরও কয়েকটি রাজ্য এই জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মোটর ভেহিকলস আইন সংশোধন না হলে এই ব্যাধি যে দূর হবে না, তা নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ-কর্তারা। সাত বছর আগে পাঠানো তাঁদের সুপারিশ অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিল। সংশোধিত আইনটি এ বার সংসদে পেশ করা হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরে তা গোটা দেশে কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে মোটর ভেহিকলস আইনের সংশোধন করে আইনভঙ্গকারীদের জন্য জরিমানার পরিমাণ পাঁচ গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মোবাইল বা হেডফোন কানে রাস্তা পেরোন কিংবা গাড়ি চালানোর অপরাধে জরিমানা হবে ৫০০ টাকা। এখন এই জরিমানার পরিমাণ ১০০ টাকা। বারবার অপরাধ করলেও ১০০ টাকাই জরিমানা দিতে হয়।সংশোধিত আইনে, পরবর্তী পর্যায়ে একই অপরাধ আবার করলে জরিমানা বেড়ে হবে পাঁচ হাজার টাকা।
বিপজ্জনক ভাবে রাস্তায় মোবাইল ব্যবহার ছাড়াও মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা এবং হেলমেট-সিটবেল্ট ব্যবহার না-করার অপরাধেও আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১০০ মিলিলিটার রক্তে ৩০-৬০ মিলিগ্রাম অ্যালকোহল থাকলে ছ’মাস জেল বা দু’হাজার টাকা জরিমানা হবে। অ্যালকোহলের মাত্রা এর বেশি থাকলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও দু’বছর জেল হবে। হেলমেট-সিটবেল্ট ব্যবহার না-করলে ৫০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা জরিমানা হবে।
রাজ্যের পুলিশ-কর্তারা চান কেন্দ্রীয় সরকারের এই সংশোধিত আইন অবিলম্বে কার্যকর হোক। ২০০৫ সালেই কলকাতা পুলিশের তরফে কেন্দ্রকে জরিমানার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক), এখন এডিজি (সিআইডি) সি ভি মুরলীধরও বলেন, “আমরা তখনই জরিমানার টাকা বাড়িয়ে ন্যূনতম ৩০০ কি ৫০০ টাকা রাখতে বলেছিলাম। এটা খুবই ভাল সিদ্ধান্ত।” রাজ্য পুলিশের ডিজি (ট্র্যাফিক) গৌতমমোহন চক্রবর্তী বলেন, “কেন্দ্রীয় আইন সংশোধন হয়ে জরিমানা বাড়লে এই অপরাধ কমবে বলে আমরা আশাবাদী।” কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সুপ্রতিম সরকারও জরিমানা বাড়িয়ে অপরাধ কমানোর পক্ষে।
জরিমানার অঙ্ক বহুদিন ধরে না বাড়ায় রাস্তা পেরোনোর সময়টুকু মোবাইলে কথা বলা মুলতুবি রাখতে অন্য পন্থা নিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। রাস্তা পার হওয়া বা গাড়ি চালানোর সময়ে সতর্কতার প্রচারে জনপ্রিয় গান বা আকর্ষক স্লোগানের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। যেমন মোবাইল কানে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে পথচারী তথা চালকদের জন্য কলকাতা পুলিশের বার্তা: ‘এক পলকের একটু কথা/ আরও একটু পরে হলে ক্ষতি কী?’ শিশুদের হেলমেটবিহীন অবস্থায় মোটরবাইকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বড়দের চোখ খুলতেও স্লোগান: ‘খোকাবাবু যায়/হেলমেট কোথায়?’। এ বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের চোখ টানতে রাস্তায় পোস্টার-হোর্ডিং বসানো ছাড়া সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটকেও হাতিয়ার করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে পুলিশ কর্তারাই সংশয়ে।
সংশোধিত আইন কবে কার্যকর হবে? কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, সংসদের আগামী বাজেট অধিবেশনেই নতুন আইন পাশের সম্ভাবনা প্রবল। তার পর শুধু রাষ্ট্রপতির সম্মতির অপেক্ষা।

বাড়ছে জরিমানা
• সিগন্যাল না মানলে ৫০০-১৫০০
• হেলমেট/সিটবেল্ট না পরলে ৫০০-১৫০০
• মোবাইল কানে গাড়ি চালালে ৫০০-৫০০০
• মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে ২০০০-৫০০০/ দু’বছর পর্যন্ত জেল
• গাড়ি নথিভুক্ত না হলে ২০ হাজার/ এক বছর জেল
• দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ এক লক্ষ
• দুর্ঘটনায় আহতদের ক্ষতিপূরণ ৫০ হাজার
বিপদ বাড়ছেই
মোবাইল কানে দুর্ঘটনা
২০১০-এ ৫৪৫৪
২০১১-এ ৬৪৫৬
গাড়ির সিগন্যাল লঙ্ঘন
২০১০-এ ৬৮৪৭৯
২০১১-এ ৯৩১০৮
পথচারীর সিগন্যাল লঙ্ঘন
২০১০-এ ৪৩৬৫৭
২০১১-এ ৭০২১৫
সূত্র: কলকাতা পুলিশ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.