সম্পাদকীয় ১...
যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা
রাজ্যে-রাজ্যে সন্ত্রাস-বিরোধী কেন্দ্র স্থাপন করার ইউপিএ সরকারের সিদ্ধান্ত ওই সরকারেরই শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় আপাতত হিমঘরে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা নহেন। বিহার, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, ওড়িশা ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীরাও কেন্দ্রীয় সরকারের এই একতরফা সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করিয়াছেন। কারণ প্রস্তাবিত এই বন্দোবস্তে এমন সব অধিকার ও ক্ষমতা সন্ত্রাসবিরোধী কেন্দ্রগুলিকে দেওয়া হইবে, যাহা সরাসরি রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করে। যেমন ওই কেন্দ্রের পুলিশ, গোয়েন্দা বা রক্ষীরা ইচ্ছা করিলে যে-কোনও ব্যক্তিকে যে-কোনও রাজ্য হইতে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করিতে পারে, রাজ্য সরকারের আগাম অনুমতি দূরস্থান, রাজ্যকে অবহিত করারও প্রয়োজন নাই। এমন একটি বন্দোবস্ত কেবল দমনমূলকই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকার কাড়িয়া লওয়ারও নামান্তর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তি দিয়াছিলেন যে, সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন রাজ্যের সমন্বয়সাধন জরুরি। অবশ্যই জরুরি। কিন্তু প্রশ্ন হইল, সমন্বয়ের নাম করিয়া রাজ্যের উপর কেন্দ্রের আধিপত্য জারি করা হইবে কেন? কোন যুক্তিতে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র স্থাপনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাইয়া ন্যায়সঙ্গত কাজই করিয়াছেন। তিনি রাজ্যের স্বার্থ সুরক্ষিত করিয়াছেন, উপরন্তু এই সিদ্ধান্তে যে নীতিগত আপত্তির অবকাশ আছে, তাহাও নির্দেশ করিয়াছেন। সংবিধান অনুযায়ী ভারত রাজ্যগুলির একটি ‘ইউনিয়ন’। রাজ্যগুলি যদি স্বেচ্ছায়, স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া ভারত নামক যুক্তরাষ্ট্রে সংযুক্ত না হয়, তবে ভারত বলিয়াও কিছু অবশিষ্ট থাকে না। কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় ক্ষমতা, তাহার আইনগত এক্তিয়ার, রাজস্ব সংগ্রহ ও বণ্টন হইতে শুরু করিয়া জাতীয় প্রতিরক্ষা, অভিন্ন মুদ্রা ও অর্থনীতি প্রণয়ন করার অধিকার সবই রাজ্যগুলির এই স্বেচ্ছা-সংযুক্তির উপর ভিত্তি করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। দুর্ভাগ্য, যখন যে-রাজনৈতিক দল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন থাকিয়াছে, তাহার নেতারা নানা ভাবে কেন্দ্রের হাতে আরও ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করিতে রাজ্যগুলির অধিকারের সীমানা সঙ্কোচনে ব্রতী হইয়াছে। তবে সবচেয়ে দীর্ঘ কাল কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকায় এ ব্যাপারে কংগ্রেসের রেকর্ডই সর্বাপেক্ষা অনুজ্জ্বল। জোট রাজনীতির প্রতি তাহার অসহিষ্ণুতার মতোই এ ক্ষেত্রেও একটি মজ্জাগত এককেন্দ্রিকতা প্রকট।
১৯৪৬ সালের ক্যাবিনেট মিশন প্রত্যাখ্যান করার সময় হইতেই কংগ্রেসের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কেন্দ্রীকরণের প্রবণতা প্রবল। শক্তিশালী কেন্দ্র গঠন করিয়া প্রাদেশিক এককগুলির ডানা কর্তন করার যে-অনুশীলন জওহরলাল নেহরুর যুগ হইতেই চলিয়া আসিতেছে, ‘জরুরি অবস্থা’র সময় তাহাই চূড়ান্ত চেহারা লয়। এই প্রবণতাই কেন্দ্র-রাজ্য ক্ষমতাবিন্যাসে সরকারিয়া কমিশনের সুপারিশগুলিকে উপেক্ষা করিয়াছে। জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন খর্ব করা, রাজ্যে-রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী জনজাতীয় আন্দোলনের জন্ম দেওয়ার পিছনেও এই প্রবণতারই ক্রিয়া। প্রবণতাটি রাষ্ট্রনীতির অন্দরে এতটাই ঢুকাইয়া দিবার চেষ্টা হইয়াছে যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যের অধিকার কাড়িয়া লওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, তখন সেটাকেও তাঁহার ব্যক্তিগত উন্মার্গগামিতা বা রাজনৈতিক দরকষাকষির দৃষ্টান্ত রূপে অপপ্রচারের চেষ্টা চলিয়াছে। রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের অনধিকার হস্তক্ষেপ রুখিতে ইতিপূর্বেও মমতা তিস্তার জলবণ্টন চুক্তিতে রাজ্যের ভাগ লইয়া আপত্তি জানাইয়াছেন, লোকপাল বিলের অধীনে রাজ্যে-রাজ্যে ‘লোকায়ুক্ত’ চাপাইয়া দিবার বিরোধিতা করিয়াছেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় বন্দোবস্তকে সঙ্কুচিত করার অসাংবিধানিক কেন্দ্রীয় প্রয়াসের বিরুদ্ধে তাঁহার অবস্থানের পিছনে সমগ্র রাজ্যবাসীর সমাবেশিত হওয়া উচিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.