শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দেশব্যাপী ধমর্ঘটে পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্সের অনেক চা বাগানে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। মালবাজার সহ তরাই-ডুয়ার্সের শতাধিক চা বাগানে অবশ্য কাজ হয়নি। দার্জিলিং পাহাড়ের তিনটি মহকুমায় ধর্মঘটের কোনও প্রভাবই পড়েনি। ডুয়ার্সে ৭৯টি এবং তরাইতে ১৯টি চা বাগানে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। তবে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “পাহাড় তো বটেই তরাই ডুয়ার্সের বেশির ভাগ বাগানেই স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। সে জন্য চা শ্রমিকদের ধন্যবাদ।” দার্জিলিং পাহাড়ের সর্বত্র বাজারঘাট, দোকানপাট, স্কুল কলেজ খোলা ছিল। একমাত্র ব্যাঙ্ক, জীবন বিমা নিগম ছাড়াও সমস্ত সরকারি, বেসরকারি দফতর খোলা ছিল। চা বাগান, সিঙ্কোনা বাগানে সকাল থেকেই শ্রমিকেরা কাজে নেমে পড়েন। দার্জিলিঙের ম্যাল, গাঁধী রোড, কালিম্পঙে ডম্বর চক, কার্শিয়াং স্টেশন লাগোয়া মূল বাজারে ধমর্ঘটের কোনও প্রভাবই ছিল না। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে ধমর্ঘটের বিরোধিতার কথা পাহাড় জুড়ে প্রচার করা হয়। মোর্চা বিরোধী সিপিআরএম ধমর্ঘটে নৈতিক সমর্থন জানালেও রাস্তায় নামেননি। |
মোর্চার শ্রমিক সংগঠনের নেতা সুরজ সুব্বা বলেন, “সর্বত্র জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। চা বাগান খোলা ছিল। আমরা বন্ধের বিরোধিতার কথা আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিলাম। এদিন ধর্মঘটে ডুয়ার্সের শতাধিক বাগানে শ্রমিক উপস্থিতির হার অন্যান্য দিনের মতো ছিল বলে বাগান কর্তৃপক্ষগুলি দাবি করেছে। নাগরাকাটা, বানারহাট, বাগরাকোট, ওয়াশাবাড়ি, কালচিনি, বীরপাড়া-সহ নানান এলাকায় বহু বাগানে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। একমাত্র মালবাজার মহকুমার ধর্মঘটের কিছুটা প্রভাব পড়েছে। রাঙামাটি, গুডহোপ, নিদাম, কুমলাই, সরস্বতীপুর, কৈলাশপুর, বামন ডাঙ্গা, বিন্নাগুড়ি, রেডব্যাঙ্ক, মোঘল কাটা, বামনডাঙা টন্ডু-সহ কয়েকটি বাগান বন্ধ ছিল। চা বাগান মালিক সংগঠন টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (টাই) উত্তরবঙ্গের সচিব রণজিৎ দত্ত বলেন, “অধিকাংশ বাগানে কাজ হয়েছে।” ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “আগে ধর্মঘটে অধিকাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিতেন না। এবার ছবিটা পাল্টেছে।” একসময় তরাই ডুয়ার্সে সিটু ও আরএসপি’র ডাকা ধর্মঘটে চা বাগানে ব্যাপক প্রভাব পড়ত। মোর্চার বিরোধিতা করে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ বাগানে সংগঠন তৈরি করায় ধস নামে বাম সংগঠনগুলিতে। সাম্প্রতিককালে সংগঠনটি বামেদের বিরোধিতা করায় ধমর্ঘট সফল করতে পারেনি অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলি। তবে পরিষদের মধ্যে ফাটল দেখা দেওয়া এবং পরস্পর বিরোধী মন্তব্য ধমর্ঘটের প্রভাব ফেলেছে। সেই সঙ্গে বাগানে কাজে না গেলে ৮৫ টাকা মজুরি মিলবে না ভেবে ভোরবেলায় দল বেঁধে এবার শ্রমিকরা কাজে গিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রম দফতরের যুগ্ম সচিব মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “চারটি চা বাগান ছাড়া সর্বত্র কাজ হয়েছে। কোথাও কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদ ধমর্ঘটের বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটেনি। তবে ডুয়ার্সের জন বার্লা গোষ্ঠী এর বিরোধিতা করে বাগান স্বাভাবিক রাখার আর্জি জানান। পরিষদের ডুয়ার্সের রাজ্য সম্পাদক রাজেশ লাকড়া বলেন, “ধমর্ঘট হয়েছে। আদিবাসী সমাজ যে আমাদের দিকেই আছেন তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।” এদিন জলপাইগুড়ি জেলার চা বলয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের একাংশ সামিল হয়েছে বলে দাবি করেছে ধর্মঘটী শ্রমিক সংগঠনগুলি। শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক তথা সিটুর জেলা সম্পাদক জিয়াউল আলম বলেন, “সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়েছে। কিছু বাগানে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা ধর্মঘটে সামিল হয়েছে। তাঁদের সকলকে অভিনন্দন জানাই।” যৌথ মঞ্চ সূত্রে জানানো হয়েছে, সরস্বতীপুর, গেঁদরাপাড়া, রায়পুর, নিউল্যান্ডস সহ কয়েকটি চা বাগানে তৃণমুলের সংগঠনের কর্মীরাও ধর্মঘটে সামিল হন। তৃণমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী ওই দাবিকে অবাস্তব বলে মন্তব্য করেছেন। |