সম্পাদকীয় ২...
নূতন সূচক
মূল্যস্ফীতির সহিত সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎ প্রধানত প্রাত্যহিক বাজারে হইয়া থাকে। সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় মূল্যস্ফীতির ঋণাত্মক হারের সংবাদ পাঠ করিয়া মানুষ বাজারে পৌঁছাইয়া যখন দেখেন, দাম মোটে কমে নাই, তখন হতাশ হইলে তাঁহাকে দোষ দেওয়া মুশকিল। এমনকী, কেহ যদি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে সরকার কেবলই মিছে কথা বলিয়া মন ভুলাইবার চেষ্টা করিতেছে, তাঁহার সেই ক্ষোভসঞ্জাত অবিশ্বাসকেও এক কথায় উড়াইয়া দিলে তাঁহার প্রতি অবিচার করা হইবে। সরকার যে বাজারে পণ্যের দাম মাপে, আর সাধারণ মানুষ সকালে যেখানে বাজার করিতে যান, দুইটি জায়গা এক নহে। তাহারা সংজ্ঞাগত ভাবেই পৃথক। এত দিন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির যে খতিয়ান পাওয়া যাইত, তাহা শুধুমাত্র পাইকারি বাজারের। সেই বাজারের পণ্য আরও হাত ঘুরিয়া যখন পাড়ার বাজারে পৌঁছায়, তখন তাহার দামের কী ইতরবিশেষ হয়, পাইকারি মূল্যসূচকের নিরিখে প্রস্তুত মূল্যস্ফীতির হারের নিকট সেই খবর স্বভাবতই থাকে না। সেই খবর পাইতে হইলে কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা খুচরা বাজারের মূল্যসূচকের দ্বারস্থ হইতে হইবে। গত মাস হইতে ভারতে নূতন ভাবে খুচরা বাজারের মূল্যসূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতির হার মাপিবার ব্যবস্থা হইল।
খুচরা বাজারের মূল্যসূচকের হিসাব ভারতে পূর্বেও হইত, কিন্তু সে হিসাবের ভিত্তি ছিল ক্রেতার পেশাগত বিভাজন। কারখানার শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক এবং গ্রামাঞ্চলের অ-কৃষি ক্ষেত্রের শ্রমিক এই পেশাগত ভাগগুলির জন্য এই সূচক নির্মিত হইত। কেন, তাহার অর্থনৈতিক যুক্তি আছে বটে, কিন্তু সেই যুক্তিও এই সূচকটিকে সর্বজনব্যবহার্য করিয়া তুলে নাই। জানুয়ারি হইতে নূতন ভাবে হিসাবের ব্যবস্থা হইল। আর পেশাভিত্তিক বিভাজন নহে, এখন শহরাঞ্চল, গ্রামাঞ্চল এবং সর্বভারতীয় খুচরা বাজারের মূল্যসূচক হিসাব করা হইবে। উৎপাদনকারীরা বাজারে যে দামে পণ্য বেচেন, পাইকারি মূল্যসূচকটি মূলত তাহার খবর রাখে। ক্রেতা বাজারে কোন দামে সেই পণ্য, পরিষেবা কিনিতেছেন, তাহার হিসাবের জন্য খুচরা বাজারের মূল্যসূচক অধিকতর উপযোগী। পাইকারি সূচকটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য, কিন্তু একটি অর্থনীতির সামগ্রিক ছবি স্পষ্ট করিবার জন্য তাহা একা যথেষ্ট নহে। খুচরা সূচকের উপস্থিতিও জরুরি। উভয় সূচকের কাজ ভিন্ন, তাহারা একে অন্যের সম্পূরক।
মূল্যস্ফীতির একটি নির্দিষ্ট হার বজায় রাখা যে কোনও দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কেরই একটি প্রধান কাজ। মূল্যস্ফীতি শিল্প বা বিনিয়োগের উপর কী প্রভাব ফেলিতেছে, তাহা পাইকারি মূল্যসূচকের বৃদ্ধির হার হইতে বোঝা সম্ভব। কিন্তু, মূল্যস্ফীতির হার শুধু বিনিয়োগের উপরই প্রভাব ফেলে না, তাহা সাধারণ মানুষকেও প্রভাবিত করে। বস্তুত, সহ্যশক্তির কথা মাথায় রাখিলে বলিতে হয়, সাধারণ মানুষের উপরই মূল্যস্ফীতির চোটটি বেশি জোরে আঘাত করে। কিন্তু, পাইকারি মূল্যসূচক, তাহার চরিত্রের কারণেই, সেই আঘাতের তীব্রতা নিখুঁত ভাবে মাপিতে পারে না। খুচরা বাজারের সূচক তাহা মাপে। সেই কারণেই বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশেই খুচরা সূচকের হিসাব রাখা হয়। দুইটি হিসাব পাশাপাশি দেখিবার আরও কয়েকটি সুবিধা আছে। যেমন, সরকারের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়, ঠিক কোন স্তরে মূল্যবৃদ্ধি ঘটিতেছে। বুঝিলে, তাহার ব্যবস্থা করাও সম্ভব হয়। দুইটি সূচকে যদি মূল্যস্ফীতির ভিন্ন প্রবণতা ধরা পড়ে, তাহাও অর্থনীতির একটি বিশেষ সমস্যার ইঙ্গিতবাহী। সরকার বা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কী ভাবে সেই রোগগুলির মোকাবিলা করিবে, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন কিন্তু নূতন সূচকটি আসিয়া রোগ নির্ণয় করিবার কাজটিকে খানিক সহজ করিয়া দিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.