নিজস্ব সংবাদদাতা • দেবাশিস দাশ |
এ যেন উলটপুরাণ!
যে কোনও দল বন্ধ ডাকলেই যে পুরসভার দরজায় আগের দিন থেকে তালা পড়ে যেত, কর্মীদের দেখা মিলত না, মঙ্গলবার শিল্প ধর্মঘটের দিন সেই হাওড়া পুরসভাতেই হাজিরা দিলেন ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ কর্মচারী। কংগ্রেস প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনের দাবি, গত ৩৪ বছরে বামফ্রন্টের আমলে যা ঘটেনি, তা ঘটেছে বাম শ্রমিক সংগঠনের ডাকা শিল্প ধর্মঘটের দিনেই। তা-ও আবার ২৮ বছর ধরে বামফ্রন্ট শাসিত পুরবোর্ড ক্ষমতায় থাকার পরে। এটাই পরিবর্তন। অন্য দিকে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর মতে, এই ঘটনা ঘটেছে কর্মচারীদের চাকরি যাওয়ার আতঙ্কে।
শিল্প ধর্মঘটের দিন পুরসভা ও সরকারি অফিসগুলিতে কর্মচারীদের উপস্থিতি ছাড়া কার্যত ‘বন্ধে’র পুরনো চিত্র ফিরে এসেছিল হাওড়ায়। বালি থেকে বটানিক্যাল গার্ডেন, সর্বত্র অধিকাংশ বাজার-দোকান ছিল বন্ধ। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল চোখে পড়ার মতো কম। রাস্তাঘাট ছিল সুনসান। বেসরকারি বাস চলেছে হাতে গোনা। ট্যাক্সি, অটো চলেনি। হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে সরকারি বাস চলাচল করতে দেখা গেলেও দূরপাল্লার বাস প্রায় ছিলই না। হাওড়া স্টেশনে সকালের দিকে ট্যাক্সি মিললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা-ও উধাও হয়ে যায়। |
ধর্মঘটীদের তাড়া করেছে তৃণমূলের ঝান্ডাধারীরা। মঙ্গলবার, হাওড়ায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী |
সমস্যায় পড়েন দূরপাল্লার ট্রেনযাত্রীরা। তাঁদের হেঁটে হাওড়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসতে হয়। তবে হাওড়া স্টেশনে ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। যাত্রীরা হাওড়ায় নামার পরে ট্যাক্সি বা অটো না পেলেও বাসস্ট্যান্ডে পর্যাপ্ত সংখ্যায় সরকারি বাস মজুত থাকায় তাঁদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়নি। সকাল ১১টায় রাজধানী এক্সপ্রেস হাওড়ায় এসে পৌঁছলে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের নির্দেশে যাত্রীদের জন্য তিনটি সরকারি বাসের ব্যবস্থা করা হয়। মন্ত্রী নিজে হাওড়া স্টেশনে এসে ওই যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।
তার আগে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ মদনবাবু যান শিয়ালদহ স্টেশনে। তখন বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেন পৌঁছেছে। কিন্তু ট্যাক্সি না পাওয়ায় ট্রেনযাত্রীরা স্টেশনেই আটকে ছিলেন। মন্ত্রীর নির্দেশে তাঁদের জন্য বিকল্প বাসের ব্যবস্থা করা হয়। ব্যবস্থা করা হয় ১০০টি অটোরও। মদনবাবু অভিযোগ করেন, শিয়ালদহ স্টেশনে প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ অবৈধ ভাবে দখল করে রয়েছে সিপিএম। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন তিনি।
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, এ দিন শিয়ালদহ মেন লাইন, বনগাঁ ও ডানকুনি শাখায় কোথাও অবরোধ হয়নি। তবে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ডায়মন্ড হারবার লাইনে ওভারহেড তারে কলাপাতা
ফেলে দেওয়ায় কিছুক্ষণ ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়।
এ দিনের শিল্প ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে হাওড়া শহরাঞ্চলে কোথাও কোনও উত্তেজনা না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি জায়গায় ধর্মঘট সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে বচসা বাধে। হাতাহাতিও হয়। বেলা ১২টা নাগাদ হাওড়া চটকল বন্ধ করা নিয়ে তৃণমূল ও সিপিএম সমর্থকের মধ্যে বচসা বাধে। ইট ছোড়াছুড়ি ও একটি বাস ভাঙচুর হয়। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে নামে। প্রায় একই সময়ে শিবপুরে পুরসভার ৪০ নম্বর ওয়ার্ড অফিসের মধ্যে তৃণমূল সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন কল্যাণ রায় ও সঞ্জয় সাঁতরা নামে দুই সিপিএম নেতা। অভিযোগ, ওই দুই নেতাকে অফিসের মধ্যে ফেলে পেটানো হয়। পরে তাঁদের গুরুতর আহত অবস্থায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। |