শিক্ষক আছেন, কিন্তু ছাত্র নেই। মঙ্গলবারের ধর্মঘটে রাজ্যের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছবিটা ছিল এ-রকমই। কিন্তু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বাঁকুড়ার একটি স্কুলে হাজিরা ও হাজিরার তালিকা নিয়ে দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূলেরই দু’টি কর্মচারী ইউনিয়ন। হাতাহাতিও হয়। একটি গোষ্ঠীর হম্বিতম্বিতে অপমানিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
আর বাঁকুড়ার খাতড়া ব্লকে সুপুর হাইস্কুলে গিয়ে তৃণমূলের কিছু সমর্থক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা তালিকা চান বলে অভিযোগ। তালিকা দিতে রাজি না-হওয়ায় তৃণমূল সমর্থকেরা প্রধান শিক্ষক ও এক শিক্ষিকাকে মারধর করা হয় এবং তালাবন্দি করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক টেলিফোনে খাতড়া থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্ধার করে। প্রধান শিক্ষক পরে তৃণমূলের সুপুর অঞ্চল সভাপতি মহাদেব গিরি-সহ আট জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান।
এ দিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি ছড়ায় গোলাপবাগ চত্বরে বিভিন্ন বিভাগ খোলা রাখার জন্য তৃণমূলের ‘চাপ’কে কেন্দ্র করে। ওই প্রতিষ্ঠানে তৃণমূলের দু’টি কর্মী ইউনিয়ন রয়েছে। একটি হল ‘বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি’। অন্যটির নাম ‘বর্ধমান ইউনিভার্সিটি কর্মচারী সমিতি’। প্রথমটির নেতৃত্বে আছেন সীতারাম মুখোপাধ্যায়, অন্যটির নেতা শৈল ঘোষ। সীতারামবাবুর অনুগামীরা এ দিন সকালে গোলাপবাগে গিয়ে সব বিভাগ দিনভর খোলা রাখার জন্য বিভাগীয় প্রধানদের কাছে আবেদন জানান। তখন অবশ্য দেখা যায়, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশই অনুপস্থিত। দুপুরের দিকে শৈলবাবু তাঁর অনুগামীদের নিয়ে গোলাপবাগে যান এবং অনুপস্থিতির বহর দেখে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের গালমন্দ করেন বলে অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শ্রীপতি মুখোপাধ্যায় পরে বলেন, “শৈল ঘোষদের ইউনিয়নের শাসানিতে অপমানিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় আমার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।” প্রধানের দায়িত্বে ইস্তফা দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অমিতবাবু। কিন্তু এই ব্যাপারে এখনই বিস্তারিত ভাবে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-শিক্ষক সংগঠনের সদস্য, তাদের সঙ্গে কথা না-বলে বাইরে কিছু বলতে চাই না।”
শৈলবাবু অবশ্য অমিতবাবুকে অপমান করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা ভদ্র ভাবেই ওঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, শিক্ষকেরা উপস্থিত নেই কেন।” কিন্তু শিক্ষকদের উপস্থিতির হার দেখার দায়িত্ব কি শিক্ষাকর্মীদের? শৈলবাবুর কর্মস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটী ক্যাম্পাস। তা হলে অন্য ক্যাম্পাসে তিনি গেলেনই বা কেন? শৈলবাবুর বক্তব্য, “গোলাপবাগে শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তারই ফাঁকে একটু শিক্ষকদের সঙ্গেও দেখা করি।” এমন দিনে তাঁরা বরাবরই এটা করেন বলেও জানান শৈলবাবু।
ধর্মঘটের দিনে অনেক শিক্ষকের গরহাজিরায় চটে গিয়ে শৈলবাবুরা এর পরে রাজবাটী ক্যাম্পাসে গিয়ে রেজিস্ট্রার শ্রীপতি মুখোপাধ্যায়কে ঘেরাও করেন। তাঁদের দাবি, এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গরহাজির শিক্ষকদের শো-কজ করতে হবে। ঘণ্টাখানেক পরে তৃণমূলের অন্য কর্মী ইউনিয়নের সদস্যেরা রেজিস্ট্রারকে ঘেরাওমুক্ত করতে এগিয়ে যান। তখনই তৃণমূলের দুই কর্মী ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতি হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়। |