|
|
|
|
ব্লাটারের বার্তা: মোহনবাগানের প্রতি মান্নার আনুগত্য আধুনিক ফুটবলে বিরল |
কারও উপর আমাদের ক্ষোভ অভিমান নেই, বলছেন স্ত্রী-কন্যা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ফিফা প্রেসিডেন্ট শেপ ব্লাটারের বিশেষ বার্তা এসে পৌঁছল এক দিনের মধ্যেই। “উনিশ বছর ধরে মোহনবাগানে খেলার ব্যাপারটা শৈলেন মান্নাকে সত্যিকারের কিংবদন্তি করেছে। বিশেষ করে আধুনিক ফুটবলে এই ধরনের আনুগত্য বিরল হয়ে আসছে।” লিখেছেন ব্লাটার। এশীয় ফুটবল সংস্থার অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট ঝ্যাং জিলংও পাঠালেন শোক বার্তা।
আর আন্তর্জাতিক ফুটবল কর্তাদের মান্না-বন্দনার মধ্যেই মোহনবাগান ও শৈলেন মান্নাকে নিয়ে নতুন বিতর্ক অন্য দিকে মোড় নিল। মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রী আভা মান্না ও মেয়ে নীলাঞ্জনা বলে দিলেন, “মোহনবাগানে না নিয়ে যাওয়ার পিছনে কোনও ক্ষোভ, অভিমানের প্রশ্নই নেই। কেন, কারা এ সব রটাল বুঝতে পারছি না। এত বিতর্ক হওয়া ঠিক নয়।”
শৈলেন মান্নার শোকসভা শনিবার বিশাল ভাবে করতে চায় মোহনবাগান। সেখানে কি আপনারা যাবেন? নীলাঞ্জনা জবাব দেন, “ঠিকমতো ডাকা হলে নিশ্চয়ই যাব। তবে মা তো কোথাও যান না। আমি যাব।” মোহনবাগানের কার্যকরী কমিটির সদস্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতে যেতে পারেন। কিন্তু মোহনবাগান কর্তাদের ক্ষোভ এ দিনও কমেনি। সচিব অঞ্জন মিত্র বলেন, “আমরা অত্যন্ত আঘাত পেয়েছি। আমরা চেয়েছিলাম, ২৯ তারিখ শোক মিছিল করে মান্নাদাকে নিয়ে যেতে। কিন্তু নীলাঞ্জনা আমার সামনেই ওর মাকে বলেছে, মোহনবাগানে গেলে আমার চার মাসের লড়াই ব্যর্থ হয়ে যাবে। মান্নাদার মেয়ে ঐতিহাসিক ভুল করেছে। এ বার কথা ঘোরাতে গেলে আরও ভুল বলবে।” শৈলেনবাবুর কন্যা কিন্তু বলছেন, “আমি অঞ্জনদাকে মোহনবাগানে না যাওয়া নিয়ে কিছুই বলিনি।” আভাদেবীও তাই বললেন। |
|
শৈলেন মান্নার ছবির সামনে মেয়ে নীলাঞ্জনা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
ঠিক কী কারণে মোহনবাগান তাঁবুতে গেল না শোক মিছিল? শৈলেনবাবুর স্ত্রীর মন্তব্য, “বিভিন্ন জায়গায় মরদেহ ঘুরে ঘুরে নিয়ে যাওয়া, মালা দেওয়ায় আমার খুব আপত্তি। তাই প্রথমে ঠিক ছিল, সোজা শ্মশানে যাবে মরদেহ। ওঁর কাছে ছোটবড় কোনও বিভেদ ছিল না। এত জায়গা থেকে অনুরোধ এসেছে, কাউকে আর দুঃখ দিতে চাইনি।” পাশ থেকে নীলাঞ্জনার সংযোজন, “বাবার কথাবার্তায় একটা জিনিস বুঝতাম। উনি জন্মভিটেকে গুরুত্ব দিতেন। আর যদি সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া যেত। শোকযাত্রায় এই দুটো ইচ্ছেপূরণ হয়েছে দেখে উনি নিশ্চয়ই খুশি হবেন।” শেষ যাত্রার ব্যাপারে ওঁর কি কোনও নির্দেশ ছিল? শৈলেন মান্নার মেয়ের জবাব, “না। কিছু বলেননি। উনি শুধু হাওড়ার জন্মভিটের প্রতি ভালবাসার কথা বারবার বলতেন। আর আমাদের পরিবারের সংস্কার ছিল, সূর্যাস্তের আগে শেষকৃত্য করা। তাই পিস হেভনেও রাখায় আপত্তি ছিল।”
মোহনবাগান সমর্থকদের আবেগের কথা তুলে আভাদেবী বলছিলেন, “মোহনবাগান সমর্থকরা যদি কোনও দুঃখ পান, তা হলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।” একই কথা বলে নীলাঞ্জনার মন্তব্য, “আমরা তো শুধু মোহনবাগানকে ‘না’ বলিনি, আরও অনেক ক্লাবকে ‘না’ বলতে হয়েছে। বাবা ছিলেন গোটা ভারতের। আমরা একটু বিভ্রান্ত ছিলাম, কী করব। উদ্ধার করেন মমতাদি। উনিই বলেন, রবীন্দ্রসদনে সবার জন্য রাখা হলে কেমন হয়? মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বাবা সরকারি জায়গায় সম্মান পেলেন। উনি নিজে মিছিলে হাঁটলেন। এ জন্য তো মোহনবাগান সমর্থকদের গর্ব হওয়া উচিত।”
শোকযাত্রার প্রথমার্ধে শৈলেন মান্নার দেহে জড়ানো ছিল ইস্টবেঙ্গলের পতাকা। সেই প্রসঙ্গে তুললে তাঁর কন্যার উত্তর, “ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ওটা বাড়িতে এসে দিয়ে গেছিলেন। অত খেয়ালই করিনি। মোহনবাগান কর্তারাও বাড়িতে ছিলেন। ওঁদেরও কেউ যদি তখন মোহনবাগান পতাকা দিতেন, তা হলে সেটাও অবশ্যই পাশাপাশি থাকত। রবীন্দ্রসদনে যা ছিল।”
এ দিকে শৈলেন মান্নার শেষ জীবনের অবহেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তুলসীদাস বলরাম প্রচুর লোকের ফোন পাচ্ছেন। বলরাম এ দিন বলেন, “সুকুমার সমাজপতি ফোন করে বলল, আপনি যা বলেছেন, তাতে অনেকটা একমত। আমি যা বলেছি, প্রাক্তনদের স্বার্থেই।” |
|
|
|
|
|