বন্ধে সিপিএম এবং তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, অন্ডাল, পানাগড়-সহ কিছু এলাকায়।
মঙ্গলবার সকালে গণ্ডগোল বাধে অন্ডালের উখড়ায়। সিপিএমের উখড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক বংশীধর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, স্থানীয় হাসপাতাল মোড়ে বসে তাঁরা ছ’জন গল্পগুজব করছিলেন। সেই সময়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা আশিস কর্মকার-সহ বেশ ক’জন সেখানে হাজির হয়ে তাঁদের লক্ষ করে কটূক্তি শুরু করে। প্রতিবাদ করলে তাঁকে ছাড়াও স্বর্ণময় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পঞ্চায়েত সদস্য অক্ষয় বাউরিকে মারধর করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ করেন। পুলিশ দ্রুত না এলে বিপদে পড়তেন বলে তাঁদের দাবি।
আশিসবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন মিত্র অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা বলেন, “সিপিএমের সমর্থকেরাই উখড়া পঞ্চায়েত অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। আমাদের কর্মীরা প্রতিবাদ জানান। পুলিশ গিয়ে ওই তালা খোলে। এর পরেই উখড়া বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ করার জন্য এগোয় সিপিএম। তৃণমূলের লোকজনও সেখানে যান। তাঁদের উদ্দেশে কটূক্তি করেন সিপিএমের কর্মীরা। তার প্রতিবাদ করলে আশিস কর্মকার-সহ আমাদের তিন কর্মীকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়। তবে কোনও পক্ষই পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।
জামুড়িয়ায় চুরুলিয়ার নজরুল ইসলাম কলেজেও শিক্ষকদের ঘরে ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। কলেজের অধ্যক্ষ সন্ত রামের দাবি, গাড়ির চালক বেরোতে রাজি না হওয়ায় তিনি কলেজে যেতে পারেননি। অন্য শিক্ষকেরাও যাননি। কিছু শিক্ষাকর্মী গিয়েছিলেন। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে খবর দেন, প্রায় পঁচিশ জনের একটি দল কলেজে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। শিক্ষকদের ঘরের তালা ভেঙে ফেলা হয়েছে। অধ্যক্ষ বলেন, “টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ আলি জিন্নাকে ফোন করেছিলাম। সে দাবি করে, এই ঘটনার পিছনে বহিরাগতদের হাত রয়েছে।” পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। |
রানিগঞ্জে আবার পঞ্চায়েত অফিসে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জেমারি পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান নিমাই ঘোষের অভিযোগ, অসুস্থতার কারণে সকালে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। বেলা ১২টা নাগাদ পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে দেখেন, অন্য কর্মীরা তাঁদের ঘরেই রয়েছেন। কিন্তু তাঁর ঘরে তালা লাগানো। বিডিও-র কাছে বিষয়টির তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা অভয় উপাধ্যায়ের দাবি, “দীর্ঘক্ষণ প্রধানকে আসতে না দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন।” বিডিও সুবোধ ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে খবর পেয়েই পুলিশকে পাঠাই। তার পরে কী হয়েছে, আমি জানি না।”
সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য সুভাষ মণ্ডল জানান, কাজোড়া ও খান্দরা পঞ্চায়েতে কোনও কর্মী না আসায় পঞ্চায়েত অফিস বন্ধ ছিল। স্থানীয় বিডিও পুলিশের সঙ্গে গিয়ে হাতুড়ি দিয়ে তালা ভেঙে দু’তিন জনকে বসিয়ে রেখে যান। অন্ডালের তৃণমূল নেতা গুরুপ্রসাদ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন কাজে পঞ্চায়েতে গিয়ে অফিস বন্ধ দেখে বিডিও-কে খবর দেন। সরকারি পর্যায়ে যা করার তা বিডিওর নেতৃত্বে করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য দাবি করে, তারা তালা ভাঙেনি। বিডিও-র প্রতিনিধির সঙ্গে গিয়েছিল। মহকুমাশাসক আয়েষা রানি এ বলেন, “গ্রাম প্রধানেরা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের অফিসের চাবি দিয়ে রাখেননি। তাই তালা খোলা যায়নি।”
জামুড়িয়ায় আবার সিপিএমের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধেই জোর করে তালা লাগিয়ে দিয়ে পুরসভা অচল করার অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক নাজিমা বেগম। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত কাজে পুরসভায় গিয়ে জানতে পারেন, পুরপ্রধান উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অফিস খোলেননি। পুরপ্রধান ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। যার কাছে পুরসভার চাবি থাকে, তিনি আসেননি বলেই অফিস খোলা যায়নি। তিনি নিজেও পুরসভায় গিয়ে ঢুকতে না পেরে ফিরে এসেছেন।
পানাগড়ে এক তৃণমূল সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অভিযোগ, সঞ্জীব চৌধুরী নামে তাদের দলের ওই সমর্থক দিন দুয়েক আগে বন্ধ-বিরোধী মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। সে কারণেই সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর উপরে চড়াও হয়। তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দীপা মণ্ডল নামে এক মহিলা সিপিএম কর্মীকে আটক করেছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডল অবশ্য বলেন, “এই ঘটনায় আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়। মিথ্যা অভিযোগে আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।” বসুধায় বন্ধ সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। |