‘সদিচ্ছায়’ আশ্বস্ত কর্তারা
বনধে অন্য ছবি দেখল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প
র্মঘটের দিনেও সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ শিল্প তালুকে বাস-অটো চলছে দেখে একটা ছবি তুলে বেঙ্গালুরুতে এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্তার ই-মেলে পাঠিয়ে দিলেন কলকাতার এক সফটওয়্যার সংস্থার বড় কর্তা। তার পরে হেসে বললেন, “একটু হলেও এ বারে সম্মান বাঁচল। প্রতি বার ধর্মঘটের দিনগুলিতে অন্যেরা আমাদের নিয়ে যা হাসাহাসি করে!”
আসলে দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হলেও এ বারেও তথ্যপ্রযুক্তি কর্তারা আশঙ্কিত ছিলেন কলকাতা আর কোচিকে নিয়ে। এই দুই শহরেই বামপন্থীরা বেশ শক্তিশালী। সেটা মাথায় রেখেই কলকাতার ওই তথ্যপ্রযুক্তি কর্তা মঙ্গলবার তাঁদের শুধু কলকাতা ও কোচি কেন্দ্রের কর্মীদেরই ধর্মঘট শুরুর আগেই অফিসে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ দিন সকালে সাড়ে ন’টা নাগাদ সল্টলেকে অফিসে ঢোকার মুখে বাস-অটো চলার দৃশ্যে তিনি অবাকই হয়েছেন।
দেশের বিপিও এবং সফটওয়্যার সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকম-এর পূর্বাঞ্চলীয় পর্ষদের কর্তা সুপর্ণ মৈত্রের দাবি, সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এ দিন প্রায় ৮০% কর্মী হাজির ছিলেন। কাজ হয়েছে অধিকাংশ বড়-মাঝারি সংস্থায়। মঙ্গলবার সেক্টর ফাইভে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সরকারি বাস তো চলছেই, গুটিকয়েক যাত্রী নিয়ে বেসরকারি বাসও রাস্তায় ছুটছে। চলছে অটো, রিক্সাও। সংখ্যায় কম হলেও খোলা ছিল কিছু খাবারের দোকান ও রেস্তোরা।
বনধের দিন সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক নবদিগন্তে কর্মীদের উপস্থিতির সংখ্যা কম-বেশি যা-ই হোক না কেন, শিল্পমহল মনে করছে, সরকার তার সদিচ্ছাটুকু দেখাতে পেরেছে। আর ইতিবাচক সেই ছবিই অন্যান্য সংস্থাগুলির ‘ইন্টারনাল কমিনিউনিকেশন’-এর মাধ্যমে ই-মেলের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়েছে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, মুম্বই, দিল্লির মতো তথ্যপ্রযুক্তি-নগরীগুলিতে।
কাজ চলছে। সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে। ছবি: সুমন বল্লভ
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে ধর্মঘটের আওতা থেকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগেই ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তো রাজনৈতিক কারণে ধর্মঘট মোকাবিলা ছিল তাঁর কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। নবদিগন্তের তথ্যপ্রযুক্তি কর্তাদের বক্তব্য, এ দিন রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প একশো ভাগ সচল ছিল বলা না গেলেও শিল্পতালুক অন্তত অন্য বারের মতো ‘শ্মশানের চেহারা’ নেয়নি।
বণিকসভা অ্যাসোচেম-এর দাবি, ধর্মঘটের হিসেবে দেশের মধ্যে অগ্রণী পশ্চিমবঙ্গ। যেখানে বছরে গড়ে ৬০-৮০টি (দু’ঘণ্টা থেকে দু’দিন পর্যন্ত) বন্ধ হয়। তবে ২০০৬-এ তামিলাড়ুতে সব চেয়ে বেশি ধমর্ঘটের ঘটনা ঘটেছিল, ৫০টি। তাদের আরও দাবি, বন্ধের জন্য সব চেয়ে বেশি শ্রমদিবস নষ্টের ঘটনাও এ রাজ্যেই। ২০০৬-এ তা ছিল ১২.৫ লক্ষ। ২০০৭-এ তা বেড়ে হয় ২.৩৭ কোটি। তালিকায় তামিলনাড়ু, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল ও উত্তরাঞ্চল থাকলেও তারা পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। অ্যাসোচেমের মতে, বন্ধ -সংস্কৃতির প্রভাব রাজ্যের ভাবমূর্তির পক্ষে শুধু ক্ষতিকরই নয়, সুদূরপ্রসারীও।
এ দিন নবদিগন্তে গিয়ে দেখা গিয়েছে বেশ কিছু বিপিও সংস্থা অফিস বন্ধ রেখেছে। কাজ হয়নি বেশ কিছু সফটওয়্যার সংস্থাতেও। তবে বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সবাই কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো কর্মীবাহিনীর ব্যবস্থা আগেই করে ফেলেছিল। সিটু-র রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী দাবি করেছেন, ধর্মঘটে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এমন প্রভাব এর আগে দেখা যায়নি। তাঁর দাবি, সেক্টর ফাইভে বেশির ভাগ কর্মীই এ দিন ধর্মঘটে সামিল। অন্য দিকে, সেক্টর ফাইভ ইন্ডাস্ট্রিজ ফোরামের সহ-সভাপতি কল্যাণ কর জানান, অফিসে অনুপস্থিত অনেক কর্মী এ রকম দিনে বাড়িতে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করে দেন। তিনি বলেন, “কোনও সংস্থায় কর্মীদের উপস্থিতি কম হলেও দেখা যাবে, হয়তো ৯০% কাজই হয়েছে।”
বন্ধ অযৌক্তিক বরাবরের দাবি শিল্প-কর্তাদের। বেঙ্গল চেম্বারের ডিরেক্টর জেনারেল প্রিয়দর্শন রায়, মার্চেন্ট চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপক জালান, ফিকি-র পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা গৌরব স্বরূপ সকলেই এক মত। এ দিন তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা ধারা এক দিনে বদলায় না। প্রশাসন পাশে থাকলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি পাল্টাবে। তাঁদের সঙ্গে সহমত হলেও বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট তেজোময় চৌধুরীর মতে, প্রসাশনিক সহায়তার পাশাপাশি কাজ করা মানসিকতারও উন্নতি হওয়া প্রয়োজন।

সহ প্রতিবেদন: গার্গী গুহঠাকুরতা, দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.