পরিষেবার সুবন্দোবস্তে নিশ্চিন্ত ছন্দে বিমানবন্দর
দৃশ্যটা আমূল বদলে গেল।
ডাঁই করা স্যুটকেস নিয়ে বিমানবন্দরের সামনে ঠায় প্রতীক্ষার সেই চির পরিচিত ছবিটা উধাও। একটি ট্যাক্সি ধরার জন্য যাত্রীদের মারপিটও নেই। মঙ্গলবার আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই যাত্রীরা নিজস্ব ছন্দে বিমানবন্দরে ঢুকেছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে শহরের উদ্দেশে রওনা হয়ে গিয়েছেন। সে অর্থে মঙ্গলবারের শিল্প-ধর্মঘট (যা কার্যত সাধারণ ধর্মঘটের চেহারা নিয়েছিল) সামান্য আঁচড়টুকুও কাটতে পারেনি কলকাতা বিমানবন্দরে। নির্ধারিত সূচি মেনেই কলকাতা থেকে ওঠানামা করেছে প্রায় নব্বই শতাংশ উড়ান। সাম্প্রতিক অতীতে যে দৃশ্য ছিল বিরল। এ রাজ্যে ডাকা সাধারণ বন্ধে চিরকালই সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমান পরিষেবা।
এটা ঠিকই যে, ঝুঁকি না নিয়ে পূর্ব-অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া বহু যাত্রী মঙ্গলবার দুপুর দু’টোর উড়ান ধরতে বিমানবন্দরে পৌঁছন এ দিন সকাল ছ’টায়। এটাও ঠিক যে, অন্যান্য দিনের তুলনায় বাইরে ট্যাক্সির সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো কম। কিন্তু, তাতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি যাত্রীদের। যাঁরা গাড়ি ভাড়া করে বিমানবন্দরে এসেছেন, তাঁদের বয়ান ছিল, “রাস্তায় সমস্যা হয়নি।” সেই গাড়ি যাত্রী নামিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর মুখে শহরের যাত্রী তুলে নিয়ে চলে গিয়েছে। যাঁরা অন্য শহর থেকে কলকাতায় এসেছেন, তাঁরা সেই গাড়ি ছাড়াও নিয়ম মেনে চিরকুট কেটে ট্যাক্সিতে চেপে গন্তব্যে চলে গিয়েছেন। এমনকী, যাত্রীদের শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিতে সকাল থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বাস ছেড়েছে বিমানবন্দর থেকে। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা দিপু মুখোপাধ্যায় বিমানবন্দরে স্ত্রীকে ছাড়তে এসেছিলেন। তাঁর স্ত্রী বেঙ্গালুরুতে ছেলের কাছে যাচ্ছিলেন। দুপুর দু’টোর উড়ান ধরতে ট্যাক্সি ডেকে যেমন তড়িঘড়ি ভোর পাঁচটায় বিমানবন্দরে পৌঁছে যান, তেমনই পরিস্থিতি দেখার পরে টেলিফোনে ট্যাক্সি ডেকে দুপুরে হেলতে দুলতে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।
বিমানবন্দরে পুলিশের সাহায্যে ট্যাক্সিতে উঠছেন এক যাত্রী। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ
গত কয়েক দিন ধরে প্রচুর যাত্রী টিকিট বাতিল করেছেন। গুটিকতক যাত্রী নিয়ে উড়লে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই, বন্ধের দিনে একই গন্তব্যে যাওয়া একাধিক উড়ানের বদলে একটি বিমানে সমস্ত যাত্রীদের পাঠিয়ে দেওয়ার রীতি রয়েছে। বিমান পরিবহণের ভাষায় একে ‘কম্বাইন্ড ফ্লাইট’ বলা হয়। যেমন, ‘স্পাইসজেট’ সারা দিনে কলকাতা-দিল্লি রুটের তিনটি উড়ানের জায়গায় এ দিন একটিমাত্র উড়ান চালায়। সেই বিমানে সব যাত্রীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এয়ার ইন্ডিয়ার গুয়াহাটির বিমান বাগডোগরায় যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে। এ দিন বিমানবন্দরের বাইরে ‘কম্বাইন্ড ট্যাক্সি’রও ব্যবস্থা করেছিল স্থানীয় থানার পুলিশ। প্রধানত পুলিশের তৎপরতায় বাইরে থেকে ট্যাক্সি নিয়ে আসা হয় বিমানবন্দরে। একই দিকে যাওয়া একাধিক যাত্রীকে একই ট্যাক্সিতে তুলে দেওয়া হয়।
বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “যে পরিষেবাগুলি একান্ত জরুরি, সেখানে প্রয়োজনীয় কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছিল। অনেককে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়েও বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।” বাম-সমর্থিত নিচুতলার কর্মী ইউনিয়নের শক্তি এখন কমেছে। ফলে নিচুতলার কর্মীদের একাংশ এ দিন কাজে যোগ দেন। এর আগে বন্ধের দিন বাইরে থেকে কার্যত জোর করে আটকানো হত অন্য কর্মীদের। এ দিন সে পথে হাঁটেননি বাম নেতারা। তা ছাড়া, বিমানবন্দরের বাম-ঘেঁষা কর্মী ইউনিয়নের অনেক সদস্যও এ দিন উপস্থিত ছিলেন। দুপুরের পরে এরোব্রিজের (যে সেতুর সাহায্যে বিমান থেকে সরাসরি বিল্ডিংয়ে যাতায়াত করা যায়) মতো পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলেও তা বিমান চলাচল বন্ধ করতে পারেনি।
ডেনমার্ক থেকে আসা ৭০ বছরের নার্স হিলডে বোল্টাভের চোখে আতঙ্ক ছিল। বললেন, “ভেবেছিলাম হোটেল থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছতে সমস্যায় পড়ব। দুপুরে উড়ান ধরার জন্য তাই সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ২৯ জন পর্যটককে নিয়ে আমাদের বাস বিমানবন্দরে পৌঁছে যায়।” কলকাতা থেকে বাগডোগরায় পৌঁছে এ দিনই তিনি পাহাড়ে উঠে যেতে চান।
অন্য চিত্রও রয়েছে। দিল্লি থেকে বিয়ে সেরে নববধূকে নিয়ে আগরতলা যেতে চেয়েছিলেন অনুপ নাহা। বর-বধূ বেশেই তাঁরা বিমানে দিল্লি থেকে কলকাতায় নেমে শোনেন, উড়ান বাতিল। বেশ বিরক্ত নবদম্পতি তখন ট্যাক্সি নিয়ে শহরে এক বন্ধুর বাড়িতে চলে যান।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.