স্ট্র্যান্ড রোড, নেতাজি সুভাষ রোড ছুঁয়ে গাড়িতে ধর্মতলা পৌঁছতে সময় লাগল মাত্র মিনিট দু’য়েক!
সুনসান ডালহৌসি। পোস্তা, বড়বাজারে অন্য দিনের অফিস-টাইমে ব্যস্ত থাকা অলিগলিতে এ দিন দাপিয়ে বেড়াল খুদে ‘ধোনি-বাহিনী’, মেসি-রোনাল্ডো-ভাইচুং ভক্তেরা। দোকান-বাজারের ঝাঁপ বন্ধ রইল নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, বেহালার আনাচকানাচে।
মঙ্গলবার সাধারণ ধর্মঘটে সেই ‘চেনা’ ছবি ফের দেখল কলকাতা।
সরকারি দফতরগুলির মতো রাজপথও ‘সচল’ রাখার আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। সকাল থেকেই মেট্রো-পরিষেবা ছিল সপ্তাহের অন্য দিনের মতোই। রাস্তায় নামে প্রচুর সরকারি বাস, ট্রাম। চলেছে অটো, ট্যাক্সিও। কিন্তু এত ব্যবস্থা যাঁদের জন্য, সেই যাত্রীদেরই কার্যত দেখা মেলেনি। ধর্মঘটে ‘ঘরবন্দি’ থেকেছেন অধিকাংশ মানুষ। উত্তরের শ্যামবাজার থেকে মধ্য কলকাতার ধর্মতলা কিংবা দক্ষিণের রাসবিহারী, হাজরা, টালিগঞ্জ সর্বত্র একই দৃশ্য। ‘গুটিকয়’ যাত্রী নিয়েই চলেছে সরকারি যানবাহন। একই ছবি সল্টলেকেও।
সকাল থেকেই বিভিন্ন ডিপো ঘুরে দেখেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। বিকেলে তিনি মহাকরণে দাবি করেন, “বাস-ট্রাম ভাল চলেছে। তবে, বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনায় বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ২০টি বাস ভাঙচুর হয়েছে।” বেসরকারি বাস-মালিক সংগঠনগুলির বক্তব্য অবশ্য অন্য রকম। ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’-এর যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “৩০ হাজার বাসের মধ্যে এক হাজারও বেরোয়নি। যাত্রীর অভাবে দুপুরের পরে আরও কিছু বাস বসিয়ে দেওয়া হয়।” মিনিবাস-মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক অবশেষ দাঁ-র বক্তব্যও একই রকম। তিনি বলেন, “২৪০০ মিনিবাসের মধ্যে নামানো হয়েছিল বড়জোর ৩০০টি বাস। রাস্তায় বার না-করার অভিযোগে শিবতলা-হাওড়া রুটের চারটি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।” সিটিসি-র তরফে জানানো হয়, এ দিন মাত্র ১২টি ট্রাম রাস্তায় বার করা হয়েছিল। |
সুনসান নিউ মার্কেট। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ আচার্য |
‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি বিমল গুহ জানান, এ দিন প্রায় ১২ হাজার ট্যাক্সি বেরিয়েছিল। কিন্তু এর বিরোধিতা করে আইএনটিইউসি-সমর্থিত ‘ক্যালকাটা ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিমল ঘোষের দাবি, “৩২ হাজার ট্যাক্সির ১০ শতাংশ আজ চলেছে কি না, সন্দেহ।” সিটু-সমর্থিত ট্যাক্সিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ ঝা-ও বলেন, “ভোরের দিকে হাজারখানেক ট্যাক্সি রাস্তায় বেরিয়েছিল। পরে যাত্রীর অভাবে বেশির ভাগই তুলে নেওয়া হয়।”
শহরের পুর-বাজারগুলি সকাল থেকেই খোলা হয়েছিল বলে দাবি করেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। কিন্তু পুরসভার কেন্দ্রীয় অফিসের পাশেই নিউ মার্কেট, হগ মার্কেটের প্রবেশপথ খোলা থাকলেও অনেক দোকানেরই ঝাঁপ খোলেনি। দেবাশিসবাবু বলেন, “মার্কেট খোলা ছিল। দোকান কেন খুলল না, তা জানি না। কাউকে তো জোর করে দোকান খোলাতে পারি না।” ধর্মঘট ‘ব্যর্থ’ করতে এ দিন সকাল ১০টার মধ্যেই পুরসভায় পৌঁছন মেয়র-সহ সব মেয়র পারিষদ। কেন্দ্রীয় সরকারি দফতর, বন্দরে অনেকটা স্বাভাবিক কাজকর্মই হয়েছে। তবে এ দিন ব্যাঙ্ক-ধর্মঘট হওয়ায় এটিএম-সহ অনেক ব্যাঙ্কেরই ঝাঁপ খোলেনি। পাশাপাশি, বন্ধ ছিল বেশির ভাগ শপিং মল-ও।
এ দিকে, সারা দিনের নানা গোলমালে কলকাতা পুলিশের এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৩২ জনকে। যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যাদবপুর থেকে দু’জন, চেতলায় ১৩ জন, ধর্মতলার মোড় থেকে ১৭ জনকে ধরা হয়। ধর্মতলা থেকে যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁরা সকলেই সিপিআইএমএল-এর সমর্থক। কেএমসি-র হেড অফিস থেকে মিছিল করে মেট্রো চ্যানেল অতিক্রম করার সময়ে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। |