|
|
|
|
|
আরপিএফ বিল ফেরাতে বলে বার্তা মমতার |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
|
অকংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের আপত্তিকে গুরুত্ব দিয়ে আরপিএফ আইন সংশোধন না করার জন্য রেলমন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে কংগ্রেসকেও বার্তা দিলেন, জোট বেঁধে কেন্দ্র-বিরোধী লড়াইয়ের রাস্তা থেকে তিনি সরছেন না।
প্রথমে নরেন্দ্র মোদী, পরে আজ নবীন পট্টনায়ক ও জয়ললিতা রেল মন্ত্রকের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, নতুন আইন রাজ্যের এক্তিয়ার লঙ্ঘন করবে। মওকা বুঝে দু’পক্ষকে লড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্র-বিরোধী নতুন জোটের জল্পনাও অঙ্কুরে বিনাশের কৌশল নেয় কংগ্রেস। বিষয়টি অনুধাবন করেই আজ বেশি রাতে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন মমতা। বলেন, রাজ্যগুলির আপত্তির নিরিখে এখনই আরপিএফ বিল যেন না আনা হয়।
রেলমন্ত্রী থাকার সময়েই আরপিএফ আইন সংশোধন করে রেল স্টেশন ও ট্রেনের নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের জিআরপি-র পরিবর্তে আরপিএফ-কে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। নেত্রীর উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করতে আরপিএফ আইন সংশোধনে বিল আনার পরিকল্পনা করছিলেন দীনেশ। কিন্তু এই প্রচেষ্টাকে রাজ্যের এক্তিয়ার লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করে কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে প্রতিবাদ-পত্র পাঠিয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তার পরে আজ আরপিএফ বিল রদের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। মোদীর পাশাপাশি এঁদেরও যুক্তি, সংবিধান অনুসারে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভাবে রাজ্যের এক্তিয়ারে। স্টেশন ও রেলপথের নিরাপত্তার দায়িত্বও রাজ্যেরই। আরপিএফ বিশেষ ক্ষমতা পেলে বিমানবন্দর বা কোনও শিল্পসংস্থার নিরাপত্তার দয়িত্বে থাকা বাহিনীও একই দাবি তুলতে পারে। সুতরাং, আরপিএফ আইন সংশোধন করা চলবে না।
এর আগে কেন্দ্রের শরিক হয়েও জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি) নিয়ে কেন্দ্র-বিরোধিতায় অকংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে বৈঠকেও রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এনসিটিসি রূপায়ণ বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন মমতা। সরকার সে দাবি মেনে কালই ঘোষণা করেছে, আপাতত এনসিটিসি রূপায়ণ হচ্ছে না।
কিন্তু যে মমতা সে বার অকংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনিই এ বার অকংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের জেহাদের মুখে পড়ায় কংগ্রেস স্বাভাবিক ভাবেই খুশি হয়। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারিকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাফ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীদের উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর বদলে রেলমন্ত্রীকেই চিঠি দেওয়া। কারণ, তিনিই সংবিধান সংশোধনে উদ্যোগী হয়েছেন।” অর্থাৎ আরপিএফ আইন সংশোধনের দায় কংগ্রেস নিতে নারাজ।
এনসিটিসি-বিরোধী লড়াইয়ের হাত ধরে মমতার নেতৃত্বে নবীন, নীতীশ, জয়ললিতারা একটি কেন্দ্র-বিরোধী অক্ষ গড়ে তুলছেন, এমন জল্পনা শুরু হয়েছিল। তাই আরপিএফ বিল নিয়ে মমতার সঙ্গে বাকি অকংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের লড়াই বাধুক, এটাই কংগ্রেস চেয়েছিল। সে বিষয়টি বুঝেই মমতা রাতে দীনেশকে ফোন করে বিলটি আপাতত না আনার নির্দেশ দেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা না করে আরপিএফ বিল নিয়ে এগোনোয় কিছুটা উষ্মাও প্রকাশ করেন তৃণমূল নেত্রী।
এ দিকে, বিতর্কিত এনসিটিসি নিয়ে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টায় নেমেও বিরোধিতায় পড়তে হল কেন্দ্রকে। রাজ্যগুলির আপত্তি দূর করতে ৯ মার্চ রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের ডিজি-দের বৈঠক ডেকেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রীকে ফের চিঠি লিখে নবীন প্রশ্ন তুলেছেন, এনসিটিসি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেই যখন কথা বলা হয়নি, তখন মুখ্যসচিব, ডিজিদের ডেকে কী লাভ?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম অবশ্য আজ বলেছেন, ৯ তারিখের বৈঠকে সমাধানসূত্র মিলবে বলে তিনি আশাবাদী। মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকা হবে কি না, তা ওই বৈঠকের ফলাফলের উপরই নির্ভর করবে বলে তিনি জানিয়েছেন। কোনও রাজ্যে গিয়ে তল্লাশি চালানো বা সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের অধিকার এনসিটিসি-কে দেওয়ার মধ্যে কোনও ভুল নেই বলেও আজ আবার যুক্তি দিয়েছেন চিদম্বরম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা-ই বলুন, কংগ্রেস তথা সরকারের একটা বড় অংশ কিন্তু মনে করছে, স্বরাষ্ট্রসচিবের ডাকা বৈঠকে বিশেষ কিছু লাভ হবে না। কারণ মমতা-সহ যে সব মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্তরে আপত্তি তুলেছেন, তাঁরা মুখ্যসচিব, ডিজি-দের কথা শুনে বিষয়টিতে সায় দিয়ে দেবেন, এমনটা হয় না। |
|
|
|
|
|