চাপে পড়ে ‘মহিলা মুখ’ বাড়াতে সক্রিয় সিপিএম
কে তাদের লড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তায় দলের মধ্যেই ক্ষোভ। দুয়ের জেরে শেষ পর্যন্ত দলীয় নেতৃত্বে মহিলা মুখ আরও বাড়াতে ‘সক্রিয়’ হল আলিমুদ্দিন।
রাজ্য সম্মেলনে সদ্যগঠিত রাজ্য কমিটিতে মহিলাদের অনুপাত বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০%। সংখ্যার বিচারে এ বার রাজ্য কমিটিতে মহিলার সংখ্যা ৮ থেকে এক জন বেড়ে হয়েছে ৯। কিন্তু কমিটির মোট সদস্যসংখ্যা যে হেতু কমে হয়েছে ৮৩, তাই আনুপাতিক হারে মহিলা মুখকে তুলনামূলক ভাবে আগের চেয়ে বেশি ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হয়েছে। সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটিতে যে সাতটি জায়গা এখনও খালি, তার মধ্যে আরও মহিলা মুখ আসতে চলেছে। দলের মহিলা সংগঠনের নেতৃত্ব সেই মর্মেই ‘আশ্বাস’ পেয়েছেন রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে।
প্রমীলা বাহিনী শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া অবশ্য সিপিএমের ভিতরেই অনেক ধাপ পেরিয়েছে। দলের নেতৃত্বে কেন আরও বেশি করে মহিলাদের তুলে আনা হবে না, তা নিয়ে অতীতে পার্টি কংগ্রেসে সরব হয়েছিলেন বৃন্দা কারাট। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের ঘরণী বৃন্দাই এখন পলিটব্যুরোয় একমাত্র মহিলা মুখ। কেন্দ্রের মতো রাজ্য স্তরেও নেতৃত্বে যাতে মহিলাদের ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হয়, তার জন্য বৃন্দার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই এগিয়েছেন মহিলা সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব। আর এরই পাশাপাশি সদ্যসমাপ্ত রাজ্য সম্মেলনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিনিধিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রশ্ন তুলেছেন যে দল রাজ্যে মমতার বিরুদ্ধে লড়ছে, তাদের মহিলা ব্রিগেড এত ‘দুর্বল’ হলে কী করে চলে? আপদে-বিপদে গেরস্থের হেঁশেলে ঢুকে যাওয়ার জন্য মহিলা মুখের চেয়ে বড় ‘তাস’ তো আর হয় না! এক শিক্ষক-প্রতিনিধি যেমন প্রস্তাব দিয়েছেন, ‘মায়েদের টিম’ যদি স্কুলগুলোতে ‘বিকল্প আন্দোলন’ গড়ে তোলে, ক্ষতি কী? সর্বত্র ঝান্ডা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার তো কিছু নেই! রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও জবাবি ভাষণে মেনেছেন, মহিলাদের দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘জড়তা’ আছে ভীষণ।
সংগঠনে মহিলাদের ঠিকমতো ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নে ক্ষোভ জানাতে গত বার রাজ্য সম্মেলনের পর বিমানবাবুর সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন রাজ্য কমিটির মহিলা সদস্যেরা। তার পরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে সুযোগ পান শ্যামলী গুপ্ত। এ বার অবশ্য কমিটি গঠনের ধরন দেখে তাঁরা আপাতত ‘সন্তুষ্ট’। তবে বৃন্দা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তামিলনাড়ু রাজ্য সম্মেলনের ফাঁকে যোগাযোগ করা হলে বৃন্দা বলেছেন, “সংগঠনের বিষয়ে এখন কিছু বলব না।” রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর একমাত্র মহিলা সদস্য এবং গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সভানেত্রী শ্যামলীদেবী অবশ্য বলছেন, “এ বার রাজ্য কমিটিতে ১০% মহিলা এসেছেন। জেলা কমিটিগুলিতেও গড়ে ১১-১২% করে মহিলা এসেছেন। মহিলাদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রে মানসিক জড়তাটা অনেকটা কাটানো গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
বস্তুত, বিমানবাবু দলের অন্দরে যে ‘জড়তা’র কথা বলেছেন, সেটাই একমাত্র কারণ বলে মনে করছেন না মহিলা নেতৃত্ব। যেমন, কলকাতা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী এবং কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য রূপা বাগচির কথায়, “সাধারণ ভাবে সক্রিয় রাজনীতিতেই এখন মহিলারা কম আসছেন। পরিমাণগত একটা সমস্যা আছে বলেই গুণগত ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ছে। এত দিন এই সংগঠনে কাজ করে আমার মনে হয়েছে, আমাদের দল যথেষ্ট প্রগতিশীল। সেখানে মহিলাদের নিতে মানসিক জড়তা খুব বড় কারণ নয়।” প্রসঙ্গত, গত বারের কলকাতা পুর-নির্বাচনে বামেদের মহিলা প্রার্থীদের ‘পারফরম্যান্স’ ভাল হওয়ায় বিরোধী দলনেতার পদে মহিলা মুখ বসানোরই দাবি উঠেছিল সিপিএমে। তার পরেই রূপা বিরোধী দলনেত্রী হন। সদ্য কলকাতায় একটি জোনাল কমিটিরও সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন জেলা ও রাজ্য সম্মেলনে সিপিএমের নিচু তলার যে মনোভাব ধরা পড়েছে, তার নির্যাস নানা ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে বিরোধী নেত্রী হিসাবে মমতা ‘গ্রহণযোগ্যতা’ অর্জন করেছিলেন। মহিলাকুলের সমর্থন তাঁর বড় ভরসা। এই জায়গাটায় সিপিএম যথেষ্ট পিছিয়ে। পরিচিত মহিলা মুখ হিসাবে নতুন কেউ উঠে আসছেন না। রূপা মানছেন, তাঁদের বিপরীতে প্রধান দলটির সর্বময় নেত্রী এক জন মহিলা বলেই তাঁদের দলের ‘ঘাটতি’ বেশি করে চোখে পড়ে। তবে পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল নেত্রীর পর ওই দলে আর মহিলা-পুরুষ নেই! উনিই সব। আমাদের রাজ্য কমিটিতে এ বার ১০% মহিলা। সেটা ভাল ঘটনা।” মমতা অবশ্য লোকসভা ভোটের প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করে বলেছিলেন, তাঁকে ‘মহিলা’ হিসাবে দেখা ঠিক নয়।
শ্যামলীদেবী, বনানী বিশ্বাস, আরতি দাশগুপ্ত, রেখা গোস্বামী, মিনতি ঘোষ, মিতালি কুমার, দেবলীনা হেমব্রম, রমা বিশ্বাস আগের রাজ্য কমিটিতেই ছিলেন। এ বার নতুন অন্তর্ভুক্তি অঞ্জু কর। দলের নিচু তলার প্রশ্ন, প্রয়োজনে এঁরা গোটা রাজ্যে ছুটে বেড়াতে পারবেন তো? টক্কর কিন্তু মমতার সঙ্গে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.