সকাল সকাল বিল জমা দিতে জড়ো হয়েছিলেন গ্রাহকেরা। বর্ধমানের টেলিফোন ভবনে কাউন্টার বন্ধ দেখেই শুরু হয় চিৎকার। ছুটে আসে পুলিশ। অবশেষে কাউন্টারের পিছনে কর্মীদের আবির্ভাব হলে শান্ত হন কর্মীরা। লাইনে দাঁড়িয়ে বিল জমা দেন তাঁরা।
বর্ধমান শহরের খোসবাগানে পুরসভা পরিচালিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্রে অন্য দিনের মতোই জড়ো হয়েছিলেন রোগীরা। কম খরচে নানা পরীক্ষা করা হয় সেখানে। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদও স্বাস্থ্যকেন্দ্র না খোলায় রোগীরা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার রত্না রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রত্নাদেবী পুরসভার সিপিএম চেয়ারম্যান আইনুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি খোলানোর ব্যবস্থা হয়। ওই কেন্দ্রে যান পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত রায়। মন্তেশ্বরের তাজপুরের বাসিন্দা শেখ মহম্মদ ইদ্রিশ, কুসুমগ্রামের গিয়াসুদ্দিন মোল্লারা বলেন, “যেহেতু এই কেন্দ্রে জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হয়, তাই আশা করেছিলাম খোলা থাকবে। কিন্তু সেটি বন্ধ রয়েছে দেখে অবাক হয়ে যাই।” স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রতবাবু বলেন, “এখানে ১৭ জন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের শো-কজ করা হবে।” |
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ঝাউডাঙা গ্রামের হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক চাবি না খোলায় অন্য শিক্ষকেরা স্কুলে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রধান শিক্ষককে স্কুলে এনে তালা খোলানো হয়। এই ব্লকেরই শ্যামবাটি উচ্চ বিদ্যালয় এ দিন বন্ধ থাকলেও পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে খোলা হয়।
এ রকম কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া মঙ্গলবার সাধারণ ধর্মঘটে অধিকাংশ জায়গাতেই অফিস, স্কুল, কলেজ খোলা থাকতে দেখা গিয়েছে। তবে পড়ুয়া সংখ্যা ছিল কম। অফিস-কাছারিতে গ্রাহকের সংখ্যাও ছিল নগণ্য। তবে বেশ কিছু দোকানপাট খোলা থাকলেও রাস্তাঘাটে যানবাহন বিশেষ দেখা যায়নি। সরকারি বাস চললেও তাতে যাত্রীর সংখ্যা ছিল কম।
বর্ধমানের বিদ্যার্থীভবন গার্লস হাইস্কুলের গেটে এ দিন তালা দেওয়া থাকায় বিতর্ক শুরু হয়। জেলা স্কুল পরিদর্শক আব্দুল হাই বলেন, “ওই স্কুলটি মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র। তাই ছাত্রীরা এখন স্কুলে আসছে না। কিন্তু এ দিন বন্ধ থাকার খবর পেয়ে আমি প্রধান শিক্ষিকাকে অবিলম্বে স্কুল খুলতে বলি। সাড়ে ১১টা নাগাদ স্কুল খুলেছে।” |
সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, “জোর করে বেশ কিছু এলাকায় দোকানপাট খলুতে বাধ্য করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় দোকান ভাঙচুর হয়েছে।” বর্ধমানের দেওয়ানদিঘি এলাকায় গত সপ্তাহেই খুন হন দুই সিপিএম নেতা। এ দিন সেই এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। অমলবাবুর দাবি, “ওই খুনে জড়িতেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারাই বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধর্মঘট ব্যর্থ করতে বলে চাপ দিয়েছে। তবুও জেলার মানুষ ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। আমরা তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।” তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথের পাল্টা দাবি, “এ দিন সমস্ত অফিস, আদালত, স্কুলে স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। কোথাও বিচ্ছিন্ন ভাবে ধর্মঘট সফল হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সার্বিক ভাবে জনজীবন স্বাভাবিকই ছিল।”
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, সমস্ত সরকারি অফিস, পঞ্চায়েত, পুরসভা ইত্যাদিতে এ দিন উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। সরকারি-বেসরকারি বাস ও ট্রেনও চলেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মোট ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোথাও বিশেষ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেই জানান জেলাশাসক।
|
মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |