মঙ্গলবার ধর্মঘটের দিন কাজে ‘অনুপস্থিত’ সরকারি কর্মীদের তালিকা তৈরির কাজে হাত দিল রাজ্য প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশে বুধবার মহাকরণ থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত অনুপস্থিত সমস্ত সরকারি কর্মীর নামের তালিকা তৈরি শুরু হয়েছে। এ দিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। আজ, বৃহস্পতিবার রিপোর্ট জমা পড়বে বলে মহাকরণ সূত্রে খবর।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এই নির্দেশিকার পরেই অনুপস্থিত সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, সেই জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের মতে, অনুপস্থিত কর্মীদের তালিকা তৈরি করার অর্থ সরকার নিশ্চিত ভাবেই কোনও না কোনও পদক্ষেপ করার দিকে এগোচ্ছে। অন্য একটি অংশের মতে, তালিকা তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। সরকারি ভাবে অবশ্য প্রশাসনের কোনও কর্তাই এ নিয়ে মুখ খোলেননি।
ধর্মঘটের দিন কাজে না-এলে কোনও ছুটি মঞ্জুর করা হবে না বলে আগেই নির্দেশ জারি করেছিলেন মুখ্যসচিব। বলেছিলেন, আইন মেনে অনুপস্থিত কর্মীদের বিরুদ্ধে যে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। মুখ্যসচিব কিছুটা ধোঁয়াশা রাখলেও ধর্মঘটের আগের দিন মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, কাজে না-এলে চাকরিতে ছেদ পড়বে।
সরকারি হিসেবে, ধর্মঘটের দিন গড়ে ৮৪% কর্মী অফিস করেছেন। অর্থাৎ, রাজ্যের চার লক্ষ সরকারি কর্মীর মধ্যে ৬৪ হাজারের বেশি (মতান্তরে ৮০ হাজার) কর্মী অনুপস্থিত ছিলেন। এ দিনের নির্দেশে বিভিন্ন দফতর এবং জেলা প্রশাসনের কাছে সেই অনুপস্থিত কর্মীদের নাম, পদ এবং ছুটির কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। মহাকরণের খবর, প্রায় ৩০টি দফতর এ দিন রিপোর্ট পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার বাকি রিপোর্ট চলে আসবে বলে প্রশাসনের আশা।
তার পর কী হবে? ধর্মঘটের দিন হাজির কর্মীদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, সরকার কোনও ব্যবস্থা না-নিলে পরের বন্ধে আর কর্মীদের অফিসমুখো করা যাবে না। কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে এই কর্মীদের একটি অংশের মত, এক দিনের বেতন কাটা হোক। কিন্তু বেতন কাটলে কাজে গরহাজির দেখাতে হবে, যা আসলে চাকরিতে ছেদ পড়া। তাই উপস্থিত কর্মীদের অন্য একটি অংশের মতে, এক দিনের বেতন ‘জরিমানা’ করা হোক। মহাকরণের একটি সূত্র আবার বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো ‘চাকরিতে ছেদের’ দিকেই পাল্লা ভারী।
তবে সরকার ‘ব্যবস্থা’ নিলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকি ইতিমধ্যেই দিয়ে রেখেছে কর্মচারী সংগঠনগুলি। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির বক্তব্য, সরকারি কর্মীদের ধর্মঘটের অধিকার রয়েছে। তাই সরকার কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না। অন্য দিকে আইএনটিইউসি অনুমোদিত কর্মী সংগঠনের নেতা মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, যে হেতু বেশির ভাগ কর্মী ধর্মঘটের দিন হাজির ছিলেন, তাই সামান্য সংখ্যক অনুপস্থিত কর্মীর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন। তবু সরকার সেই পথে এগোলে তাঁরা আন্দোলন করবেন।
সরকারি কর্মচারীদের তালিকা তৈরি শুরু হলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে কী করা হবে, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে এ দিন জানিয়েছে শিক্ষা দফতর। ধর্মঘটের দিন অনুপস্থিতির জন্য বুধবার ছুটির দরখাস্ত দিতে যান অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। কিন্তু বহু স্কুল-কলেজেই তা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ। উচ্চশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “দফতরে এখনও এ ধরনের অভিযোগ আসেনি। তবে এমন অভিযোগ যে উঠবে, সেটা আঁচ করাই যায়। এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, সে সম্পর্কে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি।” স্কুলশিক্ষা অধিকর্তা দিব্যেন মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “ছুটির দরখাস্ত গ্রহণ না-করার কী আছে! ছুটি মঞ্জুর হবে কিনা, দরখাস্ত বিচার করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। ধর্মঘটে অনুপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ব্যাপারে সামগ্রিক নির্দেশিকা জারি করা হবে না। আলাদা ভাবে প্রত্যেকটি দরখাস্ত বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হবে পরিচালন সমিতিগুলিকে।” |