চাষের জমিতে সেচের জল দেওয়াকে ঘিরে দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ গড়াল গুলি-বোমার সংঘর্ষে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কাতলামারি গ্রামে ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে দুই বোন-সহ তিন জন। বোমার ঘায়ে জখম অন্তত ৬ জন। পারিবারিক বিবাদ হলেও তা নিয়ে শুরু হয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূল কাজিয়া।
পুলিশ জানায়, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শুকতারা খাতুন ও তার দিদি, একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সিতারার গুলি লাগে। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে হাতে গুলি লাগে তাদের পড়শি কিশোর অরুণ রবিদাসের। সিতারা হরিশচন্দ্রপুর হাসপাতাল এবং শুকতারা ও অরুণ মালদহ জেলা হাসপাতালে ভর্তি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, আহত দুই বোনের বাবা উনসাহক শেখ এবং ওই গ্রামেরই কংগ্রেস সমর্থক বাসির আলির মধ্যে গোলমাল দীর্ঘদিনের। দু’জনের বিরুদ্ধেই মামলা ঝুলছে। পুলিশের ভয়ে দু’জনই বেশ কিছু দিন ঘরছাড়া ছিলেন। উনসাহক গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন। |
বছর খানেক আগে তৃণমূলে যোগ দেন। মাসখানেক আগে বাসির আলির পাম্প জমি থেকে চুরি হয়ে গেলে তিনি উনসাহকের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করেন। এই নিয়ে দু’জনের তিক্ততা চরমে পৌঁছয়। উনসাহক জমিতে সেচের জল দিতে পারবেন না বলে বাসির জানিয়ে দেন।
দুই পরিবারের গোলমাল মেটাতে গ্রামবাসীরা এ দিন সকালে সালিশি সভা ডাকেন। সেই সময় উনসাহকের
স্ত্রী ও ছেলেরা জমিতে জল দিতে গিয়েছেন বলে চাউর হয়ে গেলে বাসির ও তাঁর দলবল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। উনসাহকের ছেলে আলম হোসেনের অভিযোগ, “বাসির আলি বাড়িতে ঢুকে বাবাকে গুলি করতে গিয়েছিল। বাবাকে বাঁচাতে আমার দু’বোন এগিয়ে গেলে গুলিবিদ্ধ হয়।” সিতারারও দাবি, “কিছু দিন আগেই আমরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। বাসিরের দলবল বাড়িতে চড়াও হয়ে গুলি চালায়।”
বাসিরের পরিবারের লোকজনের পাল্টা অভিযোগ, উনসাহকই তাঁদের উপরে হামলা করেন। পুলিশ দু’পক্ষের দু’জনকে ধরেছে। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “সেচের জল দেওয়া নিয়ে বিবাদের জেরে দু’পক্ষ একে অপরের উপর বোমা-পাইপগান নিয়ে হামলা করে।” দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। পুলিশের দাবি, বাসির ও উনসাহক পলাতক। হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি সামসুদ্দিন মিয়াঁর অভিযোগ, “ওই এলাকায় কংগ্রেস পায়ের তলা থেকে মাটি হারিয়ে ফেলছে। সেই আক্রোশে ওরা এই হামলা চালায়।” জেলা কংগ্রেস নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাক আলম বলেন, “বাসির দলীয় সমর্থক হলেও সমাজবিরোধী। পিঠ বাঁচাতেই সে কংগ্রেসের আশ্রয় চায়। উনসাহকও সমাজবিরোধী। দু’জনকেই জেলে পুরলে এলাকায় শান্তি ফিরবে।” |