দেবাশিস দাসের লেখা ‘সাঁত্রাগাছি’ (৬-২) বিষয়ক খবরটি নিয়ে কয়েকটি কথা গত বছর এবং এ বছরে আসা পাখির সংখ্যার তুলনামূলক আলোচনা ১০,৩৬৩ বা ৬,৭১৫ এই সংখ্যা দুটোই অর্থহীন, যদি না জানা যায় ঠিক কী ভাবে এই সংখ্যায় পৌঁছানো হল।
কোনও একটা জায়গায় একটা বিশেষ দিনের কিছুক্ষণ সময় ক’টা পাখি দেখা গেল, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রিক ভাবে জায়গাটিতে পাখির আসা, পাখির থাকা ও তাদের আচার-আচরণ পর্যালোচনা। সেই হিসাবে দেখলে প্রাথমিক সঙ্কট কাটিয়ে, আমাদের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি সত্ত্বেও, সাঁত্রাগাছিতে আশাতীত পাখি এসেছে এবং স্বচ্ছন্দে থেকেছে।
সাঁত্রাগাছির সংখ্যা দিয়েই শুধু এর ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। দেখতে হবে পুরো পশ্চিমবঙ্গের মোট পরিযায়ী পাখির সংখ্যা, দেখতে হবে গণনার দিনের উষ্ণতা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা, মেঘলা না পরিষ্কার আকাশ, এই সব কিছুর তুলনামূলক অবস্থা। সংখ্যাটা আমাদের চাই, আর যে ভাবে কুশল মুখোপাধ্যায় ও প্রকৃতি সংসদ এ কাজটি করে, সে ভাবেই সারা ভারত জুড়ে করা হয়ে থাকে। আমার বক্তব্যে যে ১০,০০০-এর বেশি পাখির কথা বলা হয়েছে, সেই সংখ্যাও ওই একই পদ্ধতি মেনে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু, সংখ্যার ব্যাখ্যাটা উপরে বর্ণিত প্রতিটি মানক অর্থাৎ উষ্ণতা, আর্দ্রতা ও অন্যান্য জায়গায় পাখির সংখ্যা এই সবগুলো মাথায় রেখেই করতে হবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ১০,৩৬৩ বা ৬,৭১৫ এই দু’টি গণনার দিনই ঘটনাস্থলে ছিলাম। কর্মপদ্ধতি ছিল নির্দিষ্ট এবং নির্ভরযোগ্য।
|
আসলে নিয়ম অনুযায়ী সমীক্ষার দিন বা গণনার দিনের সংখ্যা নথিবদ্ধ হোক, তার সঙ্গে নথিবদ্ধ হোক আরও অন্তত বেশ কিছু তথ্য যাতে, ওই সংখ্যার প্রকৃত মূল্যায়ন করা যায়। নেওয়া হোক, আরও একাধিক দিনের সংখ্যাতত্ত্ব, যাতে একটা গড় পাই যেটা তুলনামূলক ভাবে আমাদের একটা সঠিক সংখ্যার কাছে নিয়ে যাবে।
আপনাদের লেখাটিতে, বন দফতরের বক্তব্য হিসাবে, বাড়ি-ঘর, বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ, নিকাশি নালার বর্জ্য প্রভৃতিকে পাখির সংখ্যার সঙ্গে জড়ানো হয়েছে। আমি চার বছরের পাখির সংখ্যাতত্ত্ব দিলাম। ২০০৯২৫৮১, ২০১০ ৫০৬৮, ২০১১১০৩৬৩, ২০১২ ৬৭১৫।
পাখির কম বা বেশি আসা একটা আন্তর্জাতিক বিষয়। যেখান থেকে আসছে আর যেখানে আসছে, সেখানে নানা বিষয়ের উপর নির্ভরশীল একটি ঘটনা। অনেক গভীর, দীর্ঘমেয়াদি, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে করা গবেষণাই এর প্রকৃত কারণের দিকে আলোকপাত করতে পারে।
সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া, নেতিবাচক ভাবনা আমরা সমর্থন করি না। গণনার দিনের হিসাবে সাঁত্রাগাছিতে এ বার পাখি কম দেখা গেছে। কিন্তু সামগ্রিক বিচারে সাঁত্রাগাছিতে এ বারের পরিস্থিতি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। রেড-ক্রেস্টেড পোচার্ড এই বছরই প্রথম এসেছে সাঁত্রাগাছিতে। বৈকাল টিল সাত বছর পর আবার এসেছে। একসঙ্গে দেখা গেছে ৬টা পর্যন্ত কোম্ব ডাক, ফালভাস হুইস্লিং টিল। এই সকল তথ্য কিন্তু ৬,৭১৫ এই সংখ্যার মধ্যে কোথাও বিবৃত নয়। গৌতম চক্রবর্তীর বক্তব্যানুযায়ী ‘কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও পক্ষীপ্রেমী এ বার মরসুমের শুরুতেই ঝিলের কচুরিপানা পরিষ্কারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু তা করেও লাভ হয়নি।’ আমার প্রশ্ন, অন্য কী হলে বলা হত লাভ হয়েছে। আমরা মরসুমের এক্কেবারে শেষে বাধ্য হয়ে ঝিল পরিষ্কারে উদ্যোগী হয়েছিলাম।
অর্জন বসুরায়। নেচার মেটস, কলকাতা-৩২ |