|
|
|
|
ট্রাফিকের হাল ফেরাতে ফের বৈঠক মেদিনীপুরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
‘হাল’ ফেরাতে বৈঠক হয়। বৈঠকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু, সেই ‘সিদ্ধান্ত’ আর কার্যকর হয় না! অগত্যা, সেই ‘বেহাল’ই থেকে যায় মেদিনীপুর শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা।
রাজ্যে পালাবদলের পর, গত বছর জুনে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার ‘হাল’ ফেরাতে এক জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শহরের এ বার একমুখী যান চলাচল চালু হবে। আগের দু’টি সিগন্যাল সচল করার পাশাপাশি, আরও দু’টি ট্রাফিক সিগন্যাল চালু হবে। শহরের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অন্তত দশ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবে পুরসভা।
কিন্তু, কোথায় কী!
এই সব সিদ্ধান্ত তো কার্যকর হয়নি, উল্টে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা যেন আরও ভেঙে পড়েছে। নিত্য যানজটে নাজেহাল শহরবাসী। যাঁরা কাজ হাতে নিয়ে জেলা সদরে আসেন, দুর্ভোগে পড়েন তাঁরাও। প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। ক’দিন আগেই রাঙামাটি এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় এক স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে তাই ফের জরুরি বৈঠক ডাকলেন মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক সুরজিৎ রায়। কাল, শুক্রবার এই বৈঠক হবে। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার ‘হাল’ নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ মহকুমাশাসক বলেন, “শহরের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আরও কিছু পদক্ষেপ করা জরুরি। বৈঠকে সে সব নিয়ে আলোচনা হবে।” |
|
পুলিশের সামনেই বিপজ্জনক ভাবে অটোয় যাতায়াত। কেরানিতলায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
মেদিনীপুর শহরে দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে একের পর এক বহুতল। শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তায় ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যাও আগের থেকে বেড়েছে। ফলে যানজট সমস্যা লেগেই রয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ২০০৭ সালে কেরানিতলায় ট্রাফিক সিগন্যাল পরিষেবা চালু হয়। দু’বছরের মাথায় ২০০৯ সালে এলআইসি মোড়েও সিগন্যাল বসানো হয়। কিন্তু দু’টি সিগন্যালই দীর্ঘ দিন ‘সচল’ নেই। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ট্রাফিক ব্যবস্থা ‘ঢেলে সাজাতে’ গত বছরের ১৬ জুন এক বৈঠক করেন মহকুমাশাসক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগে থেকে থাকা দু’টি সিগন্যাল দ্রুত সচল করা হবে। পরে শহরের গোলকুঁয়াচক ও কালেক্টরেট মোড়ে আরও দু’টি ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হবে। শহরের রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রনের জন্য পুরসভা অন্তত দশ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবে। এঁদের মাইনে দেবে পুরসভাই। শহরের মধ্যে চালু হবে একমুখী যান চলাচল ব্যবস্থা। কেরানিতলা-জগন্নাথমন্দির-নতুন বাজার হয়ে সব বাস-লরি বেরোবে। অন্য দিকে, কেরানিচটি-আবাস হয়ে সব বাস-লরি শহরে ঢুকবে। গোলকুঁয়াচক থেকে কর্নেলগোলা হয়ে ধর্মা পর্যন্ত রাস্তায় কোনও বড় গাড়ি চলাচল করবে না। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকেল ৩টে থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত শহরের মধ্যে লরি ঢুকতে পারবে না। কিন্তু, এই সব সিদ্ধান্ত শুধু খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে। শহরবাসীর অভিযোগ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতিতে পুরসভাও কোনও পদক্ষেপ করেনি।
মেদিনীপুর শহরের গোলকুঁয়াচক থেকে কর্নেলগোলা হয়ে ধর্মা পর্যন্ত রাস্তা এমনিতে সঙ্কীর্ণ। রাস্তার ধারে হাইস্কুল রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত লেগেই থাকে। ধর্মার উপর দিয়েই চলে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এই সড়কের উপর দিয়েই বড় গাড়ি চলাচল করে। খড়গপুর কিংবা কেশপুরের দিক থেকে যে সমস্ত গাড়ি শহরে ঢোকে তার অধিকাংশই ধর্মা পেরিয়ে কর্নেলগোলার উপর দিয়ে যাতায়াত করে। শহরবাসীর অভিযোগ, ট্রাফিক কনস্টেবলদের একাংশ চালকদের কাছ থেকে পাঁচ-দশ টাকা নিয়ে শহরের বড় গাড়ি ঢোকার ‘ছাড়পত্র’ দেন। ফলে, নতুনবাজার, বটতলা, কেরানিতলা, এলআইসি মোড়, সিপাইবাজার প্রভৃতি এলাকায় প্রায়শই যানজট সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে ছোট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রেও গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই। কিছু অটো বেপোরোয়া ভাবে চলাচল করে। বাড়তি যাত্রী তোলে। তাই দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ফের বৈঠক ডাকলেন মহকুমাশাসক। বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা স্থানীয় বিধায়ক, পুরপ্রধান, কোতোয়ালি থানার আইসি-সহ পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের।
এ বারের বৈঠকের পর শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার ‘হাল’ পাল্টায় কি না, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|