হাজিরা ভাল হলেও ‘কর্মহীন’ দিন
ফিস, দোকানপাট, স্কুল সবই খোলা। বাস চলছে। কিন্তু লোক নেই রাস্তায়। সরকারি অফিসগুলিতে হাজিরা ভালই। কিন্তু কাজকর্মের ‘চাপ’ নেই। সোমবার রাতে কিছু সরকারি কর্মী অফিসে থেকে গিয়েছিলেন। শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে এই হল হাওড়া-হুগলির চিত্র। সঙ্গে দু’একটি বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। গ্রেফতার কয়েক জন।
হাওড়া জেলায় বন্ধ মোটের উপর শান্তিপূর্ণ থাকলেও জয়পুরের ঝিখিরা বাসস্ট্যান্ডে ১১টি বাসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ এক দল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক এসে বাসগুলি চালাতে বলেন। জনা কয়েক কন্ডাক্টর ও চালক হাজির ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বচসা বাধে। অভিযোগ, এর পরেই বাসগুলিতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বাসমালিক সংগঠনের পক্ষে দেবাশিস পালুই বলেন, “প্রতিবারই আমরা কন্ডাক্টর ও চালকদের হাতে বাস চালানোর বিষয়টি ছেড়ে দিই। এ বারও তা করা হয়েছিল। পরে শুনি বেশ কিছু বাসে ভাঙচুর করা হয়েছে।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রদীপ দাস বলেন, “আমরা বাস মালিকদের সঙ্গে বাস চালানোর ব্যাপারে আলোচনা করেছিলাম। তবে কাউকে জোর করা হয়নি।
উলুবেড়িয়া এসডিও অফিস। আরামবাগ শহর।
পরে শুনি দুষ্কৃতীরা বাসগুলিতে ভাঙচুর চালিয়েছে।” ঘটনার তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দিন বন্ধে বিভিন্ন সরকারি দফতর, স্কুল কলেজে হাজিরা ছিল প্রায় ৯৫ শতাংশের মতো। তবে বহু স্কুল কলেজে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা হাজির থাকলেও ছাত্রছাত্রীরা ছিল না।
আরামবাগে মহকুমাশাসকের দফতরে ৭৫ জন কর্মীর মধ্যে গরহাজির ছিলেন মাত্র ২ জন। বিভিন্ন ব্লকের কর্মীদের মধ্যেও প্রায় সকলেই হাজির বলা চলে। এক সরকারি কর্মী বললেন, “অন্য দিন বরং আরও কম লোক আসে। কেউ না কেউ ছুটি নেয়। কিন্তু এ দিন দায়ে পড়ে সকলেই আসার চেষ্টা করেছেন।” অফিসে হাজিরা স্বাভাবিক থাকলেও পরিষেবা চেয়ে বিশেষ কাউকে আসতে দেখা যায়নি। ফলে কর্মীদের সারা দিন কার্যত অবসরেই কেটেছে। আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় ছিল না। আরামবাগ আদালতে অবশ্য এ দিন আইনজীবীরা কেউই আসেননি। আরামবাগ বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অরূপ হাজরা বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত, যে-ই বন্ধ ডাকুক আমরা ঝুঁকি নিয়ে আসব না।”
রাতে বিডিওর পুরনো কোয়ার্টারে থেকে গিয়েছিলেন আরামবাগ ব্লকের দুই অফিসার বিশ্বপ্রিয় দত্ত ও পরিমল হাজরা। তাঁরা জানালেন, সারা রাত মশা মেরে কেটেছে। ভোরের দিকে একটু ঘুম আসে। গোঘাট ১ ব্লকের ৯ জন কর্মী কামারপুকুর লজে থেকে গিয়েছিলেন। ভাড়া দিতে হয়নি বলে জানালেন। এক রাতের জন্য ‘চেনাশোনা’ লোকজন ব্যবস্থা করে দেন। কর্মীরা জানালেন, রাতভর তাস খেলে কিংবা গল্পগুজব করে মন্দ কাটেনি সময়। গোঘাট ২ ব্লকের পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক রত্নদীপ পাল কামারপুকুরে সহকর্মীর বাড়িতে থেকে যান। তিনিও জানালেন, দিব্যি গল্প করে সময় কেটেছে।
হাওড়ার জয়পুর।
হুগলি শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের উপস্থিতির হার এ দিন আদৌ উল্লেখযোগ্য ছিল না। শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া, ডানকুনি শিল্পাঞ্চলে কমবেশি একই চিত্র। যদিও জেলার প্রশাসনিক দফতরগুলিতে সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতির হার ছিল চোখে পড়ার মত। জেলার গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েত এবং বিডিও অফিসে সরকারি কর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল ভাল। জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন বলেন,“জেলায় সরকারি কর্মীদের হাজিরা ছিল ৮৫ শতাংশ। চুঁচুড়ায় জেলা সদরে উপস্থিতির হার ছিল ৯১ শতাংশ।” অবশ্য সরকারি অফিসে হাজিরার হার যতই ভাল থাক না কেন, এ দিন আর পাঁচটা বন্ধের মতোই সাধারণ মানুষ পথেঘাটে কমই বের হয়েছেন।
জনজীবন সচল রাখতে প্রশাসনিক স্তরে আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলেই পুলিশ দ্রুত সেখানে পৌঁছে ব্যবস্থা নিয়েছে। জেলায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সকালের দিকে বেসরকারি বাস দেখা গিয়েছে রাস্তায়। দোকানপাট বাজারহাট আর পাঁচটা দিনের মত স্বাভাবিক না হলেও খোলা ছিল। কিন্তু যাঁদের জন্য সরকারি স্তরে এই বিপুল আয়োজন, সেই সাধারণ মানুষ কিন্তু পথে সে ভাবে বের হননি। আর তাই, বেলা বাড়তে সওয়ারি না থাকায় দ্রুত যানবাহন কমতে শুরু করে। উত্তরপাড়ার ভদ্রকালীর বাসিন্দা একটি বেসরকারি সংস্থার এক কর্মী বলেন, “এর আগে সরকারি আশ্বাস পেয়ে বন্ধে বের হয়ে কিন্তু ঠকেছি। কারণ রাস্তায় পরিবহণের ব্যবস্থা না থাকায় ভুগতে হয়েছিল বিস্তর। এ বার সেই অভিজ্ঞতা থেকে ঝুঁকি নিইনি। কিন্তু পরে দেখলাম, পরিস্থিতি একেবারে উল্টো।”
শ্রীরামপুর ইন্ডিয়া জুটমিলে সকালে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন কর্মীরা। কিন্তু অভিযোগ, শ্রীরামপুরের সিটু নেতা শিউমঙ্গল সিংহ তাঁদের বাধা দেন। পুলিশ গিয়ে গ্রেফতার করে তাঁদের। একই ভাবে হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার তালপুর স্টেশনে কাজে যোগ দিতে যাওয়ার সময় কয়েক জন তৃণমূল সমর্থককে সিপিএম সমর্থকেরা মারধর করে বলে অভিযোগ। উদয় মাইতি নামে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়। হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন,“হুগলিতে নানা ঘটনায় মঙ্গলবার মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
শ্রীরামপুর হেড পোস্ট অফিস দক্ষিণ হুগলির প্রধান কার্যালয়। এ দিন সেখানে অন্তত ১৫ জন কর্মী এসে দেখেন গেটে তালা। ওই কর্মীরা পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ চেষ্টা করে খোলার কিন্তু চাবি না পেয়ে অগত্যা ফিরে যেতে হয় কর্মীদের।
নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.