নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ধর্মঘটের দিন বাস না-চালানোয় ওই রাতেই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা সমস্ত মিনিবাসের চাকার হাওয়া খুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ বার বাসচালকদের থেকে জোর করে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া ও ধর্মঘটের দিন কাজে না-আসায় বাসস্ট্যান্ডের কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠল তাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেনের মূল ফটকের কাছে। তবে, এই ঘটনা জানতে পারার পরেই জেলার তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় হাওড়া সিটি পুলিশ কমিশনারকে অবিলম্বে ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অরূপবাবু এ দিন বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে যদি কোনও দলীয় কর্মী জড়িত থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশকে বলেছি, অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে। এ সব অন্যায় কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বটানিক্যাল গার্ডেনের স্ট্যান্ডে কাজে এসে বাসচালক ও কর্মীরা দেখেন, স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা মিনিবাস ও ভূতল পরিবহণের সব ক’টি বাসেরই চাকার হাওয়া খোলা। |
চাকার হাওয়া বার করে দেওয়া হয়েছে মিনিবাসের। বুধবার, হাওড়ায়। — নিজস্ব চিত্র |
স্ট্যান্ডের সামনেই দলের ঝান্ডা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। এই ঘটনার কথা বাসচালকেরা তাঁদের মালিকদের জানান। মালিকেরা তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে বাস চালানোর নির্দেশ দেন। অভিযোগ, বাসচালকেরা স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কাছে গেলে ওই নেতারা তাঁদের মুচলেকা দিতে বলেন। কয়েক জন মুচলেকা দিয়েও দেন।
এ দিন বি গার্ডেন-ধর্মতলা রুটের এক বাসচালক ছত্রধর পণ্ডিত অভিযোগ করেন, “ধর্মঘটে কাজে না-আসার জন্য যেমন আমাদের বাসের চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়, তেমনই ওরা একটা খাতায় আমাদের দিয়ে তৃণমূলে যোগদানের মুচলেকা লিখিয়ে নেয়।” রবীন মাজি নামে এক বাসকর্মী বলেন, “ধর্মঘটের দিন না-আসায় আজ ওরা ৩০-৪০ জন যে ভাবে বাসের স্টার্টার-সহ কয়েক জনকে মারধর করল, তাতে আমরা আতঙ্কিত। এর পরে তৃণমূলে যোগ না দিয়ে উপায় কী?”
এলাকার বাসিন্দারা জানান, ধর্মঘটের দিন কাজে না-আসা নিয়ে এ দিন সকাল থেকে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে চাপান-উতোর চলে। দু’পক্ষের মারপিটও হয়। ফলে সকাল থেকেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যায় পড়ে কয়েকশো মাধ্যমিক পরীক্ষাথর্ ও নিত্যযাত্রীরা। কয়েক গুণ ভাড়া দিয়ে পরীক্ষার্থীদের ট্যাক্সি করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হয়।
সিটু প্রভাবিত বি গার্ডেন-ধর্মতলা মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ হরপ্রসাদ ঘোষ বলেন, “ওই স্ট্যান্ডে শ্রমিক সংগঠন আমাদেরই দখলে। তৃণমূল এখন ওই স্ট্যান্ড দখল করতে চাইছে। তাই গোলমাল পাকাচ্ছে।”
এলাকার তৃণমূল নেতা জয়নারায়ণ ফাদিকার এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা ধর্মঘটের দিন যানবাহন সচল রাখতে চাইছিলাম। তবে বাসের চাকার হাওয়া আমরা খুলিনি। সিটুই এ কাজ করে আমাদের নামে চাপাচ্ছে। মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটাও সিটুর বানানো।” |