স্কুলে পৌঁছনোর জন্য মঙ্গলবার সকাল ৬টায় কাটোয়ার বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলেন কেতুগ্রামের আমগড়িয়া গ্রামের একটি স্কুলের শিক্ষিকা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশের সাহায্যে কোনও রকমে মাদার ডেয়ারির একটি গাড়িতে ওঠেন তিনি। সেই গাড়িতেই পৌঁছন স্কুলে। কিন্তু স্কুল তো এখন মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র। তাই ক্লাস নেওয়ার প্রশ্ন নেই। ছাত্রছাত্রীরা আসছে না। সরকারি নির্দেশিকার ঠেলায় স্কুলে শুধুই হাজিরা দেওয়া!
সরকার ফরমান জারি করেছিল, মঙ্গলবার, ধর্মঘটের দিন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও ছুটি মিলবে না। চাকরি বাঁচাতে এ দিন হাজিরা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কেউ কেউ সোমবার রাতেই নিজেদের স্কুল বা কলেজের কাছাকাছি কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর বাড়িতে অথবা অতিথিশালায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। অনেকে উঠেছিলেন হোটেলে। কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলে চাঁদা তুলে ভাড়া করেছিলেন আস্ত অ্যাম্বুল্যান্স। সব মিলিয়ে এ দিন স্কুল-কলেজে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা ভালই ছিল। তবে প্রায় কোথাওই ক্লাস হয়নি। মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হয়েছে অনেক স্কুলেই। অন্যান্য শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের তাই ছুটি। ফলে পঠনপাঠনের বালাই নেই।
হিন্দু, সংস্কৃত কলেজিয়েট, আলিপুর মাল্টিপারপাস কলকাতার এমন অনেক সরকারি স্কুলেই শিক্ষকদের উপস্থিতি এ দিন ছিল ৯০ শতাংশেরও বেশি। ছাত্রছাত্রীরা না-আসায় কোথাও কোনও ক্লাস হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করে ফিরে গিয়েছেন। যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, যোধপুর পার্ক বয়েজের মতো সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন। তবে ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতির কারণে সেখানেও পঠনপাঠন হয়নি।
কলেজে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের টেস্ট হয়ে গিয়েছে। কোথাও প্রথম বর্ষের ক্লাস চলছে, আবার কোথাও চলছে প্রথম বর্ষের টেস্ট। সেগুলিরও দিন বদল হয়েছে আগেই। অধিকাংশ কলেজেই এ দিন ক্লাস হয়নি। কারণ শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাজির হলেও ছাত্রছাত্রীদের দেখা নেই। সরকারি কলেজগুলিতে সব শিক্ষক-শিক্ষিকাই উপস্থিত ছিলেন বলে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির দাবি। তবে সেখানেও ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতির কারণে পঠনপাঠন হয়নি। খাস কলকাতাতেই আশুতোষ কলেজ, আচার্য গিরিশচন্দ্র বোস কলেজ, সিটির মতো অনেক কলেজেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রায় ১০০ শতাংশ উপস্থিত থাকলেও ছাত্রছাত্রীরা গরহাজির ছিলেন।
রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কেন্দ্রীয় অফিস বিকাশ ভবনে কর্মীদের হাজিরা ভালই ছিল বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি নিজেই এ দিন বিভিন্ন বিভাগে ঘুরে ঘুরে কর্মীদের উপস্থিতি দেখেন বলেও মন্ত্রী জানান। তাঁর কথায়, “নতুন এই কর্মসংস্কৃতিতে কর্মীরাও খুশি।” |