গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কোনওরকম ঢিলেমি করছে না। সরকারি প্রক্রিয়া শেষ হলেই জিটিএ বিল রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে আজ বিমল গুরুঙ্গ-রোশন গিরিদের জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর আশ্বাস, সব ঠিকঠাক চললে দু’তিনদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির কাছে বিলটি পাঠানো হবে।
আগামিকাল, বুধবার দার্জিলিংয়ের জিমখানা ক্লাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রয়েছে। মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক-সহ নানা পরীক্ষা চলার কারণে হলঘরে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মোর্চা নেতৃত্বও উপস্থিত থাকবেন সেখানে। তার আগে কেন্দ্রের এই ‘আশ্বাস’ মোর্চা নেতাদের অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে। গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠকে গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন দ্রুত রূপায়ণের অনুরোধ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর জিটিএ বিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। দার্জিলিংয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পরে সাত মাস কেটে গেলেও সেই বিল এখনও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়নি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, দ্রুত প্রক্রিয়াটি শেষ করা হবে।
দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য আজ মোর্চার নেতারাও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দরবার করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নিয়মমাফিক ওই বিলটি খতিয়ে দেখে মতামত জানানোর জন্য ১৭টি মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আজ বিকেল তিনটের মধ্যেই সবাইকে মতামত জানানোর সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এ বার তা খতিয়ে দেখে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, দু-তিন দিনের মধ্যে এটা হয়ে যাবে। ওঁরা যত দ্রুত সম্ভব চেষ্টা করছেন।” কেন্দ্র যে প্রথম থেকেই জিটিএ গঠনের বিষয়ে সহযোগিতা করছে, সে কথাও মোর্চা-নেতাদের এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন চিদম্বরম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, একবার রাষ্ট্রপতি বিলে সিলমোহর দেওয়ার পরে যাতে আর কোনও ধরনের সমস্যা না দেখা দেয়, সে কথা মাথায় রেখেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির মতামত নেওয়া হচ্ছে।
মোর্চার তরফ থেকে আজ মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে চিদম্বরমের কাছে দরবার করা হয়। এক, দার্জিলিং-তরাই-ডুয়ার্স এলাকার সংরক্ষিত অরণ্যের অধিকার জিটিএ-র হাতে তুলে দেওয়া হোক। দুই, গোর্খা যুবকদের আধাসেনা ও রাজ্য পুলিশে নিয়োগের সময় শারীরিক মাপজোকের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হোক। তিন, দেশের সমস্ত গোর্খা নাগরিকদের জন্য একটি বিশেষ শংসাপত্র দেওয়া হোক। শেষের দু’টি বিষয়ে চিদম্বরম সম্মতির কথা জানালেও সংরক্ষিত অরণ্য জিটিএ-র আওতায় আনার বিষয়ে কোনও আশ্বাস দেননি। এ বিষয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের আপত্তি রয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর। বিমল গুরুঙ্গ অবশ্য যুক্তি দেন, “বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের আওতাতেও সংরক্ষিত অরণ্য দেওয়া হয়েছে।” এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না-দিলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে চিদম্বরম ইতিমধ্যেই ফাইলে সই করে দিয়েছেন বলে রোশন গিরি জানান। তাঁর দাবি, “দেশের সব গোর্খাদের পরিচয়পত্র হিসেবে একটি শংসাপত্র দেওয়ার অধিকারও দেওয়া হবে জিটিএ-কে।” |