|
|
|
|
বেপাত্তা সিটু |
হলদিয়া ‘সচল’, দাবি শুভেন্দুর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
বন্ধ-ধর্মঘটে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এত দিন সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের ‘দাপট’ দেখতেই অভ্যস্ত ছিল। বামপন্থী সংগঠনের ডাকা যে কোনও বন্ধ-ধর্মঘট ‘সফল’ করতে লক্ষ্মণবাবুই ছিলেন ‘শেষ কথা’। পরিবর্তিত রাজ্যপাটে মঙ্গলবার বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের দিনে হলদিয়া ‘নিয়ন্ত্রণ’ করলেন কিন্তু তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। হলদিয়া ‘সচল’ রাখতে মরিয়া ছিল তৃণমূল। চাপে হোক বা কাজ বাঁচানোর দায়অস্থায়ী শ্রমিক-নির্ভর এই শিল্পাঞ্চলে থমথমে মুখে, সাইকেলেই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে শ্রমিকরা এসেছেন কারখানায়। লক্ষ্মণবাবু যেমন নন্দীগ্রাম-মামলায় জড়িয়ে আত্মগোপন করেছেন, বাম শ্রমিক সংগঠন ‘সিটু’ও তেমন দিনভরই রইল অন্তরালে।
বরং দিনভরই হলদিয়ায় রইলেন শুভেন্দু। বন্দর, ইন্ডিয়ান অয়েল-সহ বেশ কিছু কারখানাও পরিদর্শন করলেন দলের স্থানীয় বিধায়ক শিউলি সাহাকে সঙ্গে নিয়ে। সংস্থাগুলিতে উপস্থিত কর্মীদের শুভেচ্ছাও জানালেন সাংসদ-বিধায়ক। শুভেন্দুর দাবি, “আগে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে লক্ষ্মণ শেঠরা গা-জোয়ারি ধর্মঘট করতেন। |
|
হলদিয়ার মিৎসুবিশি কারখানায় কাজে যোগ শ্রমিকদের। ছবি তুলেছেন আরিফ ইকবাল খান |
এ বারের ধর্মঘট ব্যর্থ হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হলদিয়ায় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি আমরাই সহানুভূতিশীল। আমাদের প্রতি তাঁদেরও আস্থা রয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, প্রতিটি কারখানাতেই ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এমনকী যে হলদিয়া পুরসভা এখনও বামেদের হাতে, পুরকর্মীদের অধিকাংশই তৃণমূল সংগঠনে যোগ দেওয়ায় খোলা ছিল পুরভবনও।
এমনিতে পথে যানবাহন কিন্তু কমই ছিল। দোকানপাটও অংশত বন্ধ ছিল। কিন্তু সকাল আটটা থেকে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বন্দরে সকাল ছ’টার শিফ্টে কর্মী-উপস্থিতি তুলনামূলক ভাবে কম হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেখানেও হাজির হতে থাকে কর্মীরা। শিপিং, মেরিন-সহ ৫টি বিভাগেই এ দিন ‘স্বাভাবিক’ কাজ হয়েছে বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের। বন্দর-শ্রমিক তরণীচরণ সাঁতরা, আনন্দ সামন্তদেরও বক্তব্য, যথারীতি কাজ হয়েছে। কাজে আসতে কেউ কোথাও বাধাও দেয়নি। ইন্ডিয়ান অয়েলেও স্বাভাবিক ছিল কর্মী-উপস্থিতি। মিৎসুবিশির সিনিয়র ম্যানেজার (এইচআর) সঞ্জয় রাজগুরুর বক্তব্য, “রুটিন অনুযায়ীই কাজ হয়েছে। উৎপাদনে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি।” হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালে উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলেও কর্মী-উপস্থিতিতে যে সামান্য ঘাটতি ছিল, তা সংস্থা-সূত্রেই জানা গিয়েছে। মহকুমায় মোটের উপর জনজীবন স্বাভাবিক ছিল বলেই জানিয়েছেন মহকুমাশাসক শিল্পা গৌড়িসারিয়া। তবে কয়েক জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দেভোগ পঞ্চায়েত অফিসে ইচ্ছুক কর্মীদের কাজে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় সিপিআই কর্মী পরমেশ্বর মাইতি ও সুশীল সামন্তকে গ্রেফতার করা হয়। ব্রজলালচক বাজারে গণ্ডগোলে বাধানোর অভিযোগে শ্যামল উত্থাসীনি নামে এক সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য দিকে, মহিষাদলের জগপুর শশীভূষণ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিল মণ্ডল সামান্য দেরিতে স্কুলে আসায় তাঁকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্কুলেরই পরিচালন সমিতির সম্পাদক তৃণমূল নেতা পলাশ হালদারের বিরুদ্ধে। নিখিলবাবুকে মহিষাদল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। পলাশবাবুদের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠলেও শাসকদলের লোকজনকে আটক বা গ্রেফতারকিছুই করেনি পুলিশ। ব্লক তৃণমূল সভাপতি সোমনাথ মাইতি অবশ্য নিখিলবাবুকে মারধরে দলের কেউ যুক্ত নয় বলেই দাবি করেছেন। সিটুর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নেতা সুদর্শন মান্নার বক্তব্য, “ধর্মঘটে বাস চলেনি। রাস্তাও ফাঁকা ছিল। তা হলে কারখানায় কী ভাবে কর্মী উপস্থিত হল!” তাঁর দাবি, “ধর্মঘট সফল হয়েছে। আমাদের কর্মীদের মারধর করে দমানোর চেষ্টা হয়েছে। পুলিশ শাসকদলের হয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের কর্মীদের গ্রেফতার করেছে।” |
|
|
|
|
|