বন্ধের দিন বলে হাজিরা খাতায় ঘন্টা দু’য়েক আগেই আগাম সই করে স্কুল বন্ধ করে চলে গিয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তৃণমূলের নেতৃত্বে বাসিন্দারা কার্যত বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এলেন তাঁদের। স্কুল খুলল নির্দিষ্ট সময়ের ঘণ্টা তিনেক পরে। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের ন’ডিহা আনন্দপুরের বিদ্যাসাগর শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ৭টা নাগাদ ঘণ্টা বাজলেই পড়ুয়ারা চলে আসে স্কুলে। পঠন-পাঠন শেষে মিড-ডে মিল খেয়ে সকাল ১১টা নাগাদ আবার তারা বাড়ি ফিরে যায়। মঙ্গলবার নির্দিষ্ট সময়ে ঘন্টা বাজেনি। স্কুলে আসেনি পড়ুয়ারা। সকাল ৯টা নাগাদ প্রধান শিক্ষক ও দুই শিক্ষিকা হাজিরা খাতায় সই করে চলে যান। তবে স্কুল ছাড়ার সময় লিখে যান, সকাল ১১টা। এ দিকে খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার বাসিন্দারা তৃণমূলের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়ি যান। তাঁদের নিয়ে আসা হয় স্কুলে। সকাল ১০টা নাগাদ ফের স্কুল খোলে। ঘণ্টা বাজতেই চলে আসে পড়ুয়ারাও। শুরু হয় পঠন-পাঠনও। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) আয়েষা রানি এ বলেন, “ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে পঠন-পাঠন শুরু হওয়া নিয়ে সামান্য সমস্যা হয়েছিল। তবে বেলার দিকে তা মিটে গিয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা তথা অভিভাবক রাজু বাউরি, নীলু বাউরিরা জানান, কাজের জন্য তাঁদের অনেকেই সকালে বাইরে যেতে হয়। বাড়ির ছেলে-মেয়েদের বলা আছে, স্কুলের ঘণ্টা বাজলেই তারা যেন স্কুলে চলে যায়। ওই স্কুলের পড়ুয়া সুমনা বাউরি, বর্ষা বাউরি, রচনা বাউরিরা বলে, “মঙ্গলবার সকালে ঘণ্টা না বাজায় আমরা স্কুলে যাইনি। পরে অবশ্য বেলার দিকে স্কুল খোলে।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা সোমেশ সরকার জানান, এ দিন স্কুলে পঠন-পাঠন শুরু না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁরাও যান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়িতে। কেন স্কুল হল না, কেনই বা তাঁরা ঘণ্টা দু’য়েক আগে হাজিরা খাতায় আগাম সই করে বাড়ি চলে গিয়েছেন তাও জানতে চাওয়া হয়। তাঁর কথায়, “ওঁরা সরাসরি কোনও উত্তর দিতে পারেননি। তখন তাঁদের বলি, ফের স্কুল খুলতে হবে। ওঁরা রাজি হয়ে যান।”
রোজকার মতো কেন ঘণ্টা বাজানো হয়নি স্কুলে? প্রধান শিক্ষকের জবাব, “ভুলে গিয়েছি।” কিন্তু হঠাৎ এ দিনই কেন ভুল হল তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। আবার নির্ধারিত সময়ের দুু’ঘণ্টা আগে আগাম হাজিরা খাতায় সই করার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষিকা রিনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা আমাদের করা উচিত হয়নি।”
ব্লক তৃণমূল নেতা সুনীল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষকদের কাছ থেকে এই ধরনের অনিয়ম আশা করা যায় না।” |