ব্লাটারের বার্তা: মোহনবাগানের প্রতি মান্নার আনুগত্য আধুনিক ফুটবলে বিরল |
মোহনবাগান মাঠে মান্নাদাকে নিয়ে যাওয়া অবশ্যই উচিত ছিল |
সোমবার ভোরেই খবর পেলাম মান্নাদা আর নেই। আমার মান্নাদা, মোহনবাগান আর পুরো ভারতের শৈলেন মান্না। মনটা কেঁদে উঠল। মনে পড়ে গেল মাত্র ক’দিন আগের কথা। ভেসে উঠল অনেক পুরনো স্মৃতি। আর কষ্ট পেলাম, মান্নাদার প্রাণের চেয়েও প্রিয় ক্লাবে তাঁর মরদেহ গেল না শুনে।
মান্নাদা ছিলেন আমার পরমাত্মীয় বা স্নেহপ্রবণ অভিভাবক। হয়তো দু’টোই। দু’জন একসঙ্গে কাটিয়েছি ৬৪ বছর। শেষ বার তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম মাস ছয়েক আগে। কিন্তু ওঁর সঙ্গে আর বৌদির সঙ্গে ফোনে কথা হত প্রায়ই। ক’দিন আগেই মান্নাদা ফোনে বলেছিলেন, “মোহনবাগান ক্লাবে যাস তো? ক্লাবে যাবি।” এই কথা বলার পর দিন থেকেই তো ওঁর কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল। ভাবতে অবাক লাগছে, যে লোকটা শেষ দিন পর্যন্ত বিছানায় শুয়েও মোহনবাগানের খোঁজখবর নিলেন শেষ যাত্রায় তাঁর আসা হল না ক্লাবের তাঁবুতে।
শৈলেন মান্নার মতো ফুটবলার মোহনবাগানের সম্পদ। জাতীয় সম্পদ। আর মোহনবাগানের প্রতি যে ভালবাসা তাঁর ছিল তাতে ক্লাব তাঁবুতে তাঁর নিথর দেহের না পৌঁছনোতে মনে হচ্ছে কোথাও খামতি থেকে গেল। আমার তো মনে হয়, শেষ বারের মতো এই জাতীয় সম্পদের জাতীয় ক্লাবের দরজা একবার ছুঁয়ে যাওয়া উচিত ছিল। অবশ্যই উচিত ছিল। প্রাক্তন ফুটবলার এবং ক্লাব কর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়লে মনে হয় এই বিতর্ক এড়ানো যেত। দায়িত্বটা দু’পক্ষেরই থাকা দরকার। প্রাক্তনদের নিয়ে মিলনোৎসব বা কোনও ডিনারের আয়োজনে নতুন-পুরনোদের ডাকার মধ্যে দিয়েই মনে হয় সমস্যার সমাধান সম্ভব।
দুঃখ এটাই নির্বিবাদী মান্নাদার শেষ যাত্রার সঙ্গী হয়ে থাকল বিতর্ক। আমার কাছে তো মান্নাদা শুধু ফুটবলার নন, দিশারিও বটে। বলাইদাস চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে যেদিন প্রথম মোহনবাগানে আসি সেই দিন থেকেই তিনি আমার গাইড। বড়দাদা। মোহনবাগান থেকে জাতীয় দল। কত ঘটনা, কত স্মৃতি। এক বার মোহনবাগানের জুনিয়র দলের হয়ে খেলতে গিয়ে মাথা ফেটে গেল। বিহ্বল হয়ে ভাবছি, ফুটবলটা আদৌ আমি আর খেলব কি না! হঠাৎ এলেন মান্নাদা। গায়ে হাত রেখে বললেন, “কী রে? ফুটবল খেলতে এসেছিস চোট লাগবে না তা আবার হয় নাকি?” তার পর নিজের নাকের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, “এই দেখ, নাক বেঁকে গেছে। এই দাঁতটাও ভেঙেছ ফুটবল খেলতে গিয়ে। আমি কি খেলা ছেড়েছি?” ঠিক যেন নিজের দাদা। মান্নাদার ছোটদের আগলে রাখার এই পরিচয় পেয়েছি জাতীয় দলেও। যখন প্রথম জাতীয় দলে সুযোগ পেলাম, তখন তো মান্নাদা আমার উপদেষ্টা। অলিম্পিক থেকে এশিয়াডসব কিছুই মনে আছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ।
মান্নাদা মারা যাওয়ার দিন ছিলাম কলকাতার বাইরে। ফুটবল প্রসারে এক অনুষ্ঠানে ছিলাম অসমে। শেষ যাত্রায় সামিল না থাকার এই দুঃখটা সারা জীবন থেকে যাবে। |