মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন তারস্বরে মাইক বাজানো বন্ধ করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে আক্রান্ত হল পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার উত্তর কুলবেড়িয়া গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ওই ঘটনায় তিনজন এস আই-সহ আট পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই তিন এস আই হলেন মহম্মদ আব্দুল গনি, উৎপলকুমার সাহা ও প্রণবকুমার দে। এঁদের মধ্যে মহম্মদ আব্দুল গনির অবস্থা গুরুতর। তাঁর নাকের হাড় ভেঙে গিয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
|
জখম আব্দুল গনি। |
জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও রুজু করা হয়েছে। অন্যদিকে গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ নির্দোষ মানুষকে মারধর করে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার জেরে পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে পুরুষেরা গ্রামছাড়া। এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক ও মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস বলেন, “ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। তবে পুলিশ যেমন আইনি ব্যবস্থা নেবে তেমনই দেখতে হবে নিরীহ মানুষ যাতে দুর্ভোগে না পড়েন।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগদার উত্তর কুলবেড়িয়া গ্রামের দাসপাড়ায় কালীপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতিবছরের মতো এ বারও গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে পুজো করছিলেন। পুজো উপলক্ষে মেলা বসেছিল। জলসারও আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই চোঙা, বক্স বাজিয়ে জোরদার জলসা শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত তারস্বরে মাইক বাজছিল। বাগদা থানার পুলিশ জানায় রাত ১২টা নাগাদ থানায় ফোন আসে দাসপাড়ায় প্রচণ্ড জোরে মাইক বাজিয়ে জলসা হচ্ছে। এতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় মাইক বাজানো নিষেধ বলে তাঁরা মাইক বন্ধ করে দন। |
এর পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্থানীয় মানুষ। কেন মাইক বন্ধ করা হল, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর বচসা বেধে যায়। বচসার মধ্যেই আচমকা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, বড় বড় পাথর ছোড়া হতে থাকে। ইট, পাথরের আঘাতে জখম হন তিনজন এস আই-সহ আটজন পুলিশকর্মী। কারও বুকে, কারও পেটে আঘাত লাগে। আহতদের বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পরে বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বনগাঁর এসডিপিও জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গুরুতর আহক এস আই মহম্মদ আব্দুল গনিকে পরে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুধবার সকালে দাসপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের পরিবেশ থমথমে। বেশিরভাগ বাড়িতেই পুরুষেরা নেই। জলসার মঞ্চ খুলতে থাকা ডেকরেটরের এক কর্মী জানান, এখানকার বেশিরভাগ মানুষই নিরক্ষর। মাধ্যমিকের সময় যে মাইক বাজানো নিষেধ তা তাঁরা জানতেন না। স্থানীয় এক মহিলা বলেন, “পুলিশ এলে ওরা পুলিশকে বলেছিল আর মাইক বাজাবে না। ক্ষমাও চায়। তার পরেও পুলিশ জোর করে মাইক খুলে ফেলে। এতে গ্রামের মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের উপরে চড়াও হয়।” স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্তী দাসের অভিযোগ, “পুলিশ দোষীদের না ধরে নিরীহ লোকদের উপরে চড়াও হয়। নির্দোষ লোকদের ধরে নিয়ে গিয়েছে। আমার বাড়ির দরজা লাথি মেরে ভেঙে দেয়।”
এ ব্যাপারে বাগদার ব্লক তৃণমূল সভাপতি, “দিলীপ ঘোষ বলেন, “একে তো মাধ্যমিকের সময় মাইক বাজানো নিষেধ। তারপর পুলিশের উপরে হামলা চালানো গুরুতর অন্যায় হয়েছে।” জেলা পরিষদে বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক ও স্থানীয় সিপিএম নেতা সঞ্জয় দত্ত চৌধুরী বলেন, “আমি ওখানকার মানুষকে বলেছিলাম মাধ্যমিকের সময় মাইক না বাজানোর জন্য। কিন্তু ওদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কিন্তু তা বলে পুলিশের উপরে হামলা চালানো ঠিক হয়নি। তবে পুলিশের আরও একটু ধৈর্য দেখানো উচিত ছিল।” ধৃতদের বুধবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। |