কোহলির ব্যাটে অবশেষে ধোনিদের শ্যাম্পেন-উৎসব |
অস্ট্রেলিয়ায় আড়াই মাস থাকার মধ্যে এই প্রথম শ্যাম্পেন-উৎসব পালিত হল ভারতীয় ড্রেসিংরুমে। আর যাঁর ব্যাটে সেই উৎসব-পালন সম্ভব হল তাঁর নাম বিরাট কোহলি।
অথচ চূড়ান্ত হ্যাপা সামলে মঙ্গলবার মাঠে নামতে হয়েছিল কোহলিকে। সিডনি থেকে ভারতীয় দলের লাগেজ আসতে আসতে টিম বেরিয়ে পড়ে হোটেল থেকে। দেখা যায় কোহলির নিজস্ব জার্সি পর্যন্ত নেই। সব সময়ই ‘স্পেয়ার জার্সি’ রেখে দেওয়া হয় যদি আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দরকার পড়ে। সেখান থেকে বের করে কোহলিকে জার্সি দেওয়া হয়।
শুধু কি কোহলি একা? চোট-আঘাতে জর্জরিত টিমের অবস্থাও এত খারাপ ছিল যে, ম্যাচের আগে মাঠেই টিম মিটিং করতে হয়।
অভিশপ্ত সফরের চূড়ান্ত মোড়ে সামনে ছিল অবিশ্বাস্য একটা লক্ষ্য, ৪০ ওভারে ৩২১ রান!
যখন ক্রিজে গিয়েছিলেন, সহবাগ-সচিন আউট। আর একটা উইকেট পড়া মানে রান তাড়া করায় পাহাড়প্রমাণ চাপ হয়ে যাবে। রবি শাস্ত্রী থেকে ইয়ান চ্যাপেল, সকলেরই ভবিষ্যদ্বাণী অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে কখনওই এই ম্যাচ ৪০ ওভারের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়। কিন্তু মোড় ঠিকই ঘোরালেন বিরাট কোহলি। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৮৬ বলে ১৩৩ নট আউটের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। পাওয়া গেল ফাইনালে টিকে থাকার ‘লাইফলাইন।’ আর দিনের শেষে? অভিশপ্ত সফরে ফিরে এল খুশির হাওয়া, বহু দিন পরে ড্রেসিংরুমে খোলা হল শ্যাম্পেন। ভারতীয় দল এখন চলে যাচ্ছে ব্রিসবেন। সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করবে ফাইনালের ভাগ্যে কী লেখা আছে তা দেখার জন্য। ম্যানেজার বিশ্বরূপ দে ফোনে বললেন, “টিম ব্রিসবেন গিয়ে প্র্যাক্টিসও করবে।” বোঝাই যাচ্ছে দলের মনোভাবটাই পাল্টে দিয়েছে বিরাট কোহলির একটা ইনিংস।
ইনিংস দেখে ধোনি বলছেন, “জীবনের সেরা ওয়ান ডে জয়গুলোর একটা। সেরা ওয়ান ডে ক্রিকেট দেখছিলাম। রান তাড়া করায় আমরা দুর্দান্ত পারফর্ম করেছি। যখন ৪০ ওভারে ৩২১ দরকার, খুব ভাল শুরু এবং আগাগোড়া সেটা ধরে রাখা খুব কঠিন। সেটাই আমরা করেছি।” ভারতের জয় ত্রিদেশীয় সিরিজে ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখল। আগামী ২ মার্চ গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া। ওই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা হারলে ভারত ফাইনালে চলে যাবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া হারলে ভারতের অভিযান শেষ। টাই হলে বা ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হলেও পয়েন্টের বিচারে শ্রীলঙ্কা ফাইনালে যাবে।
|
মাত্র ৩৬.৪ ওভারে ম্যাচ শেষ, ইয়ান চ্যাপেল বলে ফেলেছেন, “এই সফরে এত বড় বিপর্যয়ের মধ্যেও এই ছেলেটিই ভারতীয় ক্রিকেটের মুখ। ভারতের ভবিষ্যৎ।” চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে এই মুহূর্তে তিন দেশ মিলিয়ে সর্বোচ্চ স্কোরার বিরাট। রান করেছেন ৩৬৪। ম্যান অব দ্য ম্যাচ বিরাট বলছেন, “টিমের জয়। ম্যাচটা জিততেই হত, আবার ৪০ ওভারে ৩২১ তুলতে হত। এটা পেরেছি বলে প্রমাণ হচ্ছে আমাদের টিমের চরিত্রটা কীরকম। কী ভাবে আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পারি।”
বিরাট জানাচ্ছেন, গত কয়েকটা ম্যাচের ভুলগুলো এই ম্যাচে শুধরে নিতে চেয়েছিলেন, “২০ বা ৩০ করার পরে আগের কয়েকটা ম্যাচে ভুল করছিলাম। সব বলই ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলতে চাইছিলাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটা সব সময় হয় না। জেতাটা বিশেষ একটা মুহূর্ত, আমার খেলা জীবনের সেরা ওয়ান ডে ইনিংস।” বলে দিচ্ছেন, ধরে নিয়েছিলেন দুটো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলছেন। “শেষ দশ ওভারে ১০০ বাকি থাকলে সেটা সম্ভব, আমরা জানতাম। আসলে ম্যাচটাকে দুটো টি-টোয়েন্টি খেলছি ধরে নিয়েছিলাম।” সঙ্গে যোগ করছেন, “গৌতমকে বলেছিলাম, আমি পারব, সেই বিশ্বাস আমার আছে। ব্যাপারটা ছিল একজন একটা দিক ধরে রাখবে, অন্য জন মেরে স্ট্রাইকটা রোটেট করবে। সেটাই করেছি।” স্বীকার করছেন, অধীর আগ্রহে আগামী শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। “ওই ম্যাচে আমি অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার জয় চাইব।” |